উন্নত চিকিৎসার অভাবে পা হারাতে পারেন সাকিব
বাসার পাশে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন সাকিব। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে গেল বছর মাদ্রাসায় আর পড়া হলো না। বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে তিনি স্থানীয় একটি টেইলারিং কারখানায় কাজও শিখেছেন।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিঝরা স্লোগানে মুখরিত ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরতম নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে ঘরে বসে থাকতে পারেনি সাকিব। গত ২১ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিদিনই তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করতেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। প্রতিদিনই তার চোখের সামনেই হতাহতের বহু ঘটনা ঘটত। এসব দেখার পরও তিনি ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনের সাক্ষী হতে ৫ জুলাই সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকায় অবস্থান নেন।
এ দিন দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অবস্থান নিলে উভয়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যেতে থাকে। এ সময়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। বিকেল ৩টার দিকে সাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহযোগীরা প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিলে ওখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে নেওয়া হয় সাকিবকে। মুগদা হাসপাতালে সে ৫ দিন ভর্তি থাকার পর গত ১১ আগস্ট তিনি বাসায় ফেরেন। পরে আবার ঢাকার সায়েদাবাদে আল কারীম হাসপাতালে সপ্তাহখানেক ভর্তি থাকেন।
সাকিব আল হাসান (২১) শরীয়তপুরের সখিপুর থানার কিরণ নগর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে। তিনি ঢাকার ডেমরায় বামৈল পশ্চিম পাড়ার জুলহাস মিয়ার টিনশেড বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
এ বিষয়ে গুলিবিদ্ধ সাকিব কালবেলাকে বলেন, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে থাকে পুলিশ। এ সময় আমিসহ আরও ৪-৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার পায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং প্রচণ্ড ব্যথায় আমি স্থির থাকতে পারছিলাম না। ওই সময় কয়েকজনের সহযোগিতায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে ভুল চিকিৎসার কারণে পরে সায়েদাবাদের আল কারীম হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।
নিজের পায়ে গুলির বর্ণনা দিতে গিয়ে সাকিব কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেছেন- গুলির আঘাতে আমার পায়ের গোড়ালি ভেঙে গেছে। পায়ে পচন ধরেছে। উন্নত চিকিৎসার করা না গেলে হয়তো পা কেটে ফেলা হতে পারে। বর্তমানে ১ দিন পর পর ড্রেসিং করানোর জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। সব মিলিয়ে এখনো প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এ পর্যন্ত কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। এ বিষয়ে কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাকিব কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ বিষয়ে সাকিবের বাবা আব্দুল আজিজ কালবেলাকে বলেন, ঋণের টাকায় চলছে আমার সংসার। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারলাম না। স্থানীয় একটি ডাইং কারখানায় অল্প বেতনে চাকরি করে বাসা ভাড়া দিয়ে সংসারের খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। এ জন্যই সাকিবের ইচ্ছে ছিল বিদেশে গিয়ে সংসারের হাল ধরবে কিন্তু সে ইচ্ছেও আর পূরণ হলো না। সে ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পায়ের গোড়ালির হাড় ভেঙে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়নি। সে এখনও হাঁটতে পারছে না। এ ছাড়া তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তিল তিল করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম, সে টাকাগুলোও তার চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে গেল। বর্তমানে ঋণ করে তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ৬৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ইব্রাহিম খলিল কালবেলাকে বলেন, আমি যখন বিষয়টি জানতে পারি সঙ্গে সঙ্গেই তার খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং মুগদা মেডিকেল থেকে আসার পরে চরমোনাই হুজুরের পরিচালনাধীন রাজধানীর সায়েদাবাদে আল কারিম হাসপাতালে ৪ দিন ফ্রি ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন সাকিব হাসান। ছবি : কালবেলা |
No comments