পারল না ভারত

জিতলেই আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল—ভারতের সামনে এমনই দারুণ সুযোগ ছিল কাল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ জিতে সে সুযোগটা নিতে পারেনি মহেন্দ্র সিং ধোনিরা। কাল মোহালিতে ২৪ রানে হেরে গেছে তারা। ম্যাচ জিতে ৭ ওয়ানডের সিরিজে ২-২-এ সমতা ফিরিয়ে এনেছে অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার ২৫০ রান তাড়া করতে এসে ভারত অলআউট হয়েছে ২২৬ রানে। শুরুটা অবশ্য ঝড়ের গতিতেই হয়েছিল ভারতের। বীরেন্দর শেবাগের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ৫ ওভারেই ৪০ রান তুলে ফেলেছিল তারা। শেবাগ পেটাচ্ছেন, উইকেটের অন্য প্রান্তে দেখে-শুনে খেলছেন শচীন টেন্ডুলকার—এ অবস্থা অবশ্য আর বেশি সময় থাকেনি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩০ রানে শেবাগকে ফিরিয়ে দেন বলিংগার। ৮ রানে উইকেটে থাকা টেন্ডুলকারের সঙ্গে যোগ দেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৮ রান করে কোহলি (১০) আউট হয়ে গেলে চাপটা এসে পড়ে টেন্ডুলকারের ঘাড়ে। বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক ‘প্রথম’-এর জন্ম দেওয়া টেন্ডুলকারের সামনে এদিন ছিল আরেকটি মাইলফলকের হাতছানি। ৪৭ রান করলেই ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এদিনই ১৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতেন। কিন্তু এই মাইলফলক থেকে ৭ রান দূরে থাকতেই অশোকা ডি সিলভার বাজে এক এলবিডব্লু সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে ফিরে যান ‘ব্যাটিং মায়েস্ত্রো’ (৪০)।
টেন্ডুলকারের বিদায়ের পর ভারতীয় ইনিংসে বড় একটা জুটির প্রয়োজন ছিল। তবে সেটা দলকে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন যুবরাজ (১২), ধোনি (২৬), রায়না (১৭), জাদেজা (৭)। আট নম্বরে উইকেট এসে হরভজন সিং ভারতকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ২৫ বলে ৫টি চার ও ১টি ছয়ে তিনি ৩১ রান করে ওয়াটসনকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে পড়ে ভারত।
আগের ম্যাচ ও এ ম্যাচের উইকেটে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কোটলার মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটের তুলনায় মোহালির উইকেট তো স্বর্গ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস অনুসরণ করল দিল্লির চিত্রনাট্যই—টপ অর্ডারের কল্যাণে পাওয়া দারুণ অবস্থানটা শেষ ওভারগুলোতে হলো বিসর্জন। ২৮০ তো অবশ্যই, একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া ৩০০ রান পেতেই পারে। কিন্তু রিকি পন্টিংয়ের দল অলআউট ২৫০ রানে।
প্রথম তিন ম্যাচে ব্যর্থ অ্যাডাম ভোগসের বদলে দলে এসেছিলেন শন মার্শ, কিন্তু ব্যর্থ তিনিও। তবে ফর্মে থাকা পন্টিং এদিনও ছিলেন স্বরূপে। প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক পুলে চার মেরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ফর্মটা এ ম্যাচেও বয়ে এনেছেন। ফিফটির পর পরই পন্টিংকে থামিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে বাঁহাতি স্পিনে নয়, দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। ওয়াটসনের সঙ্গে পন্টিংয়ের ৬৪ রানের জুটিটা অবশ্য ভেঙেছে আগেই। হাফ সেঞ্চুরির মাত্র ১ রান আগে হরভজন সিংয়ের বলে কট বিহাইন্ড ওয়াটসন। এই দুজনের বিদায়ের পর আরেকটি কার্যকরী জুটি (৭৩) গড়েছিলেন ফর্মে থাকা মাইক হাসি ও ক্যামেরন হোয়াইট। ৩৮ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৬, অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টি তখন নিশ্চিতভাবেই ৩০০ রানের দিকে। কিন্তু এর পরই বেদিশা হয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস।
যুবরাজের শেষ ওভারের প্রথম বলেই আউট হাসি। আগের ওভারেই একটি ছক্কা মেরেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনারকে, আরেকটি মারতে গিয়েই বিপত্তি। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পতনের শুরুটাও এখান থেকেই। স্লগ ওভারে ভারতীয়দের আঁটসাঁট বোলিং আর অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের বাজে শট নির্বাচন মিলে ৫৪ রানেই নেই পন্টিংদের শেষ ৭ উইকেট। তবে অস্ট্রেলিয়াকে আড়াই শতে বেঁধে রাখতে বড় ভূমিকা আছে ভারতের ফিল্ডিংয়েরও। চার ব্যাটসম্যান রান আউটের শিকার। ব্যাটিং ‘পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলতে পেরেছে মাত্র ২৭ রান, উইকেট হারায় ৫টি।

No comments

Powered by Blogger.