মেসি এবার পারবেন

ডিয়েগো ম্যারাডোনা পারেননি। সার্জিও বাতিস্তা পারবেন?
বাতিস্তা আত্মবিশ্বাসী। লিওনেল মেসির বার্সা-সাফল্য অনূদিত হবে আকাশি-সাদা জার্সিতেও। ‘বার্সার মেসি’কে ‘আর্জেন্টিনার মেসি’ বানিয়ে ফেলার মন্ত্রটাও তাঁর জানা। মেসিকে খেলতে দিতে হবে একেবারে চাপ ছাড়াই, ‘ও অনেকগুলো ভালো ম্যাচ খেলেছে। জাতীয় দলের হয়ে সব সময় নিজের সেরাটাই দেয়। ওর ওপর এভাবে এত বোঝা চাপিয়ে দেওয়াটা আমার কাছে মনে হয় অন্যায়।’
বাতিস্তার হিসাব পরিষ্কার। মেসি যেভাবে খেলে স্বস্তি খুঁজে পাবেন, দলটাকে গড়ে তোলা হবে সেভাবেই, ‘লিওনেল কীভাবে স্বস্তি পায়, আমাদের সেটাই মাথায় রাখতে হবে। কারণ, ও বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। দলে ওকে মানসিকভাবে তরতাজা অবস্থায় পাওয়াটা জরুরি।’
২০০৮-০৯ মৌসুম থেকে বার্সেলোনার হয়ে এ পর্যন্ত ১২৮ ম্যাচে মেসি গোল করেছেন ১১২টি। গোল গড় দশমিক ৮৭। ২০০৮ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ২৮ ম্যাচে মেসির গোল সাতটি। গড় দশমিক ২৫। এমন ব্যবধানের একটাই কারণ খুঁজে পান বাতিস্তা, ‘লিওনেলকে নানামুখী চাপে পিষ্ট করে রাখা হয়েছে। ওকে দলের ত্রাণকর্তা হিসেবেও দেখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ও যেন একদমই চাপে না ভোগে। জাতীয় দলে খেলতে এলে ও যাতে চাপমুক্ত থেকে সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন-জীবন উপভোগ করে, আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমরা কোনো খেলোয়াড়কেই চাপ টের পেতে দিতে চাই না। আমরা নিশ্চিত, খেলোয়াড়েরা এতেই স্বস্তি বোধ করে।’
আর্জেন্টিনা ও বার্সেলোনার খেলার ধরন একই। এটা তাঁর দলের জন্য সুবিধাই করে দেবে বলে মনে করেন বাতিস্তা। তার মানে এই নয়, পেপ গার্দিওলাকে অন্ধ অনুকরণ করবেন, ‘আমার নিজের ফুটবল-দর্শন আছে। আমি বার্সেলোনার খেলা পছন্দ করি। আমি আত্মবিশ্বাসী, আর্জেন্টিনা ওদের মতো খেলতে পারবে।’
মেসিকে ছন্দ খুঁজে পাওয়ার আগে ৪৮ বছর বয়সী বাতিস্তার প্রথম কাজ হবে ম্যারাডোনার বলয় থেকে দলকে বের করে নিয়ে আসা। স্পেন আর ব্রাজিলের মতো দুই শক্ত প্রতিপক্ষকে হারানো বাতিস্তা এরই মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর জীবনবৃত্তান্তে একটাই লাল দাগ—জাপানের বিপক্ষে পরাজয়।
বাতিস্তার ওপর আস্থা রাখাই যায়। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য কিন্তু ফলাফলের চেয়েও বেশি তৃপ্ত যেভাবে কাজ করতে চান সেটার পেছনে দলের সবার নিরঙ্কুশ সমর্থন দেখে। বাতিস্তা সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছেন মেসির কাছ থেকেই। ম্যারাডোনার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে আর্জেন্টাইন ফুটবল সংস্থা যখন অনেকের চোখেই খলনায়ক, সেই সময় সংবাদমাধ্যমে মেসি সমর্থন দিয়েছেন বাতিস্তাকে।
বাতিস্তা-মেসি জুটি সাফল্য-বুভুক্ষু আর্জেন্টিনাকে এখন আশার গান শোনাচ্ছে। সর্বশেষ সাফল্য ২০০৮ অলিম্পিক সোনা এসেছিল এই বাতিস্তার হাত ধরেই। জাতীয় দলের হয়ে মেসির গোল-হাহাকারও ঘোচার আভাস মিলেছে। সর্বশেষ তিন ম্যাচে করেছেন দুটো গোল। তবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা দেশের মাটিতে আগামী বছরের কোপা আমেরিকা। বাতিস্তা অবশ্য ‘মেসির নিজেকে প্রমাণের কিছুই নেই’ বলে এখনই চাপটা সরিয়ে রাখলেন।

No comments

Powered by Blogger.