দুদিন পেছাল সাফ ফুটবল

দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) আর কোনো সদস্য দেশের যে কৃতিত্ব নেই, সেটি হাতে উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয়বারের মতো সাফ ফুটবলের আয়োজক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছিল তৃতীয় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০০৩—এর আয়োজক। বাংলাদেশের মাঠেই হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ সাফ ফুটবল, ২০০৯। আবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী আয়োজন স্বত্ব পাওয়ার কথা ছিল নেপালের। কিন্তু সাফের বিপণন সংস্থা নেপালের ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকায় ‘আকর্ষণীয় বাজার’ ভারত নির্বাচিত হয়েছিল বিকল্প ভেন্যু। কিন্তু দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিল এই টুর্নামেন্ট। এটি আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল মূলত ২-১২ ডিসেম্বর। কিন্তু ঈদুল আজহা পড়ে যাওয়ায় পেছাতে হয়েছে সময়সূচি। কাল সেই সূচি বদলের ঘোষণাই দিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, ‘বাংলাদেশে ষষ্ঠ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ৪-১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।’
টুর্নামেন্টের সময়সূচি ঠিক হয়েছে। আগামীকাল জানা যাবে আয়োজক বাংলাদেশ ৮ দলের প্রতিযোগিতায় কোন গ্রুপে পড়বে। রাজধানীর একটি হোটেলে আগামীকাল দুপুরে ড্র অনুষ্ঠান। এই ড্রয়ে দলগুলোকে কীভাবে বাছাই করা হয়েছে সেটি খুলে বলতে চাননি সুদীর্ঘ ৯ বছর সাফ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সিরাজুল ইসলাম। তবে আভাস এ রকম, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ এবং আয়োজক বাংলাদেশকে দুই গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই সম্ভবত দেখা যাবে। বাংলাদেশ সহজ গ্রুপে পড়বে, না কঠিন গ্রুপে? ব্যাপারটা বাংলাদেশের জন্য ‘যাহা বায়ান্ন তাহাই তেপ্পান্ন’। ফিফা ও এএফসি র্যাঙ্কিংয়ে ভারত, মালদ্বীপ আর শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য সাফল্যের সোনালি চূড়াটা অনেক উঁচুতে।
মূল ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। তবে ঢাকার বাইরে একটি-দুটি ম্যাচ আয়োজন করা যায় কি না সেই সিদ্ধান্তটি হবে সাফের কংগ্রেসে। আগামীকাল ঢাকাতেই হবে সাফের কংগ্রেস।
তবে এটা ঠিক, আয়োজনের তীব্র ঝলকানি দিয়ে বাংলাদেশ সাফল্যের ওই চূড়াটাই ছুঁতে চায়। সালাউদ্দিন বললেন, ‘বাংলাদেশে সাফ ফুটবল আনতে চেষ্টা করে সফল হয়েছি। এখন এটির সফল আয়োজনের মাধ্যমে এএফসির কাছে ভবিষ্যতে আরও টুর্নামেন্ট আয়োজনের দাবি জোরাল করতে চাই।’ চারদিক ভরে উঠবে ফুটবলের আলোয়, স্টেডিয়ামে স্রোত বইবে জনতার—এই সাফল্যকেই তাহলে পাখির চোখ করবে বাফুফে? ২০০৩ সালে ঘরের মাঠের আয়োজন দক্ষিণ এশীয় ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিয়েছিল বাংলাদেশকে, এবারও কি তারা সেই আকাঙ্ক্ষায় নামবে না বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এলাকার ফুটবল-যুদ্ধে?
প্রশ্নটা বাফুফে সভাপতির সপ্রতিভ মুখখানিকে একটু অপ্রস্তুত করল। কিন্তু উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, ‘নিপুণ ডজ’ খেলে গেল তাঁর কণ্ঠে, ‘গতবার ৮ দলের মধ্যে সপ্তম হয়েছিলাম। এবার অবশ্যই ভালো করতে চাইব। নিজেদের মাটিতে এর আগেও সর্বোচ্চ সাফল্য আমরা পেয়েছি। এবারও পেতেই পারি।’
কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি কি আশাজাগানিয়া? সালাউদ্দিন আশাবাদী, ‘অফ সিজনে আমরা দলকে অনুশীলনের মধ্যে রেখেছি। ক্যাম্পে ডাক পাওয়া খেলোয়াড়েরা যে যথেষ্ট ফিট এবং ভালো অবস্থায় আছে তার প্রমাণ চলমান ফেডারেশন কাপে পাচ্ছি। এই টুর্নামেন্টটা তাদের জন্য আরও সহায়ক হবে। তারা তো খেলার মধ্যেই থাকবে।’
বিদেশি কোচ না থাকলে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল-শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় ওঠে না। ১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমস ও ২০০৩ সাফ ফুটবলে এই ঘটনা পরম্পরার জন্ম দিয়েছিলেন সামির শাকির এবং জর্জ কোটান। সাফ গেমসটা বাদ দিন। যেটি আসল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হয়ে উঠল, সেখানে সাফল্যের যোগসূত্র গড়ে উঠেছে নিজেদের মাঠ আর বিদেশি কোচ কোটানের যুগলবন্দিতে। এবারও এটা তো একটা ঘটনাচক্র যে, ব্রাজিলীয় কোচ ডিডো তাঁর সেনাদের নিয়ে নামবেন দেশের মাঠেই। সুতরাং আপাত একটা নির্লিপ্তির মধ্যেই দেশের ফুটবল-সাফল্যের স্বপ্ন আঁকছে আগামী সাফ ফুটবলে। সপারিষদ সংবাদ সম্মেলনে সেই স্বপ্নের কথাই বলে গেলেন সালাউদ্দিন।

No comments

Powered by Blogger.