শেয়ারবাজারে লেনদেন অনেক কম হয়েছে

টানা চার দিন ঈদের ছুটির পর গতকাল সোমবার থেকে দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন আবার চালু হয়েছে। কিন্তু লেনদেন চালু হলেও শেয়ারবাজারে ঈদের রেশ এখনো কাটেনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনো কাজে যোগ দেননি।
হাতেগোনা যে কজন বিনিয়োগকারী উপস্থিত ছিলেন, তাঁরাও লেনদেনের পাশাপাশি সময় কাটিয়েছেন পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও (এসইসি) ছিল প্রায় একই চিত্র। কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দেননি। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও অলস সময় কাটিয়েছেন।
ডিএসইর একজন সদস্য জানান, গতকাল ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতির হার ছিল অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তবে অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে লেনদেনের কাজটি ঠিকই সেরে নিয়েছেন।
এদিকে ছুটির আগে শেষ দিনের মতো গতকালও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই লেনদেন ও মূল্যসূচকে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান দুটি সূচক গতকাল কমেছে। তবে অপেক্ষাকৃত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-২০ ও সিএসই-৩০ সূচক বেশ খানিকটা বেড়েছে। আর লেনদেনের পরিমাণ কমেছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঋণসুবিধাবহির্ভূত শেয়ারে আর্থিক সমন্বয় সুবিধা বা নেটিং ফ্যাসিলিটি বন্ধের এসইসির নির্দেশ গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ঋণসুবিধাবহির্ভূত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে লেনদেন নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত বিক্রিলব্ধ টাকা দিয়ে অন্য কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে না। তার মানে, শেয়ার বিক্রির পর ঋণসুবিধাবহির্ভূত শেয়ার কিনতে একজন বিনিয়োগকারীকে কোম্পানিভেদে চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ কারণে এ ধরনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল তুলনামূলক কম। যা শেষ পর্যন্ত সূচক ও লেনদেনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের কম উপস্থিতিও লেনদেন কমার একটা বড় কারণ।
বাজার পরিস্থিতি: ডিএসইতে গতকাল সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে মাত্র ১০ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৭৯৬ পয়েন্টে নেমে আসে। আর সার্বিক মূল্যসূচক ১২ পয়েন্ট কমে হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০২ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা কম।
সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ৪২ পয়েন্ট কমে ২০ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেন হয়েছে প্রায় ৯২ কোটি টাকার শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০০টির, কমেছে ৬৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল তিনটি কোম্পানির দাম।
ছুটির আমেজে থাকা লেনদেন দিবসেও বাজারে ছড়িয়ে পড়ে গুজব। গুজবটি ছিল, শেয়ারের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এসইসি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেয়ারের বাজার মূল্য ও প্রকৃত সম্পদ মূল্যের (এনএভি) নিয়ম মেনে চলার যে কড়াকড়ি আরোপ করেছে সেটি কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হতে পারে।
যদিও দিন শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এর কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গতকাল থেকে শেয়ারবাজারের লেনদেনের সময়সূচি আবার আগের নিয়মে ফিরে গেছে। বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত একটানা চার ঘণ্টা লেনদেন চলেছে। রোজা উপলক্ষে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। ফলে পুরো রোজার মাস প্রতিদিন চার ঘণ্টার পরিবর্তে তিন ঘণ্টা করে লেনদেন হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.