গিনিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির বিরোধী দল ঘোষণা দিয়েছে, স্বৈরাচার সামরিক সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এদিকে সামরিক জান্তা সরকার সোমবারের সহিংসতায় দুঃখ প্রকাশ করে নিহতদের স্মরণে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার দুদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। সোমবার সরকারবিরোধী এক বিক্ষোভে গুলি চালায় সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ১৫৭ জন নিহত হয়।
গিনির একটি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, সোমবারের সহিংসতার পর সেনাবাহিনী গত মঙ্গলবার গুলি চালিয়ে আরও তিন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। রাজধানী কনাক্রির বাইরে ওয়ানিদারা ও কোসা অঞ্চলে ওই তিন ব্যক্তি ঘর থেকে বাইরে গেলে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। এ ছাড়া সেনাসদস্যরা হাসপাতাল থেকে কয়েকজন আহত বিক্ষোভকারীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে গিনি অর্গানাইজেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব হিউমান রাইটস নামের ওই সংস্থাটি।
সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান ক্যাপ্টেন মুসা দাদিস কামারা আগামী জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেবেন—এমন খবরে সরকারবিরোধীরা রাজধানী কনাক্রিতে গত সোমবার সমাবেশের আয়োজন করে। কনাক্রির সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের সামনে প্রায় ৫০ হাজার লোক ওই সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় সেখানে প্রচুর সেনা মোতায়েন করা ছিল। এর আগে জান্তা সরকার সব ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সমাবেশে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেনাসদস্যরা কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ও লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এতে কাজ না হলে সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। গত বছরের ডিসেম্বরে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন দাদিস কামারা।
বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী প্রধান বিরোধী দল পিপল অব গিনি পার্টির প্রধান আলফা কোন্ডি নিউইয়র্কে বলেছেন, জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গিনির লোকজনকে সংঘবদ্ধ করতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। আন্দোলন থেকে পেছানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবর্তনের আশায় আন্দোলনে নেমেছি। সেই আন্দোলনের মাঝ পথে থেমে যেতে পারি না। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। কিন্তু গতকাল (সোমবার) যা ঘটেছে, তাতে আমরা এই সরকারের পতন না চেয়ে পারি না। আমাদের দাবি, সামরিক সরকারকে হটিয়ে একটি জাতীয় সরকার এসে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করুক।’ আলফা কোন্ডি আরও বলেন, বিক্ষোভে বাধা দিয়ে সরকার তাদের ওপর আস্থাহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এই হামলা ছিল পরিকল্পিত এবং প্রেসিডেন্টের একান্ত উপদেষ্টার নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করেছে, তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, বিক্ষোভকারীদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছে সেনারা। তারা নারী বিক্ষোভকারীদের বস্ত্র হরণ করেছে এবং সবার সামনে তাদের ধর্ষণ করেছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আফ্রিকান এনকাউন্টার ফর দ্য ডিফেন্স অব হিউমান রাইটসের (আরএডিডিএইচও) গিনি শাখার প্রধান মামাদি কাবা বলেন, সেনাবাহিনী এখন গিনির জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা সাধারণ লোকজনের ঘরে হামলা চালিয়ে জিনিসপত্র লুট করছে এবং নারীদের ধর্ষণ করছে। সেনেগালের ডাকারের কার্যালয়ে মামাদি কাবা বলেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কয়েকটি ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে এ খবর পাওয় গেছে।

No comments

Powered by Blogger.