তবুও থামেননি বোরহান by মুহাম্মদ জাকির হোসেন

(বোরহান উদ্দিন ছোটবেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁ পা হারান। এরপর পড়ালেখা শেষ করে গ্রামে ফিরে মুরগির খামার ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেন। বোরহানকে খামারে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে l ছবি: প্রথম আলো) ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পা ভেঙে যায়। একপর্যায়ে চিকিৎসায় তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়। তখন তিনি প্রথম শ্রেণির ছাত্র। এর পর থেকে লাঠিতে ভর দিয়েই চলাফেরা করছেন। এভাবেই স্কুল-কলেজের পড়াশেখা শেষ করেন। নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজ থেকে শেষ করেন স্নাতক ডিগ্রি। চাকরির চিন্তা না করে ফিরে আসেন বাড়িতে। এক প্রতিবেশীর সহায়তায় নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন মুরগির খামার। স্থাপন করেন দুটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। খামার ও বায়োগ্যাসের আয়ে তিনি আজ স্বাবলম্বী। তাঁর উৎপাদিত বায়োগ্যাসে আলো ও জ্বালানি-সুবিধা পাচ্ছে গ্রামের ৩০টি পরিবার। ওই ব্যক্তির নাম মো. বোরহান উদ্দিন (৩৮)। বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পশ্চিম পুটিয়ারপাড় গ্রামে। সম্প্রতি খামারবাড়িতে গেলে তিনি জানান, ১৯৮১ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় বাঁ পা। চিকিৎসায় পা কেটে ফেলতে হয়। এর পরও চালিয়ে যান লেখাপড়া। ১৯৯১ সালে দাউদকান্দি আদর্শ হাইস্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি, ১৯৯৩ সালে গজারিয়া সরকারি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এইচএসসি পাসের পর ১৯৯৮ সালে নারায়ণগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক (পাস) পাস করেন।
বাড়িতে এসে ২০০৪ সালে প্রতিবেশী ছালাম সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ৪৮ শতক জায়গার ওপর ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করেন একটি মুরগির খামার। মুরগির বিষ্ঠা কাজে লাগিয়ে ২০০৬ সালে আরও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন দুটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। ওই প্লান্ট থেকে স্বল্প খরচে গ্রামের ৩০টি পরিবার পাচ্ছে বিদ্যুৎসুবিধা। খামার ও বায়োগ্যাস থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। ওই টাকাতেই চলে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ হয় না। সহজশর্তে ঋণও জোটে না। সরকারি-বেসরকারি সহায়তাও পাওয়া যায় না। এভাবে আরও বায়োগ্যাস প্লান্ট করে নিজ গ্রাম ও আশপাশের গ্রামে জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে হচ্ছে না। আল-আমিন নামের গ্রামের এক তরুণ বলেন, ‘পা ভাঙলেও বোরহানের মন ভাঙেনি। মনের জোরেই এগিয়ে চলেছেন।’ বোরহানের স্ত্রী রুনিয়া বেগম বলেন, ‘তিনি কাজপাগল মানুষ। এক পা নাই—এ কথা কখনোই মনে আনেন না।’ মতলব উত্তরের ইউএনও মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এই দৃষ্টান্ত খুবই বিরল।

No comments

Powered by Blogger.