পর্দা উঠছে চ্যাম্পিয়নস লিগের

দু-তিনটি করে ম্যাচ গড়াতেই জমে উঠেছে স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ইতালিয়ান সিরি ‘আ’। চলছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। কিন্তু তার পরও ইউরোপের নতুন ফুটবল মৌসুমে কী যেন অভাব ছিল। অভাবটা আসলে চ্যাম্পিয়নস লিগের। ইউরোপের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে এক লিগের সেরা দলগুলো সত্যিকারের বিশ্বজনীন (সারা বিশ্ব থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহের বিবেচনায়) আবেদন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না নামলে হয় নাকি! হ্যাঁ, আজ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের সূচনা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগুনই ছড়িয়ে দেবে।
সূচনা পর্বে সবচেয়ে বড় ম্যাচটি অবশ্য আগামীকাল—যাতে মুখোমুখি সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ও আয়াক্স আমস্টারডাম। গতবারের রানার্সআপ বায়ার্ন মিউনিখ বনাম সিরি ‘আ’ রানার্সআপ রোমার ম্যাচটি নিয়েও বাড়তি আগ্রহ থাকবে সবার।
আজ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলান নতুন কোচ রাফায়েল বেনিতেজের হাত ধরে শুরু করে দিচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। প্রতিপক্ষ নবাগত ডাচ দল এফসি টুয়েন্টে। নিজেদের মাঠে খেলা, তার পরও গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ী ইন্টারের সামনে কি আর বাধা হবে টুয়েন্টে! এই ‘এ’ গ্রুপেরই আরেক ম্যাচে মুখোমুখি সাবেক চ্যাম্পিয়ন ভেরডার ব্রেমেন ও নবাগত টটেনহাম হটস্পার। ‘সি’ গ্রুপে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-গ্লাসগো রেঞ্জার্সের ম্যাচটির একটা বাড়তি তাৎপর্য আছে। স্কটিশ যোগসূত্র। ম্যানইউ কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন কৈশোরে ছিলেন রেঞ্জার্সের সমর্থক, খেলেছেনও এই ক্লাবের হয়ে। লড়াইটা দুই বন্ধুরও। রেঞ্জার্সের কোচ ওয়াল্ডার স্মিথ ফার্গুসনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ২০০৩-০৪ মৌসুমে কিছু দিনের জন্য ম্যানইউতে ফার্গুসনের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। ইংলিশ-স্কটিশ চির বৈরিতার কাছে সেই বন্ধুত্ব অবশ্য আজ ছুটি নেবে। তবে এটা এমন কিছু নয়, শুরুর দিন আসল আগুনটা দেখবে বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্প।
আগুন আসলে জ্বলছে বার্সেলোনার মনের মধ্যে। এমনিতে ‘ডি’ গ্রুপে গ্রিক চ্যাম্পিয়ন প্যানাথিনাইকসের পাত্তা পাওয়ারই কথা নয় স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন বার্সার কাছে। অতীতের দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাস তা-ই বলে। ২০০২ কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলে বার্সার কাছে হেরেছিল প্যানাথিনাইকস। ২০০৫ সালের গ্রুপ পর্বে নিজেদের মাঠে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ন্যু ক্যাম্পে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৫-০ গোলে।
২০০৫ থেকে ২০১০। পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বছর। এই সময়ে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করেছে বার্সা। প্যানাথিনাইকস বলতে গেলে একই রকম আছে। তা হলে ওই আগুন-টাগুন আসছে কোত্থেকে? আসছে স্প্যানিশ লিগে গত শনিবারের অঘটনের কারণে। হারকিউলিস নামের নবাগত এক দল ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে ২-০ গোলে হারিয়ে স্তম্ভিত করে দিয়েছে ক্লাব ফুটবলের পৃথিবীকে। বিশ্বজয়ী স্পেনের আটজন খেলোয়াড়ের ঠিকানা যে দল, যে দলে রয়েছেন গতবারের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় মেসি, সেই বার্সাই কিনা দায়িত্ব নিয়ে নিল হারকিউলিস নামের সার্থকতা প্রমাণের! আজ সেই রাগটাই প্যানাথিনাইকসের ওপর ঢালার কথা বার্সার। বার্সার ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক দানি আলভেজ অবশ্য এটাকে হালকা করেই দেখাতে চাইলেন, ‘মৌসুমটা কীভাবে শুরু হলো, এর চেয়ে কীভাবে শেষ হলো সেটিই আসল। ক্লাবের সফলতম মৌসুমেও (২০০৯) আমাদের খুব সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু সেবার আমরা খুব ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
আলভেজ যে ২০০৯ সালের কথা বলছেন, ওই মৌসুমে লিগের শুরুর দিকের এমন হতাশা মুছে বার্সেলোনা শুধু লিগ, কিংস কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রেবলই জেতেনি, জিতেছিল মোট ৬টি শিরোপা। বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলা হারকিউলিসের কাছে পরাজয়ের পর বলেছেন, ‘আমরা আমাদের মধ্যে ছিলাম না। তবে চিন্তার কিছু নেই আমাদের। শুধু আমাদের উন্নতি করতে হবে।’ বার্সার এই ‘উন্নতি’ প্রমাণের হাড়িকাঠেই তাহলে আজ মাথা দিচ্ছে প্যানাথিনাইকস?

No comments

Powered by Blogger.