মেলার নামে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ফন্দি by আবুল কাশেম

ইলিশ রপ্তানি বন্ধ। তাহলে বিদেশে বিক্রির উপায়? অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তে বের করা হয়েছে এক অভিনব ফন্দি। রীতিমতো জালিয়াতির এই পথ খুঁজে পেয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা।
রপ্তানিকারকদের বলা হচ্ছে কলকাতায় মেলার মোড়কে ইলিশ রপ্তানির জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করতে। মন্ত্রণালয়ের এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে যশোরের 'মোফা ফিশ প্রসেসিং (প্রা.) লিমিটেড' নামের একটি কম্পানি এরই মধ্যে কলকাতায় ১০ হাজার কেজি (১০ টন) ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। আর ভারতের একজন আমদানিকারককে অনুরোধ করা হয়েছে, এর জন্য ঋণপত্র খুলতে। অথচ আমদানিকারককে বলা হয়েছে, মাছগুলো পৌঁছে দিতে হবে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে। ১৬ ডিসেম্বর এক মেলায় মাছগুলো বিক্রি করবে মোফা ফিশ প্রসেসিং কম্পানি। আর ঋণপত্র খুলে সহায়তাকারী ভারতীয় আমদানিকারককে দেওয়া হবে বিশেষ কমিশন। এ রকম ফন্দি-ফিকিরে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ রয়েছে। ওই দিন গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে মন্ত্রণালয়। আর মোফা ফিশ প্রসেসিং (প্রা.) লিমিটেড কমপক্ষে ১০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে গত ২০ নভেম্বর।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ড. মো. রুহুল আমিন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি কম্পানি ভারতে মেলায় প্রদর্শনের জন্য ১০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়েছে। ফাইলটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী জি এম কাদেরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক সাজিয়ে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির নামে কার্যত তা পাচার করার চেষ্টা চলছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ প্রদর্শনের কিছু নেই। দেশটির বাজারে এমনিতেই বাংলাদেশি ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেখানে মেলা করে ইলিশ প্রদর্শন করতে হবে কেন? সাধারণত, কোনো পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টির জন্যই মেলার আয়োজন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা লাভবান হওয়ার জন্যই কলকাতায় ১০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মোফা ফিশ প্রসেসিং (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্বাস আলী বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা নিজে থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির আবেদন করিনি। মন্ত্রণালয় থেকেই আবেদন করার জন্য আমাদের টেলিফোন করে অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ টন ইলিশ মাছ কলকাতা মেলায় প্রদর্শনের জন্য রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছি। বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক মেলায় এই মাছ প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে।'
এক প্রশ্নের উত্তরে আব্বাস আলী বিশ্বাস বলেন, 'নমুনা (স্যাম্পল) হিসেবে এত মাছ পাঠানোর সুযোগ নেই। তাই রপ্তানির আবেদন করেছি। যখন রপ্তানি উন্মুক্ত ছিল, তখন ভারতের একজন আমদানিকারক আমার কম্পানি থেকে ইলিশ আমদানি করতেন, তাঁকেই ১০ টন আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বলেছি। ওই আমদানিকারককে এও বলেছি, আপনি এলসি খুললেও মাছগুলো কলকাতা হাইকমিশনে পৌঁছে দেবেন। মেলায় মাছগুলো বিক্রি করার পর বিক্রয় মূল্য থেকে এলসির অর্থ দেশে ফেরত আনা হবে।'
আব্বাস আলী বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পক্ষে মাছ বিক্রির টাকা অফিসিয়ালি দেশে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ভারতের আমদানিকারককে দিয়ে এলসি খোলানো হচ্ছে। তাঁর এলসির মূল্য পরিশোধ করবে বাংলাদেশ হাইকমিশন। প্রদর্শনীর জন্য এত ইলিশ পাঠানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শেই বাড়িয়ে ১০ টনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আসলে পাঁচ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেবে।

No comments

Powered by Blogger.