অতি মূল্যায়িত শেয়ারে ঋণ দিতে সতর্কতার পরামর্শ

অতি মূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগের বিপরীতে গ্রাহকদের ঋণসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকদের ঋণসুবিধা দিয়ে থাকে এমন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসইতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গতকাল মঙ্গলবার এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে ডিএসইর সভাপতি রকিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর উচিত ওই শেয়ারে ঋণসুবিধা কমিয়ে আনা, যাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে কোনো হস্তক্ষেপ করতে না হয়।
রকিবুর রহমান বলেন, কোনো শেয়ারের দাম ৫০০ টাকা থাকা অবস্থায় যে হারে ঋণ দেবেন, সেই একই হারে যদি শেয়ারটির দাম এক হাজার টাকা হওয়ার পরও ঋণ দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ঝুঁকি বাড়ে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ঋণসুবিধা দেয়, এমন অর্ধশতাধিক ব্রোকারেজ হাউসের মালিক ও প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেন।
ডিএসইর সভাপতি অতি মূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ না করতে বিনিয়োগকারীদের প্রতিও আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আগে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলতাম অতি মূল্যায়িত শেয়ার কেনার আগে দশবার ভাবেন; আর এখন বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তাঁরা যেন কোনো অবস্থাতেই অতি মূল্যায়িত শেয়ার না কেনেন।’
রকিবুর রহমান বলেন, কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), আয় অনুপাতে দাম (পিই), প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভি), কোম্পানির ব্যবসায়িক সম্ভাবনাসহ উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে ভালোমতো খোঁজখবর নিয়ে বিনিয়োগ করা উচিত। এভাবে বিনিয়োগ করলে স্বল্প মেয়াদে কোনো লোকসান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে একজন বিনিয়োগকারী অবশ্যই মুনাফা করবেন। বাজারে এখনো এমন অনেক বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার রয়েছে।
বৈঠকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি সপ্তাহে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর উদ্যোগে অন্তত একটি করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। এ বৈঠকে অর্ধশতাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এসইসি, ডিএসই ও সিএসই যৌথ বৈঠক করেছে। এ বৈঠকে বাজারের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বাজার পরিস্থিতি: টানা আট দিন অব্যাহতভাবে বাড়ার পর গতকাল উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই শেয়ারের মূল্যসূচক কিছুটা কমেছে।
এদিন ডিএসইর সাধারণ সূচক আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৬৯ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ২২৪ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১৫ হাজার ১৯১ পয়েন্ট। তবে সূচক কমলেও লেনদেনে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়েনি।
ডিএসইতে গতকাল মোট এক হাজার ৪৮২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের দিনের রেকর্ড লেনদেনের চেয়ে তা ২১ কোটি টাকা কম হলেও পুঁজিবাজারে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকার শেয়ার।
বাজার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক দিন প্রধানত গ্রামীণফোনের শেয়ারের ওপর ভর করেই সূচক ও লেনদেন বাড়ছিল। কিন্তু এ লেনদেনকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে এসইসি ও ডিএসই তদন্ত শুরু করা এবং কোনো কোনো মার্চেন্ট ব্যাংকের ঋণসুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় শেয়ারটির দাম কিছুটা কমেছে। মূলত এ কারণেই সূচক কমেছে।

No comments

Powered by Blogger.