অনেক দিন পর সেই সোনালি হাসি

‘আসিফ ট্র্যাজেডির’ আগে গুলশান জাতীয় শ্যুটিং রেঞ্জে ইতিহাস ফিরে এল। ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের দলগত সোনা জিতে বাংলাদেশ দল মনে করিয়ে দিল, একসময় এই ইভেন্টে দক্ষিণ এশীয় গেমসে কী দাপটই না ছিল এ দেশের শ্যুটারদের!
১৯৯৩ গেমসে নায়ক ছিলেন সাইফুল আলম রিংকি, আসবাব আলী ফয়েজ ও ফজলে এলাহী রাব্বি। ১৯৯৫ গেমসে রিংকি-ফয়েজের সঙ্গে ফিরোজ হোসেন পাখি। দুবারই দলগত সোনার সঙ্গে এসেছে ব্যক্তিগত সোনাও। দুটি ব্যক্তিগত সোনাই জিতেছিলেন রিংকি। ১৯৯৫ সালে ব্যক্তিগত সব পদকও ছিল বাংলাদেশের।
এবার আসিফ হোসেন খান, আবদুল্লাহ হেল বাকি আর শোভন চৌধুরী। বাংলাদেশের পক্ষে কাল ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে তিনজনই ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেন। ৬০০-তে আসিফ করলেন ক্যারিয়ার-সেরা ৫৯৬। বাকির স্কোর ৫৯১ ও শোভনের ৫৮৮, যা সোনার হাসি ছড়াতে হয়ে গেল যথেষ্ট।
ভারতের ইমরান হাসান খান ৫৯৪, সত্যেন্দর সিং ৫৮৮ এবং ধীরেন্দর সিং ৫৮২ করলেন। সাম্প্রতিক সময়ে ১০ মিটারে ভারত এত কম স্কোর করেনি। এ মাসেই দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস, ভারতীয়দের চোখ সেদিকেই। তাই এক নম্বর দলটিকে এখানে পাঠায়নি। বাংলাদেশের মতো হাসার দরকার নেই যে তাদের!
আসিফ-বাকিদের কৃতিত্বটা তাতে খাটো হয় না। তিনটি গেমসের পর আবার ১০ মিটারের দলগত সোনা জয় এবং ব্যক্তিগত সোনা জয়ের লড়াইয়ে আসিফের খুব কাছ থেকে ফিরে আসা—এই শ্যুটিং দল আপ্লুত এই ছবিতে, কারও মুখ আর বিষণ্ন থাকতে দেয়নি!
তবে এটা ঘটনা, আসিফ ছাড়া বাকি দুজনের স্কোর এখনকার দিনে এসএ গেমসে সোনা জেতাতে পারলেও বড় আসরে পাতে তোলার মতো নয়।
সকালে বাছাই প্রতিযোগিতাই বাংলাদেশকে চূড়ান্ত ফলের অপেক্ষায় রাখেনি। বাংলাদেশ দলীয় সোনা জিতে গেছে, চারদিকে তখন ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। আসিফদের নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখানোর সুযোগ ছিল না, কারণ শ্যুট অফের আগের সময়ে হইচই করা একেবারেই নিষিদ্ধ। তারপরও উচ্ছ্বাস, করদর্মন চলল।
দুপুর গড়িয়ে পড়তেই দুর্ভাগ্যের শিকার আসিফ। গোটা রেঞ্জে আক্ষেপের মধ্যেও সান্ত্বনা ছিল ‘দলীয় সোনা তো এসেছে’। আসিফদের কল্যাণে মর্যাদাও কিছুটা বাঁচল!
‘সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা। স্কোর যা-ই হোক আমরা সোনা জিততে পারলাম। এটা আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে’—ব্যক্তিগত সোনা জিততে না পারার দুঃখ সরিয়ে বলছিলেন আসিফ। বাকির কথা, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন সাফে গোল্ড জিতব। ব্যক্তিগতভাবে পারিনি, তবে দলীয় সোনা জিতে ভালো লাগছে।’ শোভন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়াও অনেকটা এ রকমই, ‘টিম গোল্ড জিততে পারা অবশ্যই আমাদের একটা অর্জন।’
সোনালি হাসির রেখা ঝিলিক দিয়ে গেল তিনজনের চোখে-মুখেই! পূর্বসূরি রিংকি-ফয়েজ আবেগে গা না ভাসালেও দুজনই বললেন, ‘ভালো লাগছে। এত দিন পর ওই গোল্ডটা এল!

No comments

Powered by Blogger.