বিদেশি বিনিয়োগে সুখবর নেই প্রতিবন্ধকতাগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে দিচ্ছে না

খবরটা মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারত। বাংলাদেশে বার্ষিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগপ্রবাহ প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে যে বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ১০৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আর ২০০৭ সালে এসেছিল ৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের। কিন্তু এই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ কোন কোন খাতে গেছে, সেটিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো হালনাগাদ পরিস্থিতি, যা নিতান্তই হতাশাজনক। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের (২০০৯) প্রথম আট মাসে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনার দাবি রাখে।
২০০৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার প্রধান কারণ হলো টেলিযোগাযোগ ও আর্থিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এ প্রবণতা কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। এর মানে হলো, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্পোত্পাদন নয়, বরং বেচাকেনাভিত্তিক সেবা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, যা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট সহায়ক নয়। তদুপরি ২০০৮ সাল ছিল তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক বছর, যা বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অনুকূল বলে বিবেচিত হয়নি। নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর প্রশাসনিক পদক্ষেপ ব্যবসার আস্থা কমিয়ে দিয়েছিল।
অন্যদিকে ২০০৯ সালের শুরুতেই একটি নির্বাচিত সরকার দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছে। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ব্যবসা-বিনিয়োগের জন্য আস্থার ভাব ফিরে আসবে—এমনটিই ছিল যৌক্তিক প্রত্যাশা। কিন্তু নয় মাস হতে চলল, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব আসেনি। কমে যাচ্ছে প্রস্তাবের নিবন্ধনও। বিদেশি বিনিয়োগের শ্লথ ভাবের সঙ্গে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবণতার চিত্রটি মিলিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকগুলোয় বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ জমে থাকা স্থানীয় বিনিয়োগে গতিময়তা না আসার একটি নির্দেশক। আর স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে তাঁরা নতুন ও বড় শিল্পে বিনিয়োগ করছেন না। দেশি বিনিয়োগকারীরা যেখানে এই গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগছেন, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবেন কিসের প্রত্যাশায়? এর ওপর রয়েছে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশে বিনিয়োগ করতে এসে নানা হয়রানি ও জটিলতার মুখে পড়েন।
চলতি মাসেই বিশ্বব্যাংক-আইএফসির সহজে ব্যবসা পরিচালনাবিষয়ক প্রতিবেদন এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাবিষয়ক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা যেতে পারে। সহজে ব্যবসা করা বাংলাদেশে বড় কঠিন এটি যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি এও সত্য, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার বেশ কিছু সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে সুযোগগুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে প্রায়শই। সরকার ও নীতিনির্ধারকেরা যত দ্রুত এ বিষয়ে মনোযোগ দেবেন, ততই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.