বিমান চালনা নিয়ে বিভ্রান্ত বিজ্ঞানীরা

আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে সৃষ্ট মেঘ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া কীভাবে রোধ করা যাবে এবং বিমান চলাচলের জন্য আকাশপথ কখন নিরাপদ হবে তা নির্ধারণ করা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতজনিত কারণে ইউরোপের আকাশজুড়ে ছাইমেঘ ছড়িয়ে পড়ায় কয়েক দিন ধরে এ অঞ্চলে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন শিল্পের (আইএটিএ) প্রধান গিওভানি বিসিগনানি এই ঘটনাকে ‘ইউরোপীয় বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আমরা বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্তের দিকে নজর দিতে পারিনি।’
এদিকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং এয়ার ফ্রান্স বলেছে, তারা পরীক্ষামূলকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং এর ফলে তারা কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়নি।
আইসল্যান্ডের এয়াকিউয়াতলুয়োকুটল আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে সৃষ্ট মেঘ ইউরোপের আকাশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপীয় সরকারগুলো নিরাপত্তার অজুহাতে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সরকারগুলোর এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে এয়ারলাইনস বিশেষজ্ঞ ও আকাশ গবেষকদের মধ্যে বড় ধরনের মতভেদ তৈরি হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সোজা জানিয়ে দিয়েছে, নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো সমঝোতা নয়।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, এই মেঘ বিমানের টারবোফ্যান ইঞ্জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ১৯৮২ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমান ইন্দোনেশিয়ার আকাশে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল বলে তাঁরা যুক্তি দেন। ওই বিমানটি অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। মেঘের কারণে ৩৭ হাজার ফুট ওপরে থাকা অবস্থায় ওই বিমানটির ইঞ্জিন ধীর হয়ে গিয়েছিল। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে সৃষ্ট মেঘে এমন সব উপাদান রয়েছে, যা বিমানের ইঞ্জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তবে বিসিগনানি ইউরোপীয় সরকারগুলোর সমালোচনা করে বলেছেন, ব্যাপকভাবে বিমান চলাচলে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ সঠিক নয়।
অন্যদিকে ফ্রাংকফুর্ট গোয়েথি ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাটমোসফেয়ারিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক জোয়াসিম কুর্টাস এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সাফাই করতে গিয়ে বলেছেন, এ ঘটনা এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষকে মেঘের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিমানকে রক্ষা করার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে উদ্যোগী করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রয়েল অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট স্টুয়ার্ট জন বলেন, ‘তুমি হয়তো ভাবতে পারো ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় মেঘ আছে। সুতরাং সেই উচ্চতায় বিমান না চালিয়ে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় বিমান চালালে তা নিরাপদ হবে। কিন্তু এমন হতে পারে যে হঠাৎ বাতাস পড়ে গেল, আর তখন ওই মেঘ ২০ হাজার ফুট উচ্চতায়ও এসে যাবে।’
আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা এই পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এ বিষয়ে সর্বজন স্বীকৃত কোনো নিরাপদ পন্থা নেই।

No comments

Powered by Blogger.