পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্যগুলোর বিক্রি হ্রাস

দেশে পরিবার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্যান্য সঞ্চয়পত্র আর মেয়াদি বন্ড বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদি বন্ড বিক্রি হয়েছে, তার প্রায় ৮৫ শতাংশই এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরিবার সঞ্চয়পত্র চলতি অর্থবছর থেকে চালু হয়েছে। তাই আগে বিক্রি হওয়ার বিপরীতে মূল উঠিয়ে নেওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে। আবার এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, জুলাই-অক্টোবর সময়কালে সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদি বন্ডের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকেই এসেছে এক হাজার ৬৩১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ওই সময়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করার মাধ্যমে গ্রাহকদের মূল ফেরত দেওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকেই নিট বা প্রকৃত বিক্রি ধরা হয়।
তবে সুদের অর্থ পরিশোধ করতে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের সুদ পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে সাত হাজার ৭৫ কোটি টাকা। জুলাই-অক্টোবর মাসে সুদ বাবদ পরিশোধের পরিমাণ এক হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এই সময়কালে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও তিন বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ডের নিট বিক্রি ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। অর্থাৎ এসব সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে এই সময়ে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মূল অর্থ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে ছয় হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও বন্ড বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে মূলধন ওঠানো হয়েছে চার হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এতে নিট বিনিয়োগ বা বিক্রি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।
আর ২০০৯-১০ অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ও বন্ড বিক্রি করে সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
সঞ্চয় পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সুদের হার কমানোর ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন আর সঞ্চয়পত্র কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। অনেকে বিনিয়োগ উঠিয়ে স্বল্প সময়ে লাভের আশায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এ ছাড়া বন্ডে পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা রহিত করা ও সুদের হার কমানোর ফলে এ খাত থেকেও সম্পদ আহরণের গতি কমে গেছে।
সঞ্চয় পরিদপ্তরের চার মাসের বিক্রি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চার মাসে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬৪১ কোটি টাকার। আর চার মাসে এই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ কোটি টাকা। সারা বছরে পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা, যা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৭২ কোটি টাকার আর ২০৯ কোটি টাকার মূল পরিশোধ করা হয়েছে। এতে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছর থেকে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। শুধু মূল পরিশোধ হচ্ছে। চার মাসে মূল পরিশোধ হয়েছে ১৭১ কোটি টাকা।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক হাজার ১১০ কোটি টাকা আর মূল পরিশোধ করতে হয়েছে এক হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। বেশি মূল পরিশোধ করায় সঞ্চয় পরিদপ্তরকে বাড়তি ৬২০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর পরিচালিত বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, তিন বছর মেয়াদি জাতীয় বিনিয়োগ বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড—এই পাঁচটি বন্ডের নিট বিক্রি হয়েছে ৮২ কোটি টাকা। জুলাই-অক্টোবর মাসে ৩৫৯ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে। আর মূল পরিশোধ হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.