নারী ক্রীড়াবিদদের নতুন আশা

সম-অধিকার, সমান সুযোগ, সবার জন্য অগ্রগতি—এই স্লোগান সামনে রেখে আজ দুপুর ১২টায় মুক্তাঙ্গন থেকে শোভাযাত্রা শুরু করবেন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদেরা। দিনটি তাদের জন্য অন্য রকম এক তাত্পর্য নিয়ে আসছে। আজ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে এবং সেটিরই অন্যতম কর্মসূচি এটি।
খেলাধুলায় বাংলাদেশের মেয়েরা কতটা এগিয়েছেন, কতটা পিছিয়েই বা রয়েছেন এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া ক্রীড়াবিদদের সম্মান দেওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত। আর এই কাজটা করতে যাচ্ছে নারী উদ্যোগ কেন্দ্র। আজকের নারী দিবসে নারী ক্রীড়াবিদদের সম্মাননা জানাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সদ্য শেষ হওয়া দক্ষিণ এশীয় গেমসে (এসএ গেমস) সোনাজয়ী নারী ক্রীড়াবিদদের আজ বিকেল তিনটায় সিরডাপ মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য নারী সংগঠক ও ক্রীড়াবিদদেরও সম্মাননা জানানো হবে একই সঙ্গে। দুপুরের শোভাযাত্রার আয়োজকও তারা, মুক্তাঙ্গন থেকে প্রেসক্লাব হয়ে যেটি শেষ হবে সিরডাপ মিলনায়তনে।
এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশ ১৮টি সোনা জিতেছে, এর মধ্যে ৮টি জিতেছেন নারী ক্রীড়াবিদেরা। তথ্যগতভাবে বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের এগিয়ে যাওয়ারই প্রমাণ মিলছে এতে। তবে তা দেখেও এখানকার নারী ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে অনেকের মুখেই হতাশার সুর।
ষাটের দশকের ক্রীড়াবিদ, বর্তমানে নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক হামিদা বেগম বলছিলেন, ‘আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা বেশি আসত ক্রীড়াঙ্গনে। এখন শিক্ষিত মেয়েরা আসছে না। মূলত গরিব ঘরের মেয়েরা একটা চাকরির আশায় খেলাধুলায় আসছে। এখনকার বাবা-মায়েরা শুধু কোচিং আর পড়াশোনার বাইরে কিছু ভাবতে পারেন না। এটা তো এগিয়ে যাওয়া হলো না।’
প্রতিকূল একটা পবিরেশের মধ্যেই বেড়ে ওঠা সাবরিনা সুলতানা আজ দেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম বড় নাম। নারী দিবস নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? ‘বিশেষ কিছু ভাবি না। অবশ্য এই দিনটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে ভালো লাগে’—বললেন ১৯৯৭ কমনওয়েলথ ও সাফের সোনাজয়ী শ্যুটার। তবে আগের চেয়ে মেয়েরা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাচ্ছেন এবং দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থায় নারী ক্রীড়াবিদেরা বেশ ভালো করছেন মনে করেন তিনি, ‘অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। লড়াই করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়েও ভালো করছে।’
‘মেয়েরা ভালো করছে’ এই কথার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারেন শারমিন আক্তার (রত্না)। ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শ্যুটিংয়ে গত এসএ গেমসে ব্যক্তিগত ও দলীয় সোনা জিতেছেন। কদিন আগে দিল্লিতে কমনওয়েলথ শ্যুটিংয়ে দলীয় সোনা আর ব্যক্তিগত রুপাজয়ী এই শ্যুটার ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করতে পারেন। খেলার জগতে শারমিনের কেটে গেল প্রায় পাঁচ বছর। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অবস্থান সম্পর্কে ভালো ধারণাই পোষণ করেন তিনি, ‘সব ক্ষেত্রেই উন্নতি করছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তারা সাফল্য আনছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তেমন বাধার মুখে না পড়লেও বাংলাদেশের মহিলা ক্রীড়াঙ্গনে অনেক বাধা আছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি দরকার। বিয়ের পর স্বামীর সহযোগিতাও চাই। সেটা আমি হয়তো পাচ্ছি, আরেকজন হয়তো নাও পেতে পারে। তবে সব মিলিয়ে নারী দিবসে একটাই প্রত্যাশা আমাদের, মেয়েরা খেলাধুলায় আসুক আরও বেশি করে।’

No comments

Powered by Blogger.