বেসামরিকদের জোরপূর্বক নিয়োগে গভীর সংকটে মিয়ানমার
মিয়ানমারে জান্তা সরকার আসার পর থেকে তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। দেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এতটাই সফলতা দেখাচ্ছে যে, তাদের মোকাবিলায় হিমশিম অবস্থা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই সংঘাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সামরিক সদস্য হারিয়েছে দেশটি। অন্যদিকে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল নিজেদের দখলে নেয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। হারানো অঞ্চল পুনরায় ফিরে পেতে মিয়ানমারের বেসামরিকদের জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ভুক্তভোগীর অভিযোগ হচ্ছে বেসামরিক লোকজনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাউ সু (ছদ্মনাম) তার স্বামীকে শেষবার দেখেছিলেন গত মার্চে। সেসময় তাকে জোরপূর্বক মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। চার মাস পরে চাউ সু জানতে পারলেন তার স্বামী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বিবিসি’কে মিয়ানমারের এই নারী বলেন, সবসময়ই আমাদের জীবন দরিদ্রের এবং সংগ্রামের, তারপরেও তাকে ছাড়া এ জীবন বয়ে চলা বেশ কঠিন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিধবা হলেন চাউ সু। যার জীবন পুরোটাই তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তিন সন্তানসহ চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন অল্প বয়সে বিধবা হওয়া এই নারী। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার একটি আইন জারি করে। যার মাধ্যমে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০২১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি’কে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক সরকার। এরপর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। পিপল’স ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নামের সংগঠনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক সরকারে বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। টানা দুই বছর লড়াইয়ের পর ২০২৩ সালে বেশ সফলতা পেতে শুরু করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। দেশটিতে সামরিক শাসনে দমন-পীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস থাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে। দাবি অনুযায়ী দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে। বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা সত্ত্বেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে বেসামরিকদের জোরপূর্বক নিয়োগ বর্তমান গৃহযুদ্ধকে আরও তরান্বিত করেছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
No comments