স্বৈরাচারের পতন ও নবযুগের সূচনা by ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া বহু তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও অর্জনের ঘটনাসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, যেকোনো ন্যায়ভিত্তিক যৌক্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন সাফল্য অর্জন করেছে, কখনো ব্যর্থ হয়নি। এসব আন্দোলন- সংগ্রামের প্রকৃতি ও আদর্শগত অবস্থানের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও অবৈধ দখলদারী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এগুলো সর্বদাই বিজয় লাভ করেছে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসেও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ ঘোষিত হয়েছে। কোথাও বিদ্রোহ সফল হয়েছে, কোথাও আবার ব্যর্থ হয়েছে। সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি আধুনিককালে কোনো স্বৈরশাসকই গণঅভ্যুথানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তার মসনদ রক্ষা করতে পারেনি।
সাম্প্রতিককালের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও গত একশত বৎসরে আমরা অতিশয় কদর্যভাবে বিদায় নিতে দেখেছি বেশকয়েকজন মহাপরাক্রমশালী স্বৈরশাসকের। এইসব বহু নিন্দিত স্বৈরাচার আত্মমহিমায় এতই মগ্ন ছিলেন যে, কখন তারা জনতার রুদ্ররোষে উপলখণ্ডের মতো ভেসে গেছেন- তারা নিজেরাও বুঝতে পারেননি। হিটলার শেষ মুহূর্তে ভেবেছিলেন জার্মান আর্য জাতির নীলরক্ত কখনো পরাভূত হবে না। কুখ্যাত এই ফুয়েরারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। তারই এক সহোদরসম স্বৈরমিত্র মুসোলিনীর পরিণতি আমরা সবাই জানি। মার্কোজ পলায়ন করেন তার ‘প্রিয় দেশবাসীর’ হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। রক্ষা পাননি ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কো।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অনুকম্পা পেলেও স্বৈরতন্ত্রের অনিবার্য পরিণতি ডেকে এনেছে হত্যার মহামিছিল, দুর্ভিক্ষ এবং বিচ্ছিন্নতার মতো বিপর্যয়। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকেরা অখণ্ড রাখতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে, খণ্ডিত হয়েছে সুদান, বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি আমাদের প্রতিবেশী বার্মা। এ রকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
তবে ইতিহাসের সেই বহু কথিত, বহু চর্চিত আপ্তবাক্য: ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ইতিহাসের শিক্ষা কেন ক্ষমতার কষ্টকল্পিত প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না- সে এক আশ্চর্য রহস্যময় জিজ্ঞাসা; যার উত্তর কোনোদিন কোনোকালেই কোনো স্বৈরাচার দিতে পারেননি। তবে নিষ্ঠুরভাবে ভোগ করেছেন ইতিহাসের অমোঘ পরিণতি।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনাও তার ব্যতিক্রম নন। তার অলিন্দ উপচে পড়েছিল স্বৈরাচারের সর্বপ্রকার উপাদানে- কী অর্থনীতি, কী রাজনীতি, কী সমাজ, সংস্কৃতি- সর্বত্র হাসিনার আগ্রাসী স্বৈরতন্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো। বিশ্বের বহু স্বৈরাচারীর অসংখ্য ‘কীর্তি’ বিবর্ণ হয়ে গেছে হাসিনার ‘মহাকীর্তির’ কাছে। আলাদীনের দৈত্য ফ্যাসিবাদের সবগুলো চেরাগ ধরিয়ে দেয় হাসিনার হাতে এবং ইতিহাস আতঙ্কে হেসে উঠেছে তার অবধারিত বিনাশের গতিপথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।
আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি আপনারা সকলেই গত পনেরো বছরে হাসিনা সরকারের ‘অবদান’ সম্পর্কে জানেন। ‘জানেন’- এই শব্দটি ব্যবহার করার চেয়ে আমার মনে হয় ‘মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন’ বলা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ন্যূনতম অস্তিত্বের বিনাশ সাধন করেছেন, অবারিত লুণ্ঠনের মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছেন, ঋণভারে বিধ্বস্ত করেছেন সমগ্র জাতিকে (বৈদেশিক ঋণ উনিশ লাখ কোটি টাকা), নিষ্ঠুর পৈশাচিকতায় নির্মম হাতে গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, অগণিত গণতন্ত্রকার্মী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করেই তিনি তৃপ্ত হননি- স্বৈরাচারের নির্বিঘ্ন রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলার কুবাসনায় হাজার হাজার দেশপ্রেমিককে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন, জীবনযাপনের ন্যূনতম চালিকা চাহিদাগুলো দুর্লভ করে ১৮ কোটি মানুষের জীবনকে করে তুলেছেন অবর্ণনীয় কষ্টের কারাগার। আমি আমার বিভিন্ন প্রবন্ধ- নিবন্ধে এবং সভা-সমিতিতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি গভীরভাবে এই আশাবাদও ব্যক্ত করেছি যে, স্বৈরতন্ত্রের পতাকাবাহী হাসিনা তন্ত্রের পতন অনিবার্য। কেননা, ইতিহাসের অপ্রতিরোধ্য সত্য এবং সেই সত্যের পথে ইতিহাসের অভিযাত্রা কেউ রুখতে পারে না।
২০২৪ সালের জুলাই মাস এবং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব ও অভূতশ্রুত গণআন্দোলন আমার পূর্ব ঘোষিত প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপদান করেছে। গণআন্দোলনেই যে হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের ঐতিহাসিক পতন হবে এ বিষয়ে আমি পূর্বেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করি। একইসঙ্গে আমি একথাও গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলাম যে, উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত নবজাগরণের বা রেনেসাঁর উন্মেষ থেকেই নবপর্যায়ের একটি গণআন্দোলনের সূচনা হবে।
স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার এই ঐতিহাসিক বিজয়লগ্নে দাঁড়িয়ে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে, এবারের গণআন্দোলন বৈশিষ্ট্যগত ও গুণগতভাবে ছিল বহুলাংশে ভিন্নতর মৌলিকতার দিক থেকে এবং এর প্রকৃতির দিক থেকে। আমি বালক বয়সেই ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি এ আন্দোলনের তাৎপর্য বুঝতে না পারলেও। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে আমি কেবল একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারীই ছিলাম না, একজন সংগঠকের ভূমিকাও পালন করি।
১৯৭১ সালে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। আমার জীবনে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তির সকল আন্দোলনে আমি সক্রিয় থেকেছি।
একটি অনুশীলনশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা থাকলে রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল স্তরে নেমে আসে কালাপাহাড়ের অত্যাচার। এ ধরনের অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি। হাসিনার অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের হাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তার অনিবার্য ফলভোগ করতে হয়েছে সমগ্র দেশবাসীর। বিভিন্ন তথ্যে আপনারা লীগ দস্যুদের মহাডাকাতির বিস্তারিত বিবরণ জানেন, আমি সেগুলো পুনরায় উল্লেখ করতে চাই না।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের সকল দিগন্তে এক নতুন সূর্য উঠেছে, এসেছে এক আশ্চর্য নতুন প্রভাত উদ্ভাসিত এ সূর্যের প্রতিটি আলোকবিন্দুতে আমি দেখতে পাচ্ছি রেনেসাঁর দ্যুতি।
কেননা, একমাত্র রেনেসাঁ মুক্তির পথ দেখাতে পারে। সব কালে, সব দেশে রেনেসাঁর মতো উন্মেষ নাও ঘটতে পারে। নিজের দেশের বাস্তবতায় সে দেশের জনগণ মুক্তির পথ খুঁজে নিবে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিন্যাস ও পটভূমির আলোকেই আজ এক নতুন রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। আমার বহু প্রত্যাশিত এ রেনেসাঁ ইউরোপের মতো নয়; চরিত্রগতভাবে এ রেনেসাঁ শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার ক্ষুরধার দিয়ে ইহলৌকিকতার জয়গান নয়- এ রেনেসাঁ জাতীয় মুক্তির চেতনায় আলোকিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রেনেসাঁ। এ নব উন্মেষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের এক সম্মিলিত অঙ্গীকার। এ নবজাগরণ একটি জাতিকে নব উদ্বোধনের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমার বহুলালিত এ রেনেসাঁ বাংলাদেশের সামগ্রিক জাতীয় চেতনা, আবেগ ও প্রত্যাশার এক উজ্জ্বল অগ্রদূত।
এ দেশের ছাত্রসমাজ এ রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। তারা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন রেনেসাঁর চিরাচরিত ধারণা। তারা ভাবমানসের অতীন্দ্রিয় কুহক থেকে রেনেসাঁকে সরিয়ে এনেছেন স্বৈরতন্ত্রের পতনের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তি। তারা মহামতি কাল মার্কসের সেই অমর বাক্যের মূর্তরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশে। Philosophers have hitherto interpreted history, now the task is to change it. বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মার্কসের গভীর প্রত্যাশাকে আজ পূর্ণ করেছে। তারা আবদ্ধ কক্ষের গ্রন্থঠাসা আলো-আঁধারিতে বসে বাংলাদেশকে তথ্য ও তত্ত্বের সারণী ও সিদ্ধান্ত নিয়ে মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করেননি; তারা গণমানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে সেনানায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মার্কস ‘পরিবর্তনের’ যে আশার কথা শুনতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সমগ্র দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই আশা পূর্ণ করেছেন। ছাত্র-জনতা পরিণত হয়েছে সংগ্রামরত গণদার্শনিকে।
ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে অসংখ্য সম্ভাবনাময় নবীন প্রাণ ঝরে গেছে হাসিনা স্বৈরাচারের নির্বিচার সশস্ত্র আক্রমণে। নিহত হয়েছে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ। দুগ্ধপোষ্য শিশুও রেহাই পায়নি ফ্যাসিবাদের হত্যা উৎসব থেকে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আজও বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর দুঃসহ প্রহর কাটাচ্ছেন অনেক মানুষ। চিরতরে পঙ্গুত্বের শঙ্কায় শত শত আহত মানুষ। নিহত ও আহতদের প্রতি রইলো আমার গভীর সমবেদনা।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পৃথিবীর কোনো বিপ্লবই রক্তপাতহীন নয়; কোনো বিপ্লবই পুষ্পসজ্জিত সড়কপথের আনন্দদায়ক শোভাযাত্রা নয়। বিপ্লব মানেই আত্মত্যাগ, বিপ্লবের অপর নাম আত্ম উৎসর্গ। আমাদের ছাত্র-জনতা বিপ্লবের ধ্রুপদী পথই অনুসরণ করেছেন। তাদের প্রতি রইলো আমার আন্তরিক অভিনন্দন। বিশেষ করে স্বৈরতন্ত্রের সকল প্রকার ভয়ভীতি, রক্ত চক্ষু, রক্ত পিপাসা ও গুলিকে উপেক্ষা করে, আত্মবলিদানে উদ্বুদ্ধ ছাত্রনেতৃবৃন্দকে আমি কুর্নিশ করি। তাদের বিজয় আজ জাতির অমর বিজয়কাব্য।
ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে এবং সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। গভীর আনন্দের কথা যে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমি মনে করি বিপ্লব বিজয়ী ছাত্র-জনতার এ নির্বাচন যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত। ড. মোহাম্মদ ইউনুস আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। দেশ ও জাতির এই মহাক্রান্তিলগ্নে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন যথাযোগ্য ভূমিকায়, বর্তমান সংকট উত্তরণে তার সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ জাতিকে এক নতুন অভিজ্ঞতায় অভিষিক্ত করবে- এ বিষয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। দারিদ্র্য দূরীকরণের মধ্যদিয়ে মানবতার সার্বিক মুক্তির যে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিগত সামষ্টিক আন্দোলনের তিনি সূচনা করেছেন- তা কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অবিচল মহীরুহের ন্যায় ড. ইউনূস তার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে তিনি একই অবস্থান বজায় রেখে জাতিকে সঠিক পথে নেতৃত্ব দেবেন বলে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সংশপ্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।
সন্দেহাতীতভাবে তিনি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পরাজিত স্বৈরাচারের চর-অনুচরেরা দেশের ভেতরে ও বাইরে চুপ করে বসে নেই। তারা আবার সিংহাসনে বসার স্বপ্নে বিভোর হবে, এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েও ফ্যাসিবাদের দোসরদের অভাব নেই। সুতরাং, সরকারকে অতি সতর্কতার সঙ্গে সকল বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের আকস্মিকতা এবং বিজয়ের বিহ্বলতায় কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। পরাজিত শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। আমি গভীরভাবে আস্থাশীল যে, ড. ইউনূস বর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছেন। একটি স্থিতিশীল শৃঙ্খলাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিলুপ্ত গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ হলেও অভ্যন্তরীণ
শান্তি-শৃঙ্খলাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। স্বৈরাচার পতনের অব্যবহিত পরই এমন কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা দেখেছি যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি এত বড় একটি ঐতিহাসিক অর্জনের গুরুত্বকে ম্লান করে দিতে পারে। সরকারের স্বাভাবিক প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে- এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার তেমন প্রয়োজন নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি আশু দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments