রাজনীতিতে সমঝোতা কি আদৌ সম্ভব by আনিসুল হক

গত ডিসেম্বরে কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে যে হোটেলে আমরা উঠেছিলাম, সেখানেই উঠেছিলেন বাংলাদেশের বেশ কজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে সরকারি দলের সদস্যরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বিরোধী দলের সদস্যরাও। সকালবেলা প্রাতঃরাশের টেবিলে তাঁদের সবার সঙ্গে দেখা হতো। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, এটা বড় কথা নয়, বিদেশের মাটিতে বাঙালিমাত্রই বাঙালির পরম আত্মীয়, সবাই এক টেবিলে বসছেন, গল্প করছেন, কুশল বিনিময় করছেন। দেখে বড় ভালো লাগে। আমাদের রাজনীতিতেও যদি এই সমঝোতা, এই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা কাজ করত! আমার শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় একজন সম্পাদক একজন সাংসদকে আমাদের সেই প্রত্যাশার কথাটাই জানান, সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে এই রকম সৌহার্দ্যবোধটা খুব দরকার। এটা হলে আমাদের রাজনীতিতে বিরাজমান সংঘাতের সংস্কৃতির অনেকটাই অবসান ঘটবে। সম্পাদক মহোদয়ের এ কথাগুলো আমাদের অনেকেরই মনের কথা।
কিন্তু নিজের মনে এই প্রশ্নও জাগে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই ন্যূনতম সমঝোতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বাস্তবতা আদৌ বিরাজ করে কি না! ২১ আগস্টে শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা-হামলার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, এই হামলার সঙ্গে হাওয়া ভবন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগ আছে। এটা তাঁরা কেবল বলেন না, তাঁরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন। এখন বিভিন্ন পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, শাহরিয়ার কবির তাঁর প্রামাণ্যচিত্রে দেখিয়েছেন—মুফতি হান্নান বলছেন, ২১ আগস্টের বোমা হামলার সঙ্গে বিএনপির অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যুক্ত। আমরা মুফতি হান্নানের এই উক্তিকে বিশ্বাস করতে পারি, নাও পারি, কিন্তু শেখ হাসিনা তো এটা বিশ্বাস করেন। এখন শেখ হাসিনার পক্ষে কি এটা বাস্তবে সম্ভব যে তিনি তাঁর হত্যা-পরিকল্পনাকারী বলে যাঁদের সন্দেহ করেন, তাঁদের সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবেন? আমরা কোন মুখে সরকারকে বলব, বিরোধী দলকে কাছে টেনে নিন, তাদের সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন করুন?
অথচ দেশে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। এটা দরকার গণতন্ত্রের স্বার্থে। এমনিতেই গত নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোট যারপরনাই খারাপ করেছে। আওয়ামী লীগ যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তা দৈত্যাকায়। এর আগে ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোট খুব ভালো করেছিল। তারা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। তারপর তারা বিরোধী দল ও মত দমন, বল্গাহীন দুর্নীতি ও দলীয়করণের যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিল, তাতে অতিষ্ঠ জনগণ সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল, যেদিন তারা গোপনঘরে ঢুকে নিজের রায়টা ব্যালটের মাধ্যমে দিয়ে আসতে পারবে। বিএনপি খুব ভালো করে জানত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতা তারা ধরে রাখতে পারবে না। কাজেই তারা নির্বাচনটাকেই ছিনতাই করার ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। বহু ঘটনার পর সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। দেশের মানুষ ভোট দেয় এবং ভোটের ফলাফলে তাদের দুর্গ বেনোজলের মুখে পড়া খড়কুটোর মতো ভেসে যায়। দুই বছরের বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আর বর্তমানে এমন সব তথ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও হাওয়া ভবন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে উন্মোচিত হচ্ছে যে এই দলটা সম্পর্কে বড়মুখ করে কিছু বলাটা সত্যিই কঠিন।
বিএনপি তার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে এখন। আর তার সবচেয়ে ভালো সময়টা গেছে ১৯৯১—৯৬ সালে। তার আগে বেগম জিয়া রাজপথের আন্দোলনে থেকেছেন, সরকারের জুলুম উপেক্ষা করে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ ভেবেছিল, বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সেই বিএনপিকে কেবল নিশ্চিহ্নতার কবল থেকে রক্ষা করেনি, দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছিল, তারা সরকার গঠন করেছিল। সেই বিএনপি আর আজকের বিএনপির অনেক তফাত। ওই সময় সর্বত্র ছাত্রদল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তার একটা কারণ ছিল। বিএনপি আসলে সামরিক-বেসামরিক আমলা, পুঁজিপতি, ব্যবসায়ীর দল। অর্থাত্ বুর্জোয়াদের দল। ছাত্রদলের মিছিলে জিনস আর কেডস পরা ছেলেরা অংশ নিত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আসলে ছিল কৃষকের দল। তাদের মধ্যে সামন্তবাদী আচার-আচরণ ছিল লক্ষণীয়। শুধু একটা ঐতিহাসিক ফোকর ছিল এই দুই দলের শ্রেণীচরিত্র আর আদর্শের মধ্যে। বাংলার কৃষকের দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বাভাবিক কারণেই ধর্ম-কর্ম করে থাকেন বেশি, অথচ তাঁদের দলের আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতা। আর বুর্জোয়াদের দল বিএনপি আধুনিক, নিজেদের জীবনাচরণে ধর্মীয় আচার-আচরণ খুব বেশি লক্ষগোচর নয়, অথচ তারাই গ্রহণ করল ধর্মভিত্তিক আদর্শ। কিন্তু ’৯০ সাল থেকে পরবর্তী ২০ বছরে এই ফোকর পূর্ণ হয়ে গেছে। বিএনপি ক্রমাগতভাবে জামায়াতে ইসলামীসমেত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কাছে আশ্রয় সন্ধান করেছে। হিসাবটা যদিও ছিল সরাসরি অঙ্কের, বিএনপির নিজস্ব ভোটব্যাংকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ভোটব্যাংক যুক্ত হলে তাদের ঠেকায় কে? তাদের ঠেকানোর জন্য আছে বাংলাদেশের তরুণ ভোটাররা, এটা বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা ভুলে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে দেশের মধ্যবিত্ত বড় হয়েছে, প্রতিবছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে ভোটার তালিকায়ই নয় কেবল, বাস্তবজীবনেও যুক্ত হচ্ছে, তাদের আকাঙ্ক্ষা-চাহিদা যে ভিন্নতর, সেটা তাঁরা হিসাবে রাখেননি। এ জায়গায় আওয়ামী লীগ দ্রুত এগিয়ে গেছে। তারা নতুন উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গৌরবের সঙ্গে তরুণদের থাকতে আহ্বান জানিয়েছে, তরুণেরাও বিজয়ী পক্ষকেই বেছে নিয়েছে, পরাজিতদের দলে তারা কেন ভিড়বে।
তবুও বলি, ২০০৯-এর নির্বাচনের ফল কেবল আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোটের প্রতিফলন নয়, বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের প্রতিক্রিয়া। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মূলেও ছিল একই প্রতিক্রিয়া। এর আরেকটা মানে আছে, এই দেশের ভোটারদের মনের দরজা-জানালা আসলে খোলা, সুশাসন না দিলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে পার পাওয়া যায় না, তেমনি দুঃশাসন ঢাকতে ভারত-জুজু, ধর্ম গেল ইত্যাদি ভয় দেখিয়েও লাভ হয় না। ভালো কাজ করো, আমরা তোমাদের সমর্থন দেব। খারাপ কাজ করেছ তো বিদেয় হও।
বিএনপি এর চেয়ে খারাপ সময় তার ইতিহাসে আর কখনো অতিক্রম করেনি। বেশির ভাগ সময়ই তারা ছিল ক্ষমতায়। সংসদে এত কম আসন তাদের কখনো ছিল না। জিয়াউর রহমান তাঁর বিএনপিতে চীনপন্থী বামদের অনেককেই আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন, ওই বামদের সঙ্গে মুসলিম লীগাররা মিলিত হলে মোটামুটি একটা ভারসাম্য হয়তো দলে বিরাজ করত। কিন্তু ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই বামরা খালেদা-তারেক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলে এখন দল থেকে বিতাড়িত। এখন দলে বেগম জিয়ার অনুগত ব্যক্তিরাই কেবল রয়ে গেছেন এবং তাঁদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা অংশ প্রায় নেই বললেই চলে। একই ঘটনা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ঘটলেও সেটা তত সংকট সৃষ্টি করেনি, কারণ আওয়ামী লীগে মুসলিম লীগার বনাম সমাজতন্ত্রী ধরনের বৈপরীত্যের বিকট সমাবেশ কখনো ঘটেনি। বিএনপি দল হিসেবে এখনো জনপ্রিয়, এত দুঃসময়েও তাদের মিছিল-জনসভায় লোক-সমাগমের কমতি নেই। কিন্তু তারা দলের ভবিষ্যত্ হিসেবে এখন নির্বাসিত তারেক রহমানকেই একমাত্র ভরসা হিসেবে বিবেচনা করছে, তাদের কর্মকাণ্ড দেখে তা-ই অনুমিত হয়। এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে উত্তরাধিকার যে একটা বড় নিয়ামক, তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। বেগম জিয়া নিজেই তার বড় উদাহরণ, নইলে সবাইকে ছাড়িয়ে বেগম জিয়াই বিএনপির মতো বড় দলের একচ্ছত্র নেতা হয়ে উঠতে পারতেন না। আর এই দেশের মানুষের স্মৃতির আয়ু যে রকমভাবে কম, তাতে কালকের গণশত্রুরও ভবিষ্যতে গণনেতা হিসেবে সংবর্ধিত হওয়াটা খুবই সম্ভব। তা না হলে এই দেশে মতিউর রহমান নিজামী কোনো দিনও মন্ত্রী হতে পারেন!
এ অবস্থায় সরকারি দলের চেষ্টা হলো বিএনপিকে যতটা পারা যায় কোণঠাসা করে রাখা। প্রশ্ন হলো, বিএনপিকে কি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব? আরেকটি বিকল্প বিরোধী দল এগিয়ে এলে এটা হতেও পারত। বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল মান্নান ভূঁইয়ারা মিলে হয়তো একটা চেষ্টা করে দেখতে পারতেন। কিন্তু এ দেশের মানুষ নিজেরাই উত্তরাধিকারের রাজনীতি সমর্থন করে। বাইরে থেকে চেষ্টা করে কি আর রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা যায়! গেলে তো মইন উ আহমেদের স্বপ্নই বাস্তবায়িত হতো।
তার মানে ভবিষ্যতে সরকারি দল আর বিরোধী দলের মধ্যে বাস্তবে কোনো সমঝোতা হবে, এটা কল্পনা করা কঠিন। হানাহানির রাজনীতির তাই বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাহলে আমরা যাঁরা কলাম-টলাম লিখি, তাঁরা সরকারকে কী বলব? বলব যে ২১ আগস্ট বোমা হামলাকারী বলে যাদের জানেন, তাদের সঙ্গেই মিলেমিশে থাকুন? বিরোধী দলকেই বা আমরা কী বলব? আর বিএনপিও ডান দিকে সরতে সরতে প্রতিক্রিয়াশীলতার যে চরম দুর্গে ঢুকে পড়ছে, তাকে আমরা জায়গা দেব কোথায়?
অবস্থাটা আসলে আশাব্যঞ্জক নয়। এ অবস্থায় সরকারের কর্তব্য হবে, শুধু বিরোধী দলকে দমন করা নয়, শুধু নাম বদলানো নয়, জনগণের জরুরি সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান করতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে বড় সিদ্ধান্ত সাহস, সততা আর প্রজ্ঞার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে, গ্যাসের সমস্যার সমাধান করতে হবে, পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে, কর্মসংস্থান করতে হবে। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। দলীয় কর্মীদের নিবৃত্ত করতে হবে, স্থানে স্থানে দলীয় কর্মীরা, বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগারা যে বাড়াবাড়ি করছে, তা এখনই থামানো না গেলে মানুষ ত্রাহি ত্রাহি করতে থাকবে।
আর আইনকে তার স্বাভাবিক গতিতে এগোতে দিতে হবে। আমরা অবশ্যই ২১ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচার চাই। সেই বিচার যদি ন্যায়বিচার হয়, বিচারপ্রক্রিয়া যদি স্বচ্ছ হয়, তাহলে এর পেছনে জড়িত রুই-কাতলাদের শাস্তি দেওয়া হলে দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, ক্ষুব্ধ হবে না। প্রতিটা মন্ত্রণালয়কে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গতিশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মন্ত্রীদের কথাবার্তা ও কাজের পর্যালোচনা করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যদের কার্যালয় পর্যন্ত সর্বত্র দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণকে নিরুত্সাহিত করতে হবে। কাজের তালিকা দীর্ঘ। সেই কাজগুলো হচ্ছে কি হচ্ছে না, খবর নেই, জিনিসপত্রের দামও বাড়ছে, চাঁদার দাবিতে রাজধানীতে খুনের ঘটনা ঘটছে, এ অবস্থায় জনগণ যখন দেখে জিয়া উদ্যানের নাম পরিবর্তিত হচ্ছে, তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, সরকারের হাতে কি করার মতো কাজকর্ম নাই? আজাড়ে কাজ নিয়ে তারা এত ব্যস্ত থাকে কেন? কেন সরকার মনে করছে বিএনপিকে রাজপথে ঠেলে দেওয়া তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে?
আর বিএনপি তার দল নিয়ে কী করবে? জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য গাঁটছড়া তাকে ছাড়তে হবে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি থেকে তারা শতহস্ত দূরে, এটা জনগণ যেন বিশ্বাস করে। সংসদে থাকতে হবে, তাদের বক্তব্য পেশ করে যেতে হবে। বিএনপির বড় সম্পদ হলো জনগণের ভোট। যখন তাদের সংগঠন ছিল না, তখনো তারা ভোট পেয়েছে। আজকে অবশ্য সংগঠনটাই তাদের কাল হয়েছে। আত্মশুদ্ধির যে পথে গেলে ভালো হতো, সেই পথে বিএনপি যাবে, এ রকম কোনো লক্ষণ নেই।
পাওয়ার করাপ্টস অ্যান্ড অ্যাবসোলুট পাওয়ার করাপ্টস অ্যাবসোলুটলি। এই সরকার যদি নিজের ভালো চায়, তবে অবশ্যই তাকে বিরোধী রাজনীতির জন্য একটা জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। সেটা হয়তো স্পিকার সংসদে যে উদ্যোগ নিচ্ছেন, সেই রকম ইস্যুভিত্তিক হতে পারে। কিন্তু দুর্বল বিরোধী দল গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ নয়। সরকার একই সঙ্গে অনেক ফ্রন্ট খুলছে, এটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সব মিলিয়ে আমাদের রাজনীতিতে অচিরেই সমঝোতা-সম্প্রীতির নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে, এ রকম আশা ব্যক্ত করা কঠিন। আমরা শুধু চাইব, সরকার পরমতসহিষ্ণু হোক, বিরোধী দলকে শিক্ষা দেওয়ার পেছনে সময় অপচয় না করে দেশের উন্নয়নে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, মানুষের বাস্তব সমস্যা সমাধানে বেশি মনোনিবেশ করুক। পাশাপাশি ঐতিহাসিক অন্যায়, অপরাধ, হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রকাশ্য স্বচ্ছ মানবাধিকারনিষ্ঠ বিচার সম্পন্ন করুক।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.