ভেজাল প্রসাধনী-হারবালের নামে প্রতারণা বন্ধ হোক

ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই ওষুধ! দু-তিন দিনেই কালো চামড়া সাদা হয়ে যায়। মুখে মুখে প্রচার হয়ে যায় অনেক। কিশোরী, যুবতীদের অনেকেই আকৃষ্ট হয় বিজ্ঞাপন দেখেও।
অথচ ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত এসব ওষুধ ব্যবহার করে কালো রং কিছুটা দূর করা গেলেও তা ডেকে আনে ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধি। আর এই মারাত্মক কাজটি বাংলাদেশে বছরের পর বছর হয়ে আসছে প্রকাশ্যে। সবই হয় হারবাল ওষুধ নাম দিয়ে। মানুষের বিশ্বাস ও চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই প্রতারণার কাজটি করে আসছে। দেখার কেউ নেই। সরকারি হিসাবমতে দেশে অনুমোদিত আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও হারবাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৪৫০টির মতো। কিন্তু অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার। অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোই যে নিম্নমানের কিংবা ক্ষতিকর ওষুধ বা ক্রিম বাজারজাত করছে, তা-ই নয়, অনেক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানেও এসব ক্ষতিকর ওষুধ-ক্রিম প্রস্তুত হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারে বাজারে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে। সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকেও ব্যবহার করছে এসব ব্যবসায়ী নামের অসাধু ব্যক্তিরা। সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণেই তারা মানুষকে এভাবে ভয়ংকর জীবনের দিকে ঠেলে দিতে পারছে। অথচ বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টতই বলে দেন, চামড়া ফরসা করার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো ওষুধ আবিষ্কার করা যায়নি। আমাদের ওষুধ প্রশাসন, বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ সবই জানে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এসব বন্ধ করার জন্য। দেহের ত্বক ফরসা করার আশায় এবং নানা জটিল রোগের অব্যর্থ ওষুধ হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে এসব তথাকথিত হারবাল সামগ্রী। সে ক্ষেত্রেও বিক্রেতারা কৌশল অবলম্বন করে পুঁজি করে জনচাহিদাকে। শীতকালে হাঁপানি রোগ বেশি হয়, আর সেই ভয়ের সুযোগটিকে কাজে লাগায় তারা। যৌন সমস্যার কথা বলেও তারা হারবাল ওষুধ বিক্রি করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে ভায়াগ্রা তৈরি করার কাঁচামাল দিয়েও কিছু যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। আবার ক্ষতিকর স্টেরয়েড দিয়ে তৈরি হচ্ছে হাঁপানির ওষুধ। ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার সম্ভব না হলেও এসব হারবাল নামীয় ক্ষতিকর সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এসব ক্ষতিকর সামগ্রীর বিজ্ঞাপন চোখে পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের সংবাদ কালেভদ্রেও চোখে পড়ে না।
হারবাল ওষুধের নামে ক্ষতিকর প্রসাধন কিংবা ওষুধগুলো যাতে বাজারে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, সরকারি উদ্যোগে এসব প্রসাধন কিংবা ওষুধ ব্যবহার না করার জন্য প্রচার চালানোও উচিত। যারা ক্রিমের সঙ্গে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বাজারে ছাড়ছে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.