সেরেনা-ক্লাইস্টার্সের মাঝে ওজনিয়াকি

যা করার করেছেন বছরের প্রথমার্ধে। জানুয়ারি থেকে জুন। জুলাই থেকেই তিনি কোর্টের বাইরে। প্রথম ছয় মাসে খুব একটা টুর্নামেন্টে খেলেছেন এমনও নয়। তার পরও মেয়েদের টেনিসের এ বছরে আধিপত্য ছিল সেরেনা উইলিয়ামসের।
বছরটাকে আসলে সমান দুই ভাগে ভাগ করছেন মেয়েদের কোর্টের প্রবীণ ও নবীন দুই খেলোয়াড়। তাতে ৩০ বছর বয়সী সেরেনা থাকছেন, থাকছেন ২০ বছর বয়সী ক্যারোলিন ওজনিয়াকিও। গত নভেম্বরে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন এই ডেনিশ। ওজনিয়াকি অবশ্য গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারেননি এখনো। এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেছিলেন। বছরজুড়ে ধারাবাহিকতার পুরস্কার এই র‌্যাঙ্কিং শ্রেষ্ঠত্ব।
সেরেনা বছরের শেষ ছয় মাস কোর্টে থাকলে কী হতো, বলা মুশকিল। বছরের শুরুটা করেছিলেন ‘কামব্যাক কুইন’ জাস্টিন হেনিনকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে। দুই বছরের অবসর ভেঙে জানুয়ারিতে টেনিসে ফেরেন হেনিন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালেও ভালোই লড়েছিলেন (৬-৪, ৩-৬, ৬-২)। কিন্তু সেরেনার কাছে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি।
খেলাটার প্রতি সেরেনার আত্মনিবেদন অবশ্য বরাবরের মতোই ছিল ছাড়া ছাড়া। অভিনয়, টিভি নাটক, ফ্যাশন থেকে শুরু করে আফ্রিকায় দাতব্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা—সেরেনা টেনিসের বাইরের জগৎটাও উপভোগ করতে ভালোবাসেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনের আগে তাই মাত্র দুটো টুর্নামেন্টে খেলেছেন। লালদুর্গে থেমে গেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ৩০ বছর বয়সে প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ফ্রেঞ্চ ওপেনে চমক দেখান ইতালির ফ্রান্সেসকা শিয়াভোনে।
এর পরই শুরু হয়ে যায় সেরেনা তাঁর সেরাটা পেছনে ফেলে এসেছেন কি না, এমন আলোচনা। সেই আলোচনা থামিয়ে দিয়ে সেরেনা জিতে নেন উইম্বলডন। নামের পাশে যোগ করেন এককের ১৩ নম্বর গ্র্যান্ড স্লাম। পুরো টুর্নামেন্টে জিতেছেন সরাসরি সেটে। ফাইনালে রাশিয়ার ভেরা জনারেভা একদম দাঁড়াতেই পারেননি (৬-৩, ৬-২)।
উইম্বলডনে শিরোপা জয়ের আনন্দ বেশি দিন উপভোগ করা হয়নি। মাত্র কদিন পর মিউনিখের এক রেস্তোরাঁয় ভাঙা কাচের টুকরো ঢুকে যায় তাঁর পায়ের পাতায়। সেরেনা এর পর থেকেই কোর্টের বাইরে। খেলতে পারবেন না জানুয়ারির অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও।
সেরেনার অনুপস্থিতিতে আলো ছড়ান কিম ক্লাইস্টার্স। আগের বছর অবসর থেকে ফিরে ক্লাইস্টার্স জিতে নিয়েছিলেন ইউএস ওপেন। এ বছরও শিরোপা ধরে রেখেছেন বেলজিয়ান ‘টেনিস মম’। এখানেও ফাইনালের স্নায়ুচাপ ভুগিয়েছে ভেরা জনারেভাকে। উইম্বলডন ফাইনালের চেয়েও বাজে খেলেছেন ইউএস ওপেনে, হেরেছেন ৬-২, ৬-১ গেমে। মাত্র ৫৯ মিনিটের ফাইনালটি ছিল ইউএস ওপেনের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম।
বছরের সমাপক টুর্নামেন্ট ডব্লুটিএ চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছেন ক্লাইস্টার্স। এখানেও ফাইনালে উঠে হেরে যান ওজনিয়াকি। অবশ্য এর আগেই নিশ্চিত হয়ে যায়, বছরটা তিনি এক নম্বরে থেকেই শেষ করবেন। ২০০০ সালে মার্টিনা হিঙ্গিসের পর ওজনিয়াকিই সবচেয়ে কম বয়সে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থেকে বছর শেষ করার কীর্তি গড়লেন।
সব মিলে পাওয়া না-পাওয়ার মিশ্র অনুভূতিতে বছরটা কেটেছে ওজনিয়াকির। অবশ্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। উইলিয়ামস বোনদের রাজত্ব একসময় তাঁর হাতেই সমর্পিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার মতো কিংবদন্তি। উইলিয়ামস বোনদের রাজত্ব যে সূর্যাস্তের পথে, এ বছর সেই আলোচনাও হয়েছে বেশ।
ভেনাস যেমন হতাশার একটি বছর কাটিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায়, ফ্রেঞ্চ ওপেনে চতুর্থ রাউন্ড, উইম্বলডনে কোয়ার্টার ফাইনাল, ইউএস ওপেনে সেমি—চার শীর্ষ টুর্নামেন্টেই খালি হাতে ফিরেছেন। বছরটা শেষদিকে হতাশার চাদরে মুড়ে গেছে ইনজুরিতে পড়া হেনিনের জন্যও। আর জোড়া বছরে গ্র্যান্ড স্লাম জেতার (তিনটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন ২০০৪, ২০০৬ ও ২০০৮-এ) কথা মনে করিয়ে দিয়ে যে মারিয়া শারাপোভা ২০১০-এ নতুন শুরুর প্রত্যয় জানিয়েছিলেন, তারও এ বছরে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল তারকা শাশা ভুয়াচিচের সঙ্গে বাগদান!

No comments

Powered by Blogger.