ম্যারাডোনা ঘামছেন

যাঁরা ফেয়ার প্লের কথা বলেন, তাঁদের বলি, শুধু এক দল ভালো ফুটবল খেললে হবে না, রেফারিদেরও ফেয়ার প্লে ব্যাপারটা বুঝতে হবে।
১৯৯০ সালে ফেয়ার প্লে শুরু হওয়ার পরই ক্যামেরুনের এক খেলোয়াড় আমাকে লাথি মেরেছিল, সেটিও প্রায় মাথায়।
এখন পর্যন্ত আইভরিকোস্ট ও পর্তুগালকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ওরা ব্রাজিলের সঙ্গে ভালোই লড়াই করবে। দেখি, ব্রাজিল কেমনভাবে ব্যাপারটা সামলায়।
এত কম সময়ের নোটিশে কোচ পরিবর্তন করাটা ভালো না। আমি তাঁর (নাইজেরিয়া কোচ লেজারব্যাক) মঙ্গল কামনা করি। কিন্তু ও তো কোচ হিসেবে দল নিয়ে কাজ করার সুযোগই পায়নি।
কাল সংবাদ সম্মেলনে তিন পক্ষকেই একহাত নিলেন তিনি। বুঝতেই পারছেন মানুষটি কে। হ্যাঁ, ডিয়েগো ম্যারাডোনা। আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় জোহানেসবার্গে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবেন। তার আগেই শুরু করে দিলেন প্রত্যাশিত ‘কথার অভিযান’!
প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া বলে আফ্রিকানদের শারীরিক ফুটবলের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ফেয়ার প্লে’ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। খেলার আগেই মানসিক খেলা শুরু করে দেওয়ার জন্যই কি না, প্রতিপক্ষ কোচকে নিয়েও কথা বললেন। বললেন, লেজারব্যাক সময় না পাওয়ায় দল খুব ভালো করার কথা না। মাঝে একটু খোঁচা দিলেন ব্রাজিলকেও, আগের দিনই যে পেলে আর্জেন্টিনাকে গোনার মধ্যেই ধরেননি!
এখানেই থেমে থাকেননি। নিজের প্রথম একাদশ সম্পর্কে আগাম ধারণাও দিয়ে রেখেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, কার্লোস তেভেজ থাকছেন। কিন্তু এতসব কথার ভিড়ে সবচেয়ে বেশি কথা বললেন লিওনেল মেসিকে নিয়ে।
মেসিকে নিয়ে বড় বড় কথা দলের দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন ম্যারাডোনা। এর মধ্যেই মেসিকে ‘ছিয়াশির ম্যারাডোনা’র চেয়ে এগিয়েও রেখেছেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে আরেকবার ঘোষণা দিয়ে দিলেন, মেসির পক্ষে তাঁর কীর্তি ছোঁয়া সম্ভব, ‘১৯৮৬ সালে আমি যা করেছিলাম, ও তেমন কিছু করলেই আমার ভালো লাগবে। পুরো দলই এবার মেসিকে সাহায্য করবে। ওকে শুধু তুলির শেষ আঁচড়টা দিতে হবে।’
ম্যারাডোনার এসব কথায় কি মেসির ওপর চাপটা বেড়ে যাচ্ছে? সমস্যা নেই। সতীর্থরা মেসির পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। আগের দিন গ্যাব্রিয়েল হেইঞ্জ বলেছেন; কাল হুয়ান ভেরন, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ারা বললেন—মেসির একার ওপর তাঁরা চাপ দিতে চান না।
অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের ‘নেতা’ ভেরন বলছেন, ‘দলে আমরা ২৩ জন। প্রত্যেককেই দায়িত্বের ভাগ নিতে হবে। একা কারও ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না আপনার। তা সে যত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ই হোক।’ অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ভেরনের মতো অভিজ্ঞ নন; বয়স মেসির মতোই ২২। তার পরও মেসির ওপর চাপ কমাতে বলছেন এই তরুণও, ‘লিওর সঙ্গে দলে থাকাটা বিস্ময়কর। সে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। কিন্তু আমাদের কিছুতেই উচিত হবে না সমস্ত চাপ তাঁর কাঁধে দেওয়া।’
চাপ কে কার ওপর দেয়! চাপ তো নিজেই চলে এসেছে। খোদ ম্যারাডোনার ওপরই মনে হয় সবার চেয়ে বেশি চাপ। অন্যদের নিয়ে যতই বড় বড় কথা বলুন, শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলেন, ‘খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় যেমন লাগত, তার চেয়েও বেশি নার্ভাস লাগছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) মাচেরানোকে বলছিলাম, আমার হাত ঘামছে।’
তা তো লাগবেই। আরেকটা শুরু বলে কথা। এএফপি।
আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া
গঞ্জালো হিগুয়েইন
নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন লিওনেল মেসি, অন্যদের অসাধারণ সব কীর্তিকেও মনে হয় সাধারণ। না হলে হিগুয়েইনের যা ফর্ম, তাতে আলোটা তাঁর ওপর আরও বেশিই থাকার কথা। মেসিকে নিয়ে প্রতিপক্ষের অতি সতর্কতার ফাঁকে আর্জেন্টিনার নায়ক হয়ে উঠতে পারেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এ মৌসুমে ২৯ গোল করা স্ট্রাইকার।
ভিক্টর ওবিন্না
গতি আর ক্ষিপ্রতা মিলিয়ে দারুণ ভয়ংকর উইঙ্গার। মাঠের পারফরম্যান্সে প্রতিশ্রুতির পুরোটা এখনো ঠিক প্রতিফলিত হয়নি, তবে নিজেকে মেলে ধরতে ভিক্টর ওবিন্না বেছে নিতে পারেন এই বড় মঞ্চকেই। আর্জেন্টাইন ডিফেন্সের জন্য আজ বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন এই ২৩ বছর বয়সী।

No comments

Powered by Blogger.