গোলপাতা ছাড়া অন্য গাছ না কাটার পরামর্শ by ইফতেখার মাহমুদ

চাঁদপাই রেঞ্জের মৃগমারী খাল ধরে সামনে এগোতেই খালের দুই পাশে গোলপাতার সারির ঘনত্ব বাড়তে থাকল। দেখা গেল, সারি সারি গোলপাতা আর গাছের গায়ে কালো তেলের প্রলেপ কোথাও কোথাও রোদের তাপে গলতে শুরু করেছে। শ্যালা নদী ও পশুর নদের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হালকা তেলের প্রলেপ ভাসতে দেখা গেল। তবে কয়েকজন বনজীবী বলছেন, খাল ও নদীর পাড়ে কাদার ভাঁজে ভাঁজে তেল ঢুকে পড়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ১৮ দিন পরও ওই তেল সরেনি। যেন আঠার মতো বনের গায়ে লেপ্টে আছে। সরকার সুন্দরবনে শ্যালা নদী ও পশুর নদ থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ২০০ লিটার তেল সংগ্রহ করেছে। বাকি ২ লাখ ৬০ হাজার লিটার তেল এখনো সুন্দরবনের শরীরে রয়ে গেছে। সেই তেল কীভাবে অপসারণ করা হবে বা আদৌ অপসারণ করা যাবে কি না, তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছে জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ বিশেষজ্ঞ দল। তবে জাতিসংঘ দলের সঙ্গে আসা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই গোলপাতা ছাড়া অন্য কোনো গাছ না কাটার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, গোলপাতায় বেশি তেল লেগেছে। এ ছাড়া গোলপাতা কাটলে বনের তেমন ক্ষতি হয় না। এদিকে বনে লেগে থাকা তেল আগামী বর্ষায় ধুয়ে নদীর পানির সঙ্গে মিশে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে সুন্দরবন প্রাকৃতিকভাবেই তার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ।
বন বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার গোলপাতায় তেল লেগেছে। তবে কতটি গাছে তেল লেগে আছে, তার কোনো হিসাব এখনো তারা চূড়ান্ত করতে পারেনি। জাতিসংঘ দলের পরামর্শ অনুযায়ী, আপাতত শুধু তেল লেগেছে এমন গোলপাতা সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করা হবে। গাছ ও দুই পাড়ে লেগে থাকা তেল আপাতত অপসারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, তারা বনজীবীদের প্রতি ১০০ কেজি গোলপাতা সুন্দরবন থেকে সংগ্রহের জন্য ২৫ টাকা করে নেয়। সে ক্ষেত্রে তেল লাগানো গোলপাতা জমা দিলে বনজীবীদের উল্টো পারিশ্রমিক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথম বন সংরক্ষক ইউনুস আলী প্রথম আলোকে জানান, দুই পাড়ের কাদা আর গাছ থেকে তেল অপসারণ করতে গেলে সুন্দরবনের আরও ক্ষতি হতে পারে। কারণ, এতে করে বনের পাড় ভেঙে যেতে পারে। জাতিসংঘ দলের পরামর্শ অনুযায়ী, সংগ্রহ করা গোলপাতা ও তেল লেগে থাকা সামগ্রী সংগ্রহ করে কোনো একটি স্থানে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। এ জন্য কোনো ইটভাটায় সামগ্রীগুলো পোড়ানো এবং গোলপাতাগুলো আশপাশে নদী নেই, এমন কোনো এলাকায় পুঁতে ফেলা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ বিশেষজ্ঞ দলটি এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সুপারিশ করেনি। বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ পেলেই বন বিভাগ এ ব্যাপারে কাজ শুরু করবে।

No comments

Powered by Blogger.