শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ, সহিংস ঘটনাও ঘটেছে

কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
সহিংসতার ভেতর দিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় জাফনায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। গতকাল ভোরে ওই এলাকায় অনেক বোমা হামলা চালানো হয়। সেন্টার ফর মনিটরিং ইলেকশন ভায়োলেন্স (সিএমইভি) জানায়, মাহিন্দা রাজাপক্ষের শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির একজন সংগঠকের বাড়িতে দুটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ওই বোমা হামলায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি।
নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও সাবেক সেনাপ্রধান শরত্ ফনসেকার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। উভয় পক্ষই নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। আজ বুধবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হতে পারে। সহিংসতার জন্য উভয় পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করেছে। সিএমইভি জানায়, সহিংসতার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে যাননি। ফলে উত্তরাঞ্চলে ভোট পড়েছে অনেক কম।
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুলকিরিগালা নির্বাচনী আসনের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করতে যাচ্ছি। নির্বাচনের পর নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।’ সাবেক এই চলচ্চিত্র অভিনেতা মাত্র ২৪ বছর বয়সে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
গত মে মাসে তামিল টাইগারদের স্বাধিকার আন্দোলন একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেন রাজাপক্ষে ও ফনসেকা। স্বাধীন তামিল রাষ্ট্রের জন্য ১৯৭২ সাল থেকে লড়াই করে আসছিল তামিল টাইগার বিদ্রোহীরা।
কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের ওই মিত্রের পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ৫৯ বছর বয়সী ফনসেকা তাঁর সাবেক বসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ার পর দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
শ্রীলঙ্কায় নির্ভরযোগ্য কোনো বুথ ফেরত সমীক্ষা নেই। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, রাজাপক্ষে ও ফনসেকার মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২২ জন প্রার্থী লড়েছেন।
সিএমইভির জাতীয় সমন্বয়কারী ডি এম দেশানায়েক বলেন, নির্বাচনের দিন মোট ৬৪টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩০টি গুরুতর। ভোটকেন্দ্রের কাছে গুলিবর্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে তিনি জানান। সিএমইভি জানায়, তামিল অধ্যুষিত ভাভুনিয়া শহরের একটি ভোটকেন্দ্রের কাছে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে।
চার মাইল পথ হেঁটে গিয়ে ভোট দিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান শরত্ ফনসেকার একজন সমর্থক। তিনি বলেন, ভোট দেওয়ার জন্য তাঁরা অনেক পথ হেঁটেছেন। কারণ তাঁরা মনে করছেন, যুদ্ধের পর এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। কে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন, সে সম্পর্কে নিজের পছন্দ ব্যক্ত করার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী।
বিরোধীরা বলেছে, ভোট কারচুপির প্রমাণ পাওয়া গেলে তারা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছে ফনসেকার মিত্ররা। নির্বাচনের দিন নিরাপত্তার জন্য ৬৮ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ১২ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়।
গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। আজ বুধবার দুপুর নাগাদ চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.