জি-২০ সম্মেলন জলবায়ু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই, হতাশ পরিবেশবাদীরা

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক জোট জি-২০-র দুই দিনব্যাপী সম্মেলন গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই সম্মেলনের সফলতার ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁরা আশা করেছিলেন, সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় একটা বড়সড় আন্তর্জাতিক তহবিলের ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু ওই তহবিলের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণাই দেননি বিশ্বনেতারা। ফলে আগামী ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনের সফলতার ব্যাপারে সংশয় তৈরি হলো। ডেনমার্কের ওই সম্মেলনে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার কমাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে উন্নত বিশ্বের আর্থিক সুবিধা দেওয়াসংক্রান্ত একটা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও সম্মেলনে জলবায়ু তহবিলের বিষয়ে কোনো ঘোষণা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে জলবায়ু-চুক্তি সম্পাদন নিয়ে আসলে কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও ঠিক হবে না। সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কোপেনহেগেন সম্মেলনের সফলতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ কথা বলেন।
কোপেনহেগেন সম্মেলনে কিয়েটো চুক্তি-পরবর্তী জলবায়ু চুক্তি করা সম্ভব কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মনমোহন বলেন, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’ উন্নত দেশগুলোর বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছা সম্ভব।
জি-২০ সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোপেনহেগেনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না।’ তবে এ বিবৃতিতে চুক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
তবে এ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন জি-২০ নেতারা। তাঁরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতার কারণে বারবার অর্থনৈতিক মহামন্দার সৃষ্টি হচ্ছে। সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, গৃহীত কৌশলে কাজ হচ্ছে।
তবে অনেকে মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা প্রথমবারের বড় ধরনের একটি সম্মেলন আয়োজনে সফল হলেন। ওবামা বলেছেন, আমরা অতীতের মতো অর্থনীতির ফুলেফেপে ওঠা এবং হঠাত্ করে শোচনীয়পতন—এমন দশা চলতে দিতে পারি না। এরকম সংকট আপনা-আপনি কেটে যাবে বলে হাত গুটিয়েও বসে থাকতে পারি না। সে কারণেই আমাদের নতুন রূপরেখা একে অন্যের নীতিকে আমলেনেবে, সংস্কার বিষয়েঐকমত্য গড়ে তুলবে এবং প্রবৃদ্ধির জন্যসহায়ক বিশ্ব চাহিদা নিশ্চিত করবে।
আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠন ‘আভাজ’-এর কর্মকর্তা বেন উইকলার বলেন, ‘আমরা নেতার সংকটে ভুগছি। জি-২০-র নেতারা জলবায়ু তহবিলের ব্যাপারে ঠিকই সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, কিন্তু এরপর এ ব্যাপারে তাঁরা আর অগ্রসর হননি।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের অন্যতম উপদেষ্টা ম্যাক্স লসন বলেন, ‘কোপেনহেগেন সম্মেলনের বাকি মাত্র ৭২ দিন। কিন্তু ধনী দেশগুলো জলবায়ু চুক্তিতে পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তহবিলের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণায় ব্যর্থ হয়েছে।’
জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গত শুক্রবারও পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। এতে কয়েক হাজার লোক অংশ নেয়। তবে আগের দিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.