দেশে স্থানীয় টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী -আন্তর্জাতিক বাজারে প্রধান মুদ্রাগুলোর বিনিময় হারে ওঠানামার প্রবণতা

দেশের আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত সপ্তাহের বেশির ভাগ সময়ই প্রতি মার্কিন ডলার ৬৯ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৬৯ টাকা ১৭ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকে মার্কিন ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার শক্তিশালী হয়ে ওঠে; যে কারণে সপ্তাহের শেষ লেনদেন দিবস বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার ৬৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৬৯ টাকা ২১ পয়সায় বিনিময় হতে দেখা যায়।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে উঠে এসে গত সপ্তাহের শুরুতে (২৪ থেকে ২৯ জানুয়ারি) প্রতি ইউরো ১ দশমিক ৪১৩০ ডলারে লেনদেন হয়, কিন্তু তা অব্যাহত থাকেনি। অর্থাত্ পরবর্তী সময়ে ইউরো পুনরায় শক্তি হারাতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বাড়ানোর আশঙ্কায় একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার প্রতি ইউরোর বিনিময় হার ১ দশমিক ৩৯৩০ ডলারে নেমে আসে; যা মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোর গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন বিনিময় হার।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এবং গ্রিসকে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ডলারের বিপরীতে ইউরো কিছুটা শক্তি ফিরে পায়।
স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) কর্তৃক জাপানের দীর্ঘমেয়াদি সার্বভৌম রেটিং ‘ডাবল এ’-র স্থিতাবস্থা থেকে অবনমনের আশঙ্কায় মঙ্গলবার ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দরপতন ঘটতে দেখা যায়।
যুক্তরাজ্যে সপ্তাহের শুরুতে প্রতি ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং ১ দশমিক ৬১৯২ ডলারে বিনিময় হয়। কিন্তু দেশটিতে খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে—এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় সপ্তাহের মাঝামাঝি প্রতি পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দর ১ দশমিক ৬১৩২ ডলারে নেমে আসে।
যা হোক, সপ্তাহ শেষে প্রতি ইউরো ১ দশমিক ৩৯৫৮ ডলারে, প্রতি পাউন্ড স্টার্লিং ১ দশমিক ৬১১৮ ডলারে এবং প্রতি ডলার ৯০ দশমিক ১৯ ইয়েনে লেনদেন হয়।
সপ্তাহের শুরুতে বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলোতে হঠাত্ দরপতনের কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারের নিচে নেমে যায়; যা গত চার সপ্তাহের মধ্যে তেলের সর্বনিম্ন দর। চীনের সম্ভাব্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিয়ে চলমান বাজার অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাংকিং ব্যবসাকে আরও নিয়ন্ত্রিত করার প্রস্তাব দেওয়ায় এবং দেশটির গৃহায়ণ খাতের হতাশাজনক তথ্য প্রকাশিত হয়। যে কারণে মার্কিন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে যেমন শঙ্কার সৃষ্টি হয়, তেমনি বিশ্বের এই বৃহত্তম তেল ব্যবহারকারী দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যায়। এসব কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম সপ্তাহজুড়েই ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারের নিচে অবস্থান করে।
গত সপ্তাহজুড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি এক হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি ওঠানামা করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সে দেশের অর্থনীতি নিয়ে সতর্কতামূলক আশাবাদ ব্যক্ত করায় স্বর্ণের দাম পড়ে যায়। এতে সপ্তাহ শেষে প্রতি আউন্স স্বর্ণ এক হাজার ৮৪ ডলারের নিচে নেমে আসে।
সপ্তাহ শেষে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নাইমেক্স সূচক ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ০৩ ডলার, স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ১০৮৩ দশমিক ৬০ ডলারে, প্রতি আউন্স রৌপ্য ১৬ দশমিক ২৩ ডলারে ও প্রতি টন কপার ৭০৪১ দশমিক ৫০ ডলারে কেনাবেচা হয়েছে।
দেশে আন্তব্যাংক কলমানির বাজারে (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পর থেকে স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়া কর্জ) গত সপ্তাহে সুদের হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে গত সপ্তাহে ৯১ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের ৫৫০ কোটি টাকার সরকারি ট্রেজারি বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯১ দিন মেয়াদি বিলের অন্তর্নিহিত সুদের হার ২ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশে এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের অন্তর্নিহিত সুদের হার ১ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশে নির্ধারিত হয়।
অন্যদিকে ২০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের নিলামে কোনো দরপত্র গৃহীত হয়নি। সূত্র: সিটিব্যাংক এনএ, বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.