আইপিএলের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন

লোলিত মোদির পক্ষ এবং বিপক্ষ দলের মধ্যকার ফাটল আরও স্পষ্ট হলো গতকাল। ২৬ এপ্রিলে ডাকা আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সভায় আসলে নির্ধারিত হবে লোলিত মোদির ভাগ্য, সেই সভাকেই মোদি বলছেন ‘অবৈধ’। পরশু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধানকে পাঠানো ই-মেইলে মোদি জানিয়েছেন, সোমবারের বৈঠকে তিনি থাকছেন না।
‘পয়লা মের পরিবর্তে সভা এগিয়ে ২৬ এপ্রিল নিয়ে আসতে চাইলে আমার অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। না হলে এই সভা অনানুষ্ঠানিক (আনঅফিসিয়াল) বলেই গণ্য হবে। অবৈধ কোনো সভায় আমি যোগ দেব না’—মনোহর আর অরুণ জেটলিকে পাঠানো ই-মেইলে লিখেছেন মোদি। এটি তো বটেই, এই কদিনে চালাচালি হওয়া সব ই-মেইলও ফাঁস হয়ে গেছে মিডিয়ায়।
২৬ এপ্রিলের বৈঠককে ‘অবৈধ’ বলার পেছনে মোদির যুক্তি, এই বৈঠক ডেকেছেন বিসিসিআইয়ের সচিব এস শ্রীনিবাসন। আইপিএলের প্রধান হিসেবে এই বৈঠক ডাকার এখতিয়ার শুধু তাঁর আছে জানিয়ে মোদি লিখেছেন, ‘মাননীয় সচিব, যিনি নিজেও একটি দলের মালিক, এই বৈঠক ডাকতে পারেন না।’ এত অল্প সময়ে ওই সভার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করাও সম্ভব নয় বলে লিখেছেন মোদি। বোঝাই যাচ্ছে সহজে হাল ছাড়বেন না। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তিনি।
এ অবস্থায় বৈঠক হলে আইপিএলের সর্বোচ্চ পদ থেকে মোদির ছাঁটাই নিশ্চিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আত্মরক্ষার পথ খুঁজতে মোদি তাই কালক্ষেপণের কৌশল নিয়েছেন। যদিও মনোহর জোর দিয়ে বলছেন ২৬ তারিখ বৈঠক হবেই। ১৪ সদস্যের গভর্নিং কমিটির অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন তাঁদের সঙ্গে আছে জানিয়ে ভারতের স্বনামধন্য এই আইনজীবী বলেছেন, ‘সভা যথাসময়েই হবে। কোনো সদস্য যদি আসতে না চান, সেটা তাঁর মর্জি, আমাদের করার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের যত দ্রুত সম্ভব একটা পদক্ষেপ নিতেই হবে।’
মোদি যে যুক্তিতে এই সভাকে অবৈধ বলেছেন, সেটিও নাকচ করে দিচ্ছেন মনোহর, ‘তিনি (শ্রীনিবাসন) এই বৈঠক দলের মালিক হিসেবে ডাকেননি। বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সচিবই সব ধরনের বৈঠকের আহ্বায়ক।’
আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সদর দপ্তরসহ মূল সহযোগী তিনটি প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়েছে ভারতের আয়কর বিভাগ। টেলিভিশন সম্প্রচারের দায়িত্ব পাওয়া মাল্টি-স্ক্রিন মিডিয়া, বিপণন সংস্থা ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপ আর প্রধান ব্যবস্থাপক ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের দপ্তরে কাগজপত্র খতিয়ে দেখে কর কর্মকর্তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন, কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না।
তিন বছরের মাথায় ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ ৪.১ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছা এই লাভজনক টুর্নামেন্টের সঙ্গে নামে-বেনামে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং বলিউড তারকারা যুক্ত। এমনও অভিযোগ উঠেছে, প্রচুর কালো টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এই টুর্নামেন্টে। কোণঠাসা মোদি সবগুলো দলের মালিকানার সঙ্গে কারা কারা আছেন, সেটি জানিয়ে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত সিনিয়র একজন বলেছেন, আইপিএলের ভবিষ্যৎ নিয়েই আশঙ্কায় আছেন তাঁরা, ‘কর তদন্ত থেকে যদি আরও জল ঘোলা হয়, অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। আমি মোটেও উদ্বিগ্ন নই—এমনটা বলতে পারলে খুশিই হতাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমি খুবই, খুবই উদ্বিগ্ন।’

No comments

Powered by Blogger.