বর্তমান ধারায় বাড়লেও বিনিয়োগের ঘাটতি হবে তিন লাখ কোটি টাকা

আগামী পাঁচ বছরের মাথায় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আট শতাংশে উন্নীত করতে হলে পাঁচ বছরে মোট ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত বার্ষিক গড় বিনিয়োগের পরিমাণ হতে হবে তিন লাখ ছয় হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।
কিন্তু গত ১০ বছরের বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে প্রবণতা, তা যদি বজায় থাকে তাহলে আগামী পাঁচ বছরে মোট বিনিয়োগ হবে প্রায় ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তার মানে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রায় তিন লাখ ৪৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘাটতি রয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো ২০১১-২০১৫’ অনুসারে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের যে অর্থনৈতিক হালনাগাদবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে এ হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি গত ১০ বছরের জিডিপি ও বিনিয়োগ-প্রবণতা বিশ্লেষণ করে এ হিসাব দিয়েছে।
উন্নয়ন অন্বেষণের হিসাব অনুসারে, কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আগামী পাঁচ বছর গড়ে প্রায় ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ হারে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। অথচ গত ১০ বছরের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির বার্ষিক গড়হার ছিল ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই ১০ বছরের মধ্যে শুধু ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।
এই বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন খুবই চ্যালেঞ্জের বিষয় বলে মনে করছে উন্নয়ন অন্বেষণ।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জিডিপিতে বিনিয়োগের হার এখন ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। সরকার এই হার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মধ্যে ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে।
কিন্তু বিনিয়োগ এই হারে উন্নীত করতে হলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা বর্তমানের প্রবাহ অব্যাহত থাকলে, পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় ২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বিনিয়োগ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ২০১৫ সালের মধ্যে স্থির মূল্যে (১৯৯৬-৯৭) জিডিপির পরিমাণ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে আগামী পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় তিন লাখ ছয় হাজার ৫৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ পুঞ্জীভূত করার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ হলো অন্যতম হাতিয়ার। কারণ গত পাঁচ বছরে মোট বিনিয়োগের গড়ে প্রায় ৭৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল বেসরকারি বিনিয়োগ। আর বেসরকারি বিনিয়োগের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
অন্যদিকে মোট বিনিয়োগে সরকারি অংশও ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। অথচ এমটিএমএফের প্রক্ষেপণ অনুসারে বেসরকারি বিনিয়োগের মোট পরিমাণ পাঁচ বছরে ১২ লাখ নয় হাজার ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে।
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, যদি এই লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির বার্ষিক হার আগামী পাঁচ বছরে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশের কাছাকাছি রাখতে হবে। এ জন্য আবার প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।
কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য গত অর্থবছরে নেওয়া তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি বলে উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারের (পিপিপি) মাধ্যমেও গত বছর কোনো বিনিয়োগ হয়নি।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ‘সহজে ব্যবসা করার বিশ্বসূচক- ২০১০’ এ বাংলাদেশের অবস্থান নেমে গেছে ১১৯তম স্থানে, যা ২০০৯ সালে ছিল ১১৫তম।
উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, ‘বিনিয়োগ যদি যথাসময়ে আকৃষ্ট করে তা কাজে লাগানো না যায় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট সুবিধা নিশ্চিত করা না যায়, তবে জিডিপির কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন কখনোই সম্ভব নয়।’

No comments

Powered by Blogger.