হিলি স্থলবন্দরে পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে ৩৩ কোটি টাকা ঘাটতি

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরে চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ২৩ কোটি ৭২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই স্থলবন্দরটির জন্য নির্ধারিত ৫৬ কোটি ৯২ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার টাকা কম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই বন্দর দিয়ে খৈল, ভুসি, পেঁয়াজ, ভুট্টা এবং কিছু ক্ষেত্রে মোটর ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানি হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মাঝে মধ্যে চিটাগুড় ও ইট রপ্তানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক বছর আগেও এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক দেশে ঢুকত, যা এখন কমে ১০-১৫টিতে নেমেছে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নিযুক্ত প্রাক-জাহাজিকরণ পরিদর্শনকারী বা পিএসআই সংস্থা আমদানিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও দেশে আসার পর কাস্টমস কর্মকর্তারা তা মানতে চান না। তাঁরা নতুনভাবে ওই পণ্যের দাম পুনর্নির্ধারণ করে রাজস্ব নির্ধারণ করেন। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগের সুরে একই তথ্য জানালেন বন্দরের ব্যবসায়ী মো. মুশফিকুর রহমান চৌধুরী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রাইম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিনুর ইসলাম, বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক মো. আলতাফ হোসেন এবং ঢাকার বংশালের সাইকেল আমদানিকারক আবদুল আজিজ ও নারায়ণগঞ্জের আমদানিকারক নবীউল্লাহ।
বন্দরের শ্রমিকনেতা উমর মল্লিক, গোলাম মুরশীদ, নুরল মল্লিক অভিযোগ করেন, একটি মহলের চক্রান্তের কারণে বন্দরটি দিন দিন আমদানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এতে বন্দরের পাঁচ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা চালুর লক্ষ্যে ১৯৮৫-৮৬ সালে হিলি শুল্ক স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকে ১৯৯৬ সালে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০৫ সালে বন্দরটির পরিচালন কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ২৫ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে দায়িত্বটি পায় পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেড। ২০০৭ সালের ২৬ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে হিলি যাত্রা শুরু করে।
পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানান, ২০০৭ সালে এই বন্দরে পুরোদমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হলেও এখন তা স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে তিন বছরেও তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেনি। বরং ১৫ কোটি টাকার মতো লোকসান দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বন্দরের কাস্টমস উপকমিশনার আবদুল মান্নান সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএসআই সংস্থা কর্তৃক পণ্যের দাম সঠিক না হলে সে ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তারা সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। যদি কখনো এমন জটিলতা দেখা দেয়, তখন যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান করে পণ্যটি খালাস করা হয়ে থাকে। এতে কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা হয় না। কোনো কোনো ব্যবসায়ী অন্যায় সুবিধা পান না বলে এমন অভিযোগ করতে পারেন।’

No comments

Powered by Blogger.