নতুন ও অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের চাপে দেশের শেয়ারবাজার

দেশের শেয়ারবাজার এখন দারুণ চাঙা। সূচক বাড়ছে প্রায় প্রতিদিনই। নতুন বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ লাভের আশায় তাঁদের সমস্ত পুঁজি নিয়ে এখন ঢুকে পড়ছেন শেয়ারবাজারে। যে কারণে এশিয়ার অন্যান্য বাজারের চেয়ে দাম-আয় অনুপাত অনেক বেশি হলেও কোনোভাবেই দেশের শেয়ারবাজারের রাশ টানতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। ফলে প্রতিদিনই উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া তাদের যেন আর কোনো কিছুই করার থাকছে না।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম লেনদেন দিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৮৯১৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে উঠেছে। এদিন ডিএসইতে মোট লেনদেন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) চলছে একই অবস্থা।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দেশের পুঁজিবাজারে এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারীর সমাগম ঘটছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হিসাবমতে, গতকাল ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৬০ হাজার ৩৮১ জন। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে সিডিবিএল সূত্র জানায়।
এর আগে গত বুধবারও ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ১২১ পয়েন্টের মতো বেড়ে আট হাজার ৭২৩ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড করে। এভাবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে দফায় দফায় মূল্যসূচক ও মোট লেনদেন বেড়ে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার এ প্রসঙ্গে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি অতিমূল্যায়িত বাজার। এই অবস্থায় দাম আরও বাড়তে থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। সে কারণে এসইসি বিনিয়োগকারীদের প্রতিদিনই সতর্কভাবে বিনিয়োগের আহ্বান করছে।
দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতনের বা ধসের সর্বশেষ ইতিহাস দেখা যায় ১৯৯৬ সালে। সে সময়েও বাজার ছিল অতিমূল্যায়িত এবং অনেক অনভিজ্ঞ ও নতুন বিনিয়োগকারী হঠাৎ লাভের আশায় বাজারে সক্রিয় ছিল। শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ সালের সেই ধসের কারণে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই তাঁদের পুঁজির প্রায় সর্বস্বই হারিয়েছিলেন। অনেকে এখনকার শেয়ারবাজারে ’৯৬-এর ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চাঙা শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা না রেখে এসইসি এখন চেষ্টা করছে বাজার নিয়ন্ত্রণের। সূচক ও লেনদেন নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে এসইসি সম্প্রতি শেয়ারবাজারে মধ্যস্থতাকারী বা পুঁজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাজারে গত কয়েক মাসে যেসব বড় লেনদেন হয়েছে সেগুলো নিয়েও তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। বিভিন্ন কোম্পানির দাম বাড়ার সঙ্গে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কোনো হাত আছে কি না, সেটিও তারা যাচাই করে দেখছে।
অ্যাসেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস অব বাংলাদেশের (এইমস) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াওয়ার সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে দেশের শেয়ারবাজারে যে উল্লম্ফন হয়েছে, সেটাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যাবে না। বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের যে ভিত্তি, তার সঙ্গে বর্তমান সূচক খাপ খায় না।’
ইয়াওয়ার সাঈদ আরও বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করাকে অনেকে এখন কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ মনে করছেন। তাই শেয়ারবাজারে নতুন নতুন টাকা আসছে। তা ছাড়া এখানে ঢোকা ও বের হওয়া সহজ। উদ্যোক্তা কে তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তা ছাড়া লাভের ওপরও কোনো কর দিতে হয় না। ফলে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে পারছে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ২৪৫টি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন হয়। এর মধ্যে দাম বাড়ে ৯৭টির, কমে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত থাকে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিন বিমা খাতের শেয়ারের দর তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে। এই খাতের ৪৪টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৫টির। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২১টির মধ্যে ১২টির ও ব্যাংক খাতের ৩০টির মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ে।

No comments

Powered by Blogger.