৯৬ ও ১৩ সালের তফাৎটা বুঝতে হবে by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

বাংলাদেশ একটা চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। অনেকে বলছেন, এটা নতুন কিছু নয়, এ রকম সংকট এ দেশে আগেও হয়েছে। এদের যুক্তি, ১৯৯৬ সালে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একই প্রকৃতির রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময় সরকারি দল নিজেদের নির্বাচিত সরকার দাবি করে সাংবিধানিকভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল; আর বিরোধী দল চেয়েছিল নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। ওই সময়ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ানসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী ব্যক্তিত্ব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে আন্দোলনের তীব্রতায় সরকার অবস্থান পরিবর্তন করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে একটি যেনতেন প্রকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওই সংকট উত্তরণ করতে পেরেছিল। তবে ১৯৯৬ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান সংকটের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। ১৯৯৬ সালে সরকার প্রথম দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিলে কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু তা না করায় বিরোধী দল আন্দোলনের একপর্যায়ে সংসদ থেকে সম্মিলিত পদত্যাগ করায় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সরকারের পক্ষে আরেকটি সংসদ নির্বাচন করা ছাড়া সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগের দাবি মানা সম্ভব ছিল না। কাজেই সরকার ওই সময় আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং ওই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও একটি যেনতেন প্রকারের নির্বাচন করে সংসদে এককভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে ওই সংকটের সমাধান করেছিল। আওয়ামী লীগ ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের বিরোধিতা করে একে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও ষষ্ঠ সংসদে এককভাবে পাস করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরোক্ষভাবে ওই ত্র“টিপূর্ণ নির্বাচনটিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল।
বর্তমানের অবস্থাকে ১৯৯৬ সালের সংকটের সঙ্গে হুবহু তুলনা করা যথার্থ নয়। কারণ, এখন সরকার চাইলে একদিনেই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এ জন্য সরকারকে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠনকল্পে একটি বিল এনে সে বিল পাস করে সে অনুযায়ী পরিবর্তিত সিডিউলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। এ রকম একটি বিল সংসদে পাস করার উদ্দেশ্যে সরকার যদি বিরোধী দলকে সংসদে যোগদান করতে অনুরোধ করে, তাহলে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে, বিএনপি সংসদে যোগ দেবে না। আর যদি বিএনপি সংসদে যোগ নাও দেয়, তাহলেও সরকারের কিছু আসে যায় না। কারণ, সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিএনপির সমর্থন ছাড়াই সরকার এমন বিল জাতীয় সংসদে একক প্রচেষ্টায় পাস করতে পারে। কিন্তু সরকার সে পথে অগ্রসর হয়নি। কেন সে পথে সরকার অগ্রসর হয়নি সে সম্পর্কে নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ধারণা গড়ে উঠেছে তা হল, বিগত পাঁচ বছরে সরকার দেশ পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। দলীয়করণ, দুর্নীতি ও বিরোধী দলকে যুগপৎ সংসদের ভেতরে ও বাইরে কোণঠাসা করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নিপীড়নের কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট হ্রাস পায়। উপনির্বাচন, স্থানীয় ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরকার বুঝতে পারে যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করলে সরকার পরাজয় এড়াতে পারবে না। এ কারণে সরকার জনমত উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে স্বনিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংসদ, মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্যদের স্বপদে বহাল রেখে দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও স্বনিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের আনুকূল্য লাভের মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বাচনী বিজয় নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করে।
বিরোধী দল সরকারের এ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে দুই বছর ধরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সরকার দমন-পীড়ন এবং হামলা-মামলা করেও বিরোধী দলকে এ আন্দোলন থেকে সরাতে পারেনি। কারণ, বিরোধী দল জানে, যতই জনপ্রিয়তা থাকুক সরকারি দলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অর্থই হল নির্বাচনী পরাজয় মেনে নেয়া। বিরোধীদলীয় এ আন্দোলন প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে সরকারই বিরোধী দলকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রথম দিকে বিরোধী দলের সমাবেশ, জনসভা এবং বিভাগীয় পর্যায়ের রোডমার্চ কর্মসূচিগুলোতে কোনো সহিংসতা হয়নি। পরবর্তীকালে বিরোধীদলীয় কর্মসূচিতে জনসমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া শুরু করে। বিভাগীয় রোডমার্চ শেষ করে বিরোধী দল ঢাকা মহাসমাবেশ কর্মসূচি দিলে ওই কর্মসূচিতে সরকার ব্যাপকভাবে বাধা দেয়। পরবর্তীকালে হরতালের কর্মসূচিগুলোতে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রাস্তায় পিকেটিং, মিছিল-মিটিং করতে দেয়া হয়নি। তাদের মানববন্ধনেও এক সময় বাধা দেয়া হয়। বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নেয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মতো একজন ক্লিন ইমেজের নেতার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুরের মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, শিমুল বিশ্বাস, আসম হান্নান শাহের মতো বর্ষীয়ান নেতাদের যে ধরনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সরকার বিরোধীদলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করে আন্দোলন দমন করতে চায়। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদের গ্রেফতারের সময়কাল ও ভঙ্গিমা দেখেও অনুধাবন করা যায় যে, সরকার গ্রেফতারের মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের আতংকিত করে তাদের আন্দোলন দমন করতে চায়।
বিরোধীদলীয় আন্দোলন যখন শান্ত ছিল তখন সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দেলন করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল আন্দোলন স্তিমিত করে সংলাপ-সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করলে সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতারা সে বিষয়টিতে আন্তরিকভাবে সাড়া না দিয়ে পরিবর্তে ‘বিরোধী দলের আন্দোলনের মুরোদ নেই’ বলে সমালোচনা করে বিরোধী দলকে আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে। আর এখন সমঝোতার প্রায় সব পথ বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে বিরোধী দল যখন জোরালো আন্দোলন শুরু করেছে, তখন সরকারি দল সে আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতার সমালোচনা করছে। সরকারি দল যদি বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে না দেয়, যদি তাদের দাবি মানার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতা না করে এককভাবে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে বিরোধী দল দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জোরালো আন্দোলন করা ছাড়া আর কী করতে পারে! জনপ্রিয়তা, নৈতিকতা ও যৌক্তিকতার বিবেচনায় বিরোধী দল সরকারি দলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে, সে কারণে আÍঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দল সরকারের পাতা দলীয় সরকারের অধীনে একক নির্বাচনের ফাঁদে পা দিয়ে নিশ্চিত নির্বাচনী পরাজয় মেনে নেবে কেন?
নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ত্র“টি-বিচ্যুতি সংশোধন করে সেই সংশোধিত নির্দলীয় ব্যবস্থার অধীনে সংসদ নির্বাচন করার সুযোগ ছিল সরকারের। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে প্রথম দিকে ইভিএমে সংসদ নির্বাচন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করলে ওই উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর স্বনিয়োজিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে দলীয় তত্ত্বাবধানে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চেয়েছে। বিরোধী দলকে আন্ডারএস্টিমেট করে চালাকি করে যে নির্বাচনে জেতা যাবে না, সে সত্যটি সরকার অনেক দেরি করে বুঝতে পেরেছে। নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করার পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবি না মানার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এ বছরের মাঝামাঝি পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পর সরকার সে সিদ্ধান্তে অনড় থাকার মানসিকতা জোরদার করে। এ জন্য প্রধান বিরোধী দলসহ ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে না এলেও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনকালীন সরকারে পাঁচজন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা দিয়ে পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজি করিয়ে ওই দলটিকে বিরোধী দল বানানোর পরিকল্পনা করে। জাপা প্রধান সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে এলেও পরবর্তীকালে সবাইকে চমকে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিরোধীদলীয় লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে কমিশন ঘোষিত নির্বাচনী সিডিউল অনুযায়ী সরকারি দল ও জাপা প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। এভাবে জাপাকে পৃথকভাবে নির্বাচন করিয়ে সরকার যখন বিরোধীদলীয় দাবি এবং সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরামর্শ উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সরকার, তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু নাটকীয়তা সৃষ্টিকারী বহুরূপী এরশাদ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার মাত্র দু’দিন পর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে জাপার সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং মন্ত্রিসভা থেকে জাপা সদস্যদের পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন।
জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সরকারকে মহাগ্যাঁড়াকলে ফেলে দিয়েছে। সরকারের পক্ষে এখন আর এ নির্বাচনকে সবার অংশগ্রহণমূলক বলার কোনো উপায় থাকল না। এহেন একতরফা নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে যে সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ এ রকম নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের অনাগ্রহের কথা বলে দিয়েছে। শিক্ষকরা নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। জাপা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে যেসব আসনে কেবল সরকারি দল ও জাপা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিল সে আসনগুলোতে আর নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। ফলে প্রায় ২০% আসনে সরকারি দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারবেন, যা সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অনন্য রেকর্ড হবে। জাপার নির্বাচন বর্জনের পরও ৪ ডিসেম্বর সরকারি দল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। দলীয় মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারিখের হেরফের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। যত বাধাই আসুক, আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে আওয়ামী লীগ যেভাবে একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে, তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে অনেকে ভাবছেন, এ দেশের রুগ্ন গণতন্ত্রকে হয়তো আবারও হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ, এ রকম নির্বাচন করতে গেলে যে সহিংসতা হবে তাতে আবারও রাজনীতিতে অরাজনৈতিক শক্তির হস্তক্ষেপ হতে পারে। একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার যে ঘোষণা দিয়েছিল, সে ঘোষণার সঙ্গে ১৮ দলের দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণার পার্থক্য অনেক। কারণ, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জানতো যে, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনটি সরকার সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে করছে। নির্বাচনটি সরকার ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে নয়, বরং বিরোধীদলীয় দাবি মেনে নেয়ার লক্ষ্যে সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরির জন্য করছে। এ কারণে ওই নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা হয়তো অতটা জোরদার ছিল না। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। এ নির্বাচন সরকার বিরোধীদলীয় দাবি মেনে নেয়ার জন্য নয়, বরং ক্ষমতায় থাকার জন্যই করছে। কাজেই এ ক্ষেত্রে এ নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ১৮ দল সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে। ফলে ওই রকম অবস্থায় নির্বাচন হতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গায়ের জোরে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে যেনতেন প্রকারে নির্বাচন ও সরকার গঠন করলে সে সরকার প্রথম দিন থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। ফলে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়বে।
গণতন্ত্রে একদলীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায় না। জাপার নির্বাচন বর্জনের ফলে সরকারের পক্ষে দশম সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক প্রমাণের আর সুযোগ রইল না। বাংলাদেশের রুগ্ন গণতন্ত্রকে গ্যাঁড়াকলে পড়া মহাজোট সরকার কোনোভাবে শুশ্রুষা করতে পারবে, নাকি হাসপাতালে পাঠাবে, তাই এখন দেখার বিষয়।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.