ঢাকার ক্রিকেটে মোহাম্মদ ইউসুফ

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিসিবির পুরোনো অফিসে দুপুরেই খবর পৌঁছে যায়, মোহাম্মদ ইউসুফ আসছেন। আগের সেই দিন থাকলে গোটা স্টেডিয়াম এলাকাতেই সাড়া পড়ে যেত। কিন্তু কাল দুপুরে ঢাকায় পৌঁছে সন্ধ্যা নাগাদ পাকিস্তানের তারকা ব্যাটসম্যান যখন বিসিবিতে এলেন, সাংবাদিকদের ছোটখাটো জটলা আর বিসিবির কর্মীদের উপস্থিতির বাইরে তেমন কিছু চোখে পড়ল না।
ঢাকা মেট্রোপলিশ ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রথমে নেওয়া হলো মোহাম্মদ ইউসুফকে। ৯০ টেস্টে ৫২ গড়ে ৭৫৩০ রানের মালিক এখানে এসে জানান দিলেন, প্রথমবারের মতো ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেটে খেলছেন তিনি। দলের নাম ঢাকা মোহামেডান।
প্রিমিয়ার ক্রিকেটে গতবারের শিরোপা ধরে রাখতেই যে ইউসুফকে এনেছে মোহামেডান, তা না বললেও চলছে। কালই সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক ও খালেদ মাসুদকে প্রধান কোচ কাম ক্রিকেটার হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে মোহামেডান। সাদা-কালোরা দুটি ম্যাচ খেলে একটি জিতেছে, অন্যটি হয়েছে টাই। আজ বিকেএসপিতে সূর্যতরুণের সঙ্গে তৃতীয় ম্যাচ। ইংল্যান্ডের মঈন আলী প্রথম থেকেই খেলছেন। দ্বিতীয় বিদেশি হিসেবে আজ থেকেই নামছেন মোহাম্মদ ইউসুফ।
মুখভর্তি দাড়ি। টি-শার্টের ওপর সোয়েটার। মাগরিবের আজান ততক্ষণে হয়ে গেছে। পাশের কক্ষে নামাজ পড়তে ইউসুফের জন্য জায়নামাজ প্রস্তুত। ঠিক তার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন। তবে শুরুতেই ‘প্লিজ, এই লিগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না’—অনুরোধ রেখে নিজেকে রাখলেন বিতর্কিত প্রসঙ্গের বাইরে।
‘বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কোনো ধারণা নেই। তবে ক্রিকেট ইজ ক্রিকেট’—প্রথম প্রশ্নের জবাবটা যেন ভেবেই রেখেছিলেন ৪১.৭০ গড়ে ২৮৮ ওয়ানডেতে ৯৭২০ রান করা মোহাম্মদ ইউসুফ। সম্পূরক প্রশ্নে এরপর জবাব আসে, ‘দুটি ম্যাচ দেখি। তারপর এখানকার পিচ-খেলার মান সবই আঁচ করতে পারব।’
কটি ম্যাচ খেলার জন্য এসেছেন? ‘যদি পাকিস্তান দল থেকে ডাক না পাই, তাহলে পুরো লিগই খেলব আশা করি’—জানালেন ইউসুফ। এও বললেন, ‘বিশ্বকাপের জন্য এটা ভালো প্রস্তুতির একটা সুযোগ আমার কাছে।’ পাকিস্তানের প্রাথমিক বিশ্বকাপ দলে থাকলেও বর্তমানে নিউজিল্যান্ড সফররত দলে নেই ইউসুফ। ফিটনেসের কারণেই বাদ পড়েছেন বলে গুঞ্জন। ইউসুফ আপাতত ডাক পান, সেটি অবশ্য চাইবে না মোহামেডান।
মোহামেডানের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের কথা, ‘পুরো লিগই খেলবেন ইউসুফ।’ আর্থিক চুক্তি নিয়ে তারিকুল বল ঠেলেছেন মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের কোর্টে, ‘যা বলার উনিই বলবেন।’ লুৎফর রহমানের ফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
ঢাকার ক্রিকেটে খেলাটা তাঁর নিজের জন্য কতটা উদ্দীপনামূলক? ইউসুফের জবাব, ‘পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য যেকোনো ক্রিকেটই মোটিভেশন।’ মোহামেডানে খেলা কতটা চাপ? ‘শুনেছি এখানে দু-তিনটা টপ টিম আছে। মোহামেডান, আবাহনী...। ক্রিকেট তো আসলে চাপের খেলাই। কথা হলো, আপনি এই চাপ কীভাবে সামলাবেন’—স্বচ্ছন্দেই ব্যাট করলেন ইউসুফ।
ওয়াসিম আকরাম খেলে গেছেন ঢাকার ক্রিকেটে। নিকট অতীতে খেলে গেছেন মিসবাহ-উল-হকরা। ঢাকার ক্রিকেট সম্পর্কে তাঁদের কাছ থেকে কিছু জেনেছেন কি না প্রশ্নে জবাব, ‘সেভাবে না। তবে শুনেছি, এখানকার উইকেটে টার্ন আছে, স্পিনার আক্রমণে আসে দ্রুতই।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা নিয়েও প্রশ্ন হলো এই সুযোগে। ‘গত কয়েকটি সিরিজ থেকে বাংলাদেশ ভালো করছে। তামিম, মুশফিকরা ভালো খেলছে। আশরাফুল, মাশরাফিরা আগে থেকেই ভালো করছে। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়েছে। হারিয়েছে আরও অনেক দলকে। বাংলাদেশ ভালো করবে বিশ্বকাপে’—ইউসুফ নন, যেন বাংলাদেশের এক ক্রিকেট-ভক্তই কথা বললেন।

No comments

Powered by Blogger.