সমাজতন্ত্রই পারে চীনকে রক্ষা করতে

চীন গতকাল বৃহস্পতিবার মহাসমারোহে কমিউনিস্ট শাসনের ৬০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছে। জমকালো প্রদর্শনী ও বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে তারা দিবসটি উদ্যাপন করেছে। প্রথা অনুযায়ী এবারও তারা নতুন কিছু আধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও কয়েক দশকে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনের পুনর্জন্মের উচ্চপ্রশংসা করে বলেছেন, ‘একমাত্র সমাজতন্ত্রই পারে চীনকে রক্ষা করতে।’
জাতীয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ করা হয় রাজধানী বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। এখানেই ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর দেশটির কমিউনিস্ট নেতা মাও সে তুং গণচীনের ঘোষণা দেন।
হাজার হাজার সেনাসদস্য বর্ণাঢ্য কুজকাওয়াজে অংশ নেন। যুদ্ধবিমানগুলো বেইজিংয়ের আকাশে প্রদর্শনী মহড়া দেয়। এরপর সেনাবাহিনী আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করে।
প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও অনুষ্ঠান মঞ্চে মাও সে তুংয়ের বিখ্যাত কলার উঁচু কালো রঙের কোট পরে হাজির হন। তিনি তাঁর ভাষণে কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসা করে বলেন, ‘৬০ বছরে চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এটাই প্রমাণ করে যে একমাত্র সমাজতন্ত্রই পারে চীনকে রক্ষা করতে। এই ছয় দশকের সফলতা আরও প্রমাণ করে যে সংস্কার ও উদারতাই পারে চীনের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক চীন আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও ও সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেইজিংসহ দেশটির বিভিন্ন শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। নজীরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয় বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। কড়া নিরাপত্তার কারণে গত বুধবার থেকেই বেইজিং কার্যত অবরুদ্ধ নগরে পরিণত হয়। রাজধানীতে প্রবেশের সব সড়কে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। নিরাপত্তাকর্মীদের পাশাপাশি কয়েক লাখ স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন করা হয়।
বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের পাশাপাশি প্রায় দুই লাখ লোক অংশ নেন। রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের নিচে তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। কুচকাওয়াজে চীনের দূরপাল্লার শক্তিধর ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম। চীনের নিজেদের তৈরি বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্রও প্রদর্শন করা হয়। এর মাধ্যমে চীন বিশ্বকে এটাই জানান দিয়েছে যে তারা অস্ত্রের জন্য এখন আর বিদেশের ওপর নির্ভরশীল নয়। বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের পরই সামরিক শক্তির প্রদর্শন করা হয়।
সেনাসদস্যদের পাশাপাশি কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ কুচকাওয়াজে অংশ নেন। গোলাপি রঙের পোশাকে কয়েক হাজার নারী বাদ্যযন্ত্রের ছন্দে ছন্দে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। পরে আরও কয়েক হাজার নারী বর্ণিল হাতপাখা, রং-বেরঙের ফিতা আর ফুলের তোড়া নিয়ে নানা কসরত করে দর্শকদের আনন্দ দেন।
চীনের তারকা খেলোয়াড় অ্যাথলেট লিউ জিয়াং, সাবেক অলিম্পিক জিমন্যাস্ট চ্যাম্পিয়ন লি নিং সুসজ্জিত গাড়িতে চড়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ সময় দর্শকেরা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানায়। মাও সে তুং থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও পর্যন্ত সব চীনা নেতার বিশালাকার প্রতিকৃতি অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ৮০ হাজার শিশু উপস্থিত ছিল। তাদের সবার হাতে বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্লাকার্ড ছিল।
বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠান দেখতে ৩০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চীনাদের টেলিভিশনের পর্দায় অনুষ্ঠান দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে। এমনকি বেইজিংয়ের এক কোটি ৭০ লাখ নাগরিকও এ অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
গতকাল দুপুরের দিকে কুচকাওয়াজ শেষ হয়। কিন্তু তখনো বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। কারণ বিকেলেই তিয়েনআনমেন স্কয়ারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় আকর্ষণীয় এক আতশবাজির প্রদর্শনী হয়।

No comments

Powered by Blogger.