রাজাপক্ষেকে সপরিবারে হত্যার পরিকল্পনা করছেন ফনসেকা: সরকারের অভিযোগ

শ্রীলঙ্কার সরকার অভিযোগ করেছে, পরাজিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেনারেল শরত্ ফনসেকা প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করছেন। সরকারের মিডিয়া সেন্টার ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটির পরিচালক লক্ষ্মণ হুলুগালে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, জেনারেল ফনসেকা হোটেলে অবসরপ্রাপ্ত ৭০ জন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার নীলনকশা তৈরি করেছেন।
লক্ষ্মণ দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কলম্বোর গলে সড়কে বা লেক হাউস জংশনে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তিনি আরও দাবি করেন, বুধবার ফনসেকার সঙ্গে হত্যার নীলনকশায় জড়িত সন্দেহে রাজধানীর হোটেল থেকে সেনাবাহিনীর পলাতক নয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ঘটনাসহ নির্বাচনের পর জেনারেল ফনসেকা তাঁর জীবন বিপদাপন্ন দাবি করে ভারতের কাছে নিরাপত্তা চাইলে তাঁর কলম্বোর হোটেলের বাইরে অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।
বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র উদয় নানায়াক্কারা বলেন, ফনসেকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বুলেটপ্রুফ গাড়িসহ চারটি গাড়ি ও ২০ জন সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মন্ত্রী জি এম পিয়েরিস বলেন, জেনারেল ফনসেকা জনগণের রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। কলম্বোয় বিদেশি মিশনগুলোতে ছুটে গিয়ে তাঁর জীবন হুমকিতে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এসব কাজ করে তিনি গণতান্ত্রিক আচরণের সব ধরনের সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে পিয়েরিস বলেন, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে ফনসেকা বিদেশে শ্রীলঙ্কার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। শ্রীলঙ্কায় এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, কারণ মানুষ সত্য জানে।
অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় চাইতে পারেন ফনসেকা
শরত্ ফনসেকা গত বুধবার জানিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা ত্যাগের কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। তবে এখন তিনি দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। চাইছেন অস্ট্রেলিয়ায় সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে। গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র দ্য অস্ট্রেলিয়ান কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে ফনসেকা তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান। প্রতিবেদনটি গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত হয়।
কলম্বোর বাসভবনে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ফনসেকা বলেন, সাময়িক রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কলম্বোয় মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
তবে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন স্মিথ গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে ফনসেকা এখনো কলম্বোয় অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসকে কোনো অনুরোধ করেননি। আমার পরামর্শ হচ্ছে, জেনারেল ফনসেকার এমন অনুরোধ করা ঠিক হবে না, যা আমরা গ্রহণ করতে পারব না। আমি মনে করি, জেনারেল ফনসেকাকে দুটি জিনিস দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক. তাঁকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া উচিত। দুই. তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া উচিত।’
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ
নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো গতকাল শুক্রবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হংকংভিত্তিক এশিয়ান মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভোট গণনায় অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজাপক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নের সম্মুখীন।
এদিকে দ্য অস্ট্রেলিয়ানকে ফনসেকা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কম্পিউটারের মাধ্যমে ভোট গণনায় কারচুপি করেছে। আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে যাচ্ছি আমরা, যাতে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে আবার ভোট গণনা করা হয়।’ এএফপি, এশিয়ান ট্রিবিউন, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.