জনগণ আমাদের সঙ্গে, শিগগিরই আমরা ক্ষমতায় যাব -বিশেষ সাক্ষাত্কার by বাবুরাম ভট্টরাই

নেপালের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক বাবুরাম ভট্টরাই প্রথম গণতান্ত্রিক নেপাল সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে নেপালের গুর্খা জেলার বেলবাস কপলং গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি ভারতের চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য কলায় সম্মান ও দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে অদ্যাবধি নেপালি মাওবাদীদের প্রধান তাত্ত্বিক হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ২০০৬ সালে নেপাল সরকার ও মাওবাদীদের মধ্যে যে শান্তিচুক্তি হয়, তাতে বাবুরাম ভট্টরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালের এপ্রিলে নেপালে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাবুরাম সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। সম্প্রতি নেপালে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাত্কারটি গ্রহণ করা হয়।
* সাক্ষাত্কার গ্রহণ: ইফতেখার মাহমুদ

প্রথম আলো * সশস্ত্র সংগ্রামের সমাপ্তি টেনে, নির্বাচনে জিতে আপনাদের দল ক্ষমতায় গেল। কিন্তু আট মাসের মাথায় ক্ষমতা ছাড়ল। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
বাবুরাম ভট্টরাই * দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের মতো নেপালে সরাসরি উপনিবেশ নেই। কিন্তু ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়ে গেছে। দেশের মধ্যেও বড় বড় ভূমির মালিকেরা টিকে আছে। বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। বর্ণব্যবস্থা, জাতিগত নিপীড়ন, মুসলিমদের প্রতি অন্যায় আচরণ নেপালে রয়ে গেছে। নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করতে চেয়েছি। সশস্ত্র আন্দোলন ছিল তারই অংশ। রাজতন্ত্রের পতনের মাধ্যমে আমরা সশস্ত্র আন্দোলনের প্রাথমিক সফলতা পেয়েছি।
সামনের দিনগুলোতে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করব। নেপালের পরিস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এর পরবর্তী ধাপ হিসেবে আমরা সত্যিকার অর্থে শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ, তথা মানুষের আসল সত্তাকে মুক্ত করার সংগ্রামের জন্য কাজ করব।
প্রথম আলো * এতে করে নেপালের গণতন্ত্রায়ন কি এগিয়ে চলছে?
বাবুরাম ভট্টরাই * প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল দুটি পক্ষ থাকে। আমরা সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলোকে প্রাথমিকভাবে পরাজিত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু তারা আবারও সংগঠিত হয়েছে। তবে বেশি দিন তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আমরা জনগণকে সংগঠিত করে আবারও আন্দোলন শুরু করেছি। সামনের দিনে মাওবাদীরাই আবার ক্ষমতায় যাবে। কারণ, জনগণের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। তারা আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
প্রথম আলো * আপনারা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন কেন?
বাবুরাম ভট্টরাই * আমরা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের কল্যাণে বেশ কিছু কাজ শুরু করেছিলাম। এতে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও তত্পরতা চালিয়েছে। দুই হাতে টাকা ছড়িয়েছে। সামরিক বাহিনী ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করেছে। আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। এই চক্র চেয়েছে, সামরিক বাহিনীকে পেছনে রেখে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থে সরকারকে ব্যবহার করবে। বাংলাদেশে আমরা এ ধরনের সরকার পরিচালিত হতে দেখেছি। তারা নেপালেও সামরিক বাহিনীর একটি পুতুল সরকার চেয়েছিল। আমরা তা হতে চাইনি বলেই ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া সঠিক মনে করেছি।
প্রথম আলো * অনেকে বলছেন, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। আপনারা অস্ত্র ছেড়ে শান্তিপ্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছেন। শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় সেনাবাহিনীতে আপনাদের পিপলস আর্মির একীভূত হওয়ার শর্ত থাকলেও ১৮ মাস গত হয়েছে। এখন আপনাদের সামনে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কী?
বাবুরাম ভট্টরাই * আমরা দেশপ্রেমিক শক্তি ও জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। তাদের আকাঙ্ক্ষার শক্তি নিয়ে আমরা আবারও ক্ষমতায় যাব। আমরা ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া নেপালে সত্যিকার অর্থে শান্তি আসবে না। যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আমাদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছে, তারাই এত দিন নেপালের ক্ষমতায় ছিল। জনগণ তাদের কাছ থেকে শোষণ ও বঞ্চনা ছাড়া আর কিছু পায়নি।
প্রথম আলো * নেপালের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কীভাবে এককভাবে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাখবে। যখন আপনাদের দুই দিকে দুটি বৃহত্ রাষ্ট্র চীন ও ভারত।
বাবুরাম ভট্টরাই * আমরা আপাতত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলছি না। আমাদের দেশে এখনো আধাসামন্ততান্ত্রিক উপাদান রয়ে গেছে। কৃষিব্যবস্থা এখনো বাণিজ্যিক হয়নি। শিল্পপ্রতিষ্ঠান তেমন একটা গড়ে ওঠেনি। আমরা নেপালের অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তিক ব্যবস্থায় নিয়ে যেতে চাই। বৈপ্লবিক সংগ্রাম ও পরিবর্তন ছাড়া তা অর্জন করা সম্ভব নয়।
আমাদের অর্থনীতি এখনো ভারত ও চীনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আমরা এই দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তিতে নেপালের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তাদের সঙ্গে সুস্থ কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখতে চাই। তাই বলে তাদের কোনো অযাচিত হস্তক্ষেপ আমরা মানব না। ভারত ও চীন যদি নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, তাহলে নেপালের ক্ষতি হবে, এমন কিছু তারা করবে না। নেপাল বেশির ভাগ ভোগ্য পণ্য চীন ও ভারত থেকে আমদানি করে। নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়লে তা সব দেশের জন্য ভালো। একটি গণতান্ত্রিক দেশে তাদের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। সবার সহযোগিতা নিলেও আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে একটি অত্মনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি গড়ে তোলা।
প্রথম আলো * শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ সব সময় প্রতিবেশী ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়। স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অসুবিধা করে।
বাবুরাম ভট্টরাই * আমি এ ধারণার সঙ্গে একমত নই। এটা ঠিক যে অনেক বিদেশি শক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নেপালে নানা ধরনের তত্পরতা চালাচ্ছে। যারা অস্ত্র-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, তাদের জন্য অস্থিতিশীল নেপাল হয়তো সুবিধাজনক। কিন্তু বিদোশ রাষ্ট্রগুলোকে এটা বুঝতে হবে, অস্থিতিশীল নেপাল সবার জন্যই ক্ষতিকারক। স্থিতিশীল নেপাল ভারতসহ অন্য দেশের সাধারণ জনগণের জন্য ব্যবসার ভালো সুযোগ এনে দেবে। নেপালে দারিদ্র্য ও বৈষম্য থাকলে কখনোই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না। ফলে বিদেশি শক্তির উচিত নেপালের শান্তি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করা।
ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ ও হিমালয় এলাকার সঙ্গে নেপালের উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। নেপাল অশান্ত হলে ভারতও শান্তিতে থাকতে পারবে না। তাদের দেশেও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। ফলে ভারতের উচিত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও স্থিতিশীল নেপালের জন্য কাজ করা।
প্রথম আলো * মাওবাদী সরকার পতনের পেছনে ভারতের ভূমিকার কথা শোনা যায়। ভারতের সমর্থন ছাড়া নেপালে কোনো সরকারই বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না, এমন কথা প্রচলিত।
বাবুরাম ভট্টরাই * বাস্তবিকভাবে এটা একভাবে সত্যি। নেপালের অর্থনীতি ও রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভারতের প্রভাব আছে। প্রচুর ভারতীয় বিনিয়োগও নেপালে রয়েছে। এটাকে অস্বীকার করে লাভ নেই। ফলে আমাদের এই বাস্তব অবস্থা মেনে নিয়ে সামনে এগোতে হচ্ছে। আমরা ভারতের সঙ্গে সরাসরি কোনো বিরোধিতার সম্পর্কে যেতে চাই না। একটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। এটা আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। তবে তাদেরও পুরোনো ঔপনিবেশিক আচরণ পাল্টাতে হবে।
প্রথম আলো * অনেকের অভিযোগ, আপনারা একটি সমান্তরাল সরকার তৈরির চেষ্টা করছেন।
বাবুরাম ভট্টরাই * আমরা সমান্তরাল সরকারে বিশ্বাসী নই। ভূস্বামীরা গরিব মানুষের জমি দখল করে রেখেছিল। আমরা গরিব মানুষের জমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে কাজ করছি। এটা কোনো অবৈধ কাজ নয়। আমরা আপাতত কোনো বৈপ্লবিক ভূমি সংস্কারে যাচ্ছি না; যদিও এটা আমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা। আপাতত দেশের প্রচলিত আইনে দরিদ্র মানুষের সরকারি খাসজমিতে যে অধিকার আছে, তা আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। লড়াই করছি।
এটাকে সমান্তরাল সরকার বলা ভুল। একটি সত্যিকার বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের কাজের ভুলত্রুটি তুলে ধরা। আমরা একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবেই এই চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রথম আলো * মাওবাদী ও নেপালি কংগ্রেসের মধ্যে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা, বর্তমান সরকারের পতন ও আপনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
বাবুরাম ভট্টরাই * আমরা নেপালের গণতান্ত্রিক সব শক্তি একত্র করার চেষ্টা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ জনগণকে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠাকি রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সংগঠিত করা। আমি, প্রচণ্ডসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের বিভিন্ন এলাকা সফরে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও ক্ষমতায় যেতে চাই। নেপালি কংগ্রেস যদি আমাদের সঙ্গে আসে, তাতে আপত্তি নেই। শিগগিরই আরও অনেক রাজনৈতিক দলকেই আমাদের সঙ্গে দেখতে পাবেন।
আমি বা যে-ই প্রধানমন্ত্রী হোক না কেন, নেপালে পরবর্তী সরকার মাওবাদীরাই গঠন করবে। কেননা জনগণের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা জনগণকে সঠিক পথটি দেখাচ্ছি। আমাদের দেখানো পথেই নেপালের প্রগতিশীল উন্নয়ন সম্ভব। অন্য শক্তিগুলোকেও আমরা সেই পথে নিয়ে আসতে চাই।
প্রথম আলো * ভোগবাদী সংস্কৃতি ও মানসিকতায় নেপাল ব্যাপকভাবে প্রবেশ করছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
বাবুরাম ভট্টরাই * বহুজাতিক সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি। বর্তমান বিশ্বায়িত বিশ্বে এই দুটি বিষয়কে আপনি আটকে রাখতে পারবেন না। প্রবেশ করবেই। নেপালে এত দিন ধরে সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি ছিল। যে আধুনিক প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটছে, তাকে আমরা দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারি।
বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জন্য প্রয়োজনীয়। দেশের তিন ভাগের দুই ভাগ কর্মসংস্থান ও জিডিপির তিন ভাগের এক ভাগ এখনো কৃষি থেকে আসছে। আমরা এই খাতটিকে আরও এগিয়ে নিতে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চাই।
নেপালের জাতীয় আয়ের ২০ ভাগ আসে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। আপনি যে বিমানবন্দর দিয়ে এসেছেন, সেখানে খেয়াল করলে দেখবেন, প্রচুর নেপালি বিদেশে পাড়ি দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। আমি জানি, বাংলাদেশে গেলেও একই চিত্র দেখা যাবে। প্রবাসীদের কষ্টে উপার্জিত অর্থ আমরা দেশের উন্নয়নকাজে লাগাতে চাই। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অবকাঠামো তৈরি করতে চাই, যাতে দেশে ফিরে তারা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারে।
প্রথম আলো * পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে নেপালের নারীরা শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
বাবুরাম ভট্টরাই * হ্যাঁ, এই কথা ঠিক। যৌন-বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্প একীভূতভাবে গড়ে ওঠার পেছনে দরিদ্রতা ও বেকারত্ব একটা প্রধান কারণ। কাঠমান্ডুর বাইরে আপনি যেখানেই যাবেন, দেখবেন প্রচুর কর্মহীন দরিদ্র মানুষ। শহরে এসে তারাই যৌন-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় গিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে আমরা ক্ষমতায় গেলে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
প্রথম আলো * নেপালের বর্তমান সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
বাবুরাম ভট্টরাই * এটি প্রতিক্রিয়াশীল ও বিদেশি শক্তি দ্বারা পরিচালিত পুতুল সরকার। এরা বেশি দিন আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এরাই হবে নেপালের সর্বশেষ এ ধরনের সরকার।
বর্তমান সরকারের ৩৮ জন মন্ত্রীর ২৫ জনই নির্বাচনে পরাজিত। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও নিজের দুটি আসনে হেরেছেন। জনগণের কোনো সমর্থন তাঁদের সঙ্গে নেই।
প্রথম আলো * বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
বাবুরাম ভট্টরাই * আমি ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় প্রচুর বাংলাদেশি বন্ধু ছিল। তারা এখন নিজ দেশে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশও নেপালের মতোই একটি দরিদ্র দেশ। অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। আমাদের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কও রয়েছে। এখানে যে নেপালি টুপি বিক্রি হয়, তা একসময় ঢাকাই টুপি হিসেবে পরিচিত ছিল। ঢাকার সুতি কাপড়ও নেপালে খুব জনপ্রিয়। আমার দল বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর পক্ষে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সড়কপথে সরাসরি যোগাযোগ হোক, তাও আমরা চাই।
তবে দুই দেশেই অনেক পশ্চাত্পদ উপাদান রয়ে গেছে। বৈষম্য ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো একই রকমভাবে সক্রিয়। পার্থক্য হচ্ছে আমরা পাহাড়ে আর বাংলাদেশ সমতলে। নেপাল থেকে সৃষ্টি হয়ে বেশির ভাগ নদী বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। আমরা একই অববাহিকার সন্তান। এই নদীগুলোর পানি ব্যবহার করে নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ একই রকমভাবে লাভবান হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা আমরা সঠিক মনে করি।
প্রথম আলো * নেপালে জলবিদ্যুেকন্দ্র নিয়ে আঞ্চলিক উদ্যোগের কথা উঠেছিল।
বাবুরাম ভট্টরাই * হ্যাঁ, নেপালে জলবিদ্যুেকন্দ্র হলে আমরা হিমালয়কেন্দ্রিক নদী অববাহিকার সব দেশ লাভবান হব। নেপাল ও বাংলাদেশ উভয় দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত্ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোসি নদীর ওপর সপ্তকোসি ড্যাম ও জলবিদ্যুেকন্দ্র হতে পারে, আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। হিমালয় থেকে সৃষ্ট নদীগুলোকে পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবহার করে আমরা এ অঞ্চলের সব মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি।
প্রথম আলো * আপনাকে ধন্যবাদ।
বাবুরাম ভট্টরাই * ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.