আলোচনা- 'হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে কিছু কথা' by এয়ার কমোডর (অব.) মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম

অক্টোবর ঊষালগ্নে আমাদের হজ ফ্লাইটের প্রথম ফ্লাইট মাটি ছেড়ে আকাশে উড়ল। এর এক মাস পর ১০ নভেম্বর অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হলো হজ ফ্লাইট পরিচালনের প্রথম পর্যায়। বিমানের সর্বস্তরের কর্মচারীর চোখে তাই আনন্দাশ্রু। অসাধ্য সাধন করেছেন তাঁরা। টানা ৩২ দিনের নিরলস পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা বয়ে এনেছে সাফল্যের সংবাদ। পরম করুণাময়ের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। রেকর্ডসংখ্যক দেশবাসীকে হজ পালনে জেদ্দা পাঠিয়ে ইতিহাস গড়ল বিমান!
বাংলাদেশ থেকে এবার ৯৫ হাজার বাংলাদেশি হজে যাবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ৪৫ হাজার হজযাত্রী পরিবহনের। বাকি ৫০ হাজার হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৌদিয়াসহ ঢাকা থেকে চলাচলকারী ৯টি এয়ারলাইনসকে। সীমিত সামর্থ্যে এই বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী কিভাবে পরিবহন করবে তা নিয়ে শুরু থেকেই তৎপর ছিল বিমান। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন এই ভেবে, কী জানি কী হয়! বিমান ব্যবস্থাপনা অবশ্য শঙ্কিত ছিল না। তবে উদ্বোধনী ফ্লাইট নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়েছিল। অবশেষে অতি উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটে। বিমান ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে এ কথা স্মরণ করছে।
হজ কার্যক্রমের প্রথম পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মোট ৪৪ হাজার ৫৯২ হজযাত্রীকে জেদ্দা পেঁৗছে দিয়েছে। বিমান এবং বাংলাদেশের জন্য এটি একটি রেকর্ড। এক মৌসুমে এত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আর কখনো হজ পালনে সৌদি আরব যাননি। বিমানের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৪৫ হাজার জন। অর্থাৎ বিমান পরিবহন করেছে নির্দিষ্ট সংখ্যা থেকে মাত্র ৪০৮ জন কম। এটা অবশ্য ফ্লাইট অথবা সিট সংকটের জন্য নয়, শেষের দিকে যাত্রী সংকট ছিল। এ কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে। টানা ৩২ দিনে গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৪০০ হজযাত্রী জেদ্দা গেছেন। এ ছাড়া আমাদের শিডিউল ফ্লাইটেও হজযাত্রীরা নিয়মিত জেদ্দা পেঁৗছেছেন। গোটা কার্যক্রমই ছিল অত্যন্ত সুবিন্যস্ত, সুশৃঙ্খল ও সুসমন্বিত। এ কার্যক্রমে পরিচালিত হয়েছে মোট ১২৮টি ফ্লাইট। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর সুষ্ঠু তদারকির ব্যবস্থা ছিল_পরিকল্পনা থেকে বিপণন_বাদ যায়নি কোনো ছোটখাটো বিষয়ও।
বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের এই ৩২ দিন কিন্তু ঘটনাবিহীন ছিল না। যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। নজিরবিহীন ও অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা আমাদের চলার পথকে সমস্যাসংকুল করে তুলেছিল বৈকি। আল্লাহপাকের দরবারে লাখো শুকরিয়া। অযাচিত ও অপ্রীতিকর এ সমস্যার ত্বরিত সমাধান হয়ে যায়।
বস্তুত এ সংকটেও বিমান কখনো গ্রাউন্ডেড হয়নি। সমস্যা ক্রমেই যখন সংকটে রূপ নেয়, তখনো কিছু ফ্লাইটের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে, কিছু ফ্লাইট বাতিল করে বিশেষ ব্যবস্থায় বিমানকে সচল রাখা হয়। এ ব্যবস্থায় সময়িকভাবে কিছু যাত্রীর ভোগান্তি হলেও ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে সব যাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীর সহযোগিতায় সংকট কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয় বিমান।
গত এক মাস আমাদের জন্য ঘটনাবহুল ছিল। অতিশয় তাৎপর্যপূর্ণ আরো এক ঘটনা ঘটে যায় এ সময়ে আমাদের বিমানে। এই প্রথমবারের মতো আমরা দীর্ঘ ৩৯ বছর অপেক্ষার পর আমাদের প্রোডাক্ট সরাসরি গ্রাহকের টেবিলে পেঁৗছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের রিজার্ভেশন সিস্টেমকে অনলাইনে নিয়ে গেছি 'ইন্টারনেট বুর্কিং ইঞ্জিন (আইবিই)' চালু করার মাধ্যমে। ১ নভেম্বর ২০১০ থেকে এই ইন্টারনেট বুকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে বিমানে। একটি ওয়েবসাইটের সাহায্যে যাত্রীরা এখন তাঁদের পছন্দের ফ্লাইটে টিকিট বুকিং দিয়ে সিট কনফার্ম করতে পারবেন। একই সঙ্গে ফ্লাইটে তাঁর জন্য পরিবেশনযোগ্য খাবারের অর্ডারও দিতে পারবেন। আমাদের সম্মানিত যাত্রীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পেরে আমরাও যারপরনাই আনন্দিত। প্রাথমিকভাবে 'সফট লাঞ্চ' আকারে এটি প্রবর্তিত হয়েছে।
আগামী ৪ জানুয়ারি (বিমানের জন্মদিন) থেকে এটি পরিপূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আর তখন থেকে টিকিটের মূল্য অনলাইনে পরিশোধ করা যাবে। তবে আপাতত মূল্য পরিশোধের জন্য কোনো বিমান কাউন্টারে যেতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই যাত্রী পাঁচ শতাংশ কমিশন পাবেন। ৪ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে বুকিং দেওয়া যাত্রীরা নিজস্ব ক্রেডিট কার্ডে মূল্য পরিশোধ করবেন। ইন্টারনেট প্রযুক্তি জীবনকে কতই না সহজ করে দিচ্ছে প্রতিদিন। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে ক্রমেই আমাদের জীবন ও কর্মপদ্ধতি। ইন্টারনেট বুকিং চালু করতে আমাদের ওয়েবসাইটকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। আমাদের সব যাত্রী, শুভানুধ্যায়ীকে আমন্ত্রণ জানাই এটি দেখার জন্য। ঠিকানা িি.িনরসধহ-ধরৎষরহবং.পড়স.
আমাদের বিমানবহরকে যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর আমরা। শিডিউল রেগুলারিটি নিশ্চিত করা এবং যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা বাড়াতে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ লিজ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের জ্বালানি সাশ্রয়ী এ দুটি জাহাজ আগামী মাসেই আমাদের বহরে যোগ দেবে। অন্য একটি বোয়িং ৭৭৭ সংগ্রহের জন্য জোর চেষ্টা চলছে। তিনটি নতুন প্রজন্মের বোয়িং ৭৭৭ বহরে যুক্ত হলে আমাদের সিট ক্যাপাসিটি বাড়বে, যাত্রীর অভিযোগ হ্রাস পাবে, সর্বোপরি দূরপাল্লার যাত্রায় তা বিমানের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে নিঃসন্দেহে।
হজ কার্যক্রমের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে ২১ নভেম্বর থেকে। নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ আগামী ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর আমরা। নিয়মিত শিডিউল ফ্লাইটের বাইরে মোট ৯৩টি নিবেদিত ফ্লাইটে হাজিরা দেশে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। এ মিশন সফল করে তুলতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব মহলের আন্তরিক সহযোগিতায় হজ অপারেশন ২০১০ সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠবে_এ আমাদের দৃঢ় প্রতীতি।
=================================
শিল্প-অর্থনীতি 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেতন-কাঠামো' by খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ  স্মরণ- 'মীর শওকত আলী বীর উত্তম : একজন বীরের প্রতিকৃতি' by ড. আশকার ইবনে শাইখ  আন্তর্জাতিক- 'মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ' by আহসান হাবীব  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিচিত্র সংকটের আবর্তে একটি বাড়ি' by এবিএম মূসা  ইতিহাস- 'হাজংমাতা শহীদ রাশিমনির স্মৃতিসৌধে' by দীপংকর চন্দ  গল্প- 'ঈর্ষার রং ও রূপ' by আতাউর রহমান  ডিজিটাল-প্রযুক্তি কি মানবতাবিরোধী প্রবণতা তৈরি করে? by মোহীত উল আলম  খবর- এক দশক পর ছেলের সঙ্গে দেখা হলো সু চির  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'ট্রানজিটঃ অর্থের বাইরে বাইরে প্রাপ্তিযোগও ভাবতে হবে' by কে এ এস মুরশিদ  খবর- আমনের বাম্পার ফলনেও বাড়ছে চালের দাম by ইফতেখার মাহমুদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি' by ফজলুল বারী  আলোচনা- 'খাদ্যনিরাপত্তা ও পশুসম্পদ' by ড. মো. সিদ আলোচনা- 'আমি বাস্তুহারা'_এ কথার মানে কী?' by এ এন রাশেদা  গল্পালোচনা- 'বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র' by মোস্তফা কামাল  রাজনৈতিক আলোচনা- 'যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধা সনদ' by হারুন হাবীব  খবর ও ফিচার- কয়েন-কাহিনী  প্রকৃতি- 'বৈরিতায় বিপন্ন বাঘ' by বিপ্লব রহমান  প্রকৃতি- 'সুন্দরবন ঘেঁষে রেললাইন!' by পার্থ সারথি দাস  খবর- কোরীয় সীমান্তে ব্যাপক গোলাবিনিময়ে নিহত ২ 


কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ এয়ার কমোডর (অব.) মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.