ট্রাম্প বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ‘পুরুষ বয়কট’ আন্দোলন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ এবং রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেসে পুনঃবিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন। ট্রাম্পের শাসনামলে পুরুষতান্ত্রিক ও কনজারভেটিভ নীতির প্রসার ঘটেছে, যা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকারকে সংকুচিত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এই উদ্বেগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে আবার জেগে উঠেছে ‘ফোর বি’ আন্দোলন—একটি চাঞ্চল্যকর এবং প্রতিবাদী সংগ্রাম, যেখানে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ক, যৌনতা, বিয়ে এবং সন্তান ধারণ বর্জনের ডাক দিয়েছে।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স-২৪–এর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা প্রথম এ আন্দোলন শুরু করেন। যেখানে তারা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষার্থে একে একে নিজেদের ওপর চাপানো সামাজিক নিয়মগুলো যেমন সৌন্দর্য চর্চা এবং শারীরিক আকর্ষণের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলা প্রত্যাখ্যান করেন। এ আন্দোলনটি পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর চর্চা তীব্র হয়ে ওঠে।

এদিকে ট্রাম্পের বিজয়ের পর, যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফোর বি’ আন্দোলন সমর্থন জানাতে শুরু করেছেন। এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘নারীরা, আমাদের এখন দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মতো ‘ফোর বি’ আন্দোলন শুরু করার সময় এসেছে! বিয়ে নয়, সন্তান জন্ম নয়, পুরুষদের সঙ্গে ডেটিং নয়, আর কোনো যৌন সম্পর্ক নয়! যুক্তরাষ্ট্রের জন্মহার কমিয়ে দিতে হবে এবং আমরা পুরুষদের বিজয়ের হাসি হাসতে দিতে পারি না। আমাদের মরণ কামড় দিতে হবে!’

এই পোস্টটি মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ২ কোটি ভিউ এবং প্রায় ৫ লাখ রিঅ্যাকশন পেয়েছে। টিকটকেও একই ধরনের প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে নারীরা একে একে পুরুষদের বয়কট করার পক্ষে সাফ কথা বলছেন।

এ আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের মধ্যে সেই সংকটের প্রতিফলন, যা তারা ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনকালে অনুভব করছেন। অনেকের আশঙ্কা, ট্রাম্পের কনজারভেটিভ নীতির কারণে নারী অধিকার সংকুচিত হতে পারে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে, ট্রাম্পের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও নারী-বিরোধী আইনি পদক্ষেপের কারণে নারীরা নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

প্রসঙ্গত, ফোর বি আন্দোলন দক্ষিণ কোরিয়াতে ২০১৯ সালে ‘মি টু’ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শুরু হয়েছিল। সেখানে গোপনে নারীদের ভিডিও ধারণের প্রতিবাদে কট্টর নারীবাদীরা এ আন্দোলন গড়ে তোলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল নারীদের শরীরকে যৌন বস্তু হিসেবে নয়, বরং একটি স্বাধীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে শেখানো। এ আন্দোলনটির সমর্থকদের দাবি, ‘আমরা নারীরা আর কোনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অংশ হতে চাই না। আমরা নিজেদের দেহ এবং জীবনের মালিক।’

তবে দক্ষিণ কোরিয়াতে এ আন্দোলনটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কারণ অনেকেই মনে করেন, এর ফলে দেশে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল এ বিষয় মন্তব্য করেন, ‘নারীবাদ পুরুষ ও নারীর মধ্যকার স্বাস্থ্যকর সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করছে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একদিকে যেখানে ‘ফোর বি’ আন্দোলন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে নতুন রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। ট্রাম্পের বিজয়ের পর নারীদের মধ্যে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

উল্লেখ্য, ‘ফোর বি’ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো, নো ডেট উইথ মেন, নো ম্যারিজ, নো সেক্স, নো গিভিং বার্থ। অর্থাৎ, পুরুষদের সঙ্গে কোনো ডেটিং, প্রেম, যৌন সম্পর্ক বা সন্তান ধারণ থেকে বিরত থাকা।

যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরত নারীরা। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরত নারীরা। ছবি : সংগৃহীত



No comments

Powered by Blogger.