স্কুলে কেরানি, কলেজে অধ্যক্ষ! by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাসের সনদ দিয়ে কেরানির চাকরি নেন আলতাফ হোসেন। ২৩ বছর একটানা চাকরি করেছেন। হঠাৎ নিজেই কলেজ খুলে বসেছেন। হয়েছেন অধ্যক্ষ। এরই মধ্যে বানিয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, নাটোরের লালপুরে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগের নেপথ্য নায়ক তিনিই।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলতাফ ১৯৯১ সালের ৬ জুলাই লালপুর থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কেরানি হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর সবশেষ বেতন স্কেল ছিল ৪ হাজার ৯০০ টাকা। বিদ্যালয়ে আটজন ভুয়া শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় গত বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী বাদী হয়ে নাটোরের লালপুর থানায় সাতটি মামলা করেছেন। দুদকের কাছে আটজন ভুয়া শিক্ষক লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, তাঁরা আলতাফ হোসেনের মাধ্যমেই শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালপুরের একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লালপুরে এই ভুয়া শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আলতাফ হোসেনের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছেন। গত নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘লালপুরে ১২ বিদ্যালয়ের ৪৫ ভুয়া শিক্ষক এমপিওভুক্ত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ভুয়া শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে আলতাফ হোসেন আর বিদ্যালয়ে যাননি। ছয়-সাত মাস আগে থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর তাঁর বেতন বিল তৈরি করেনি।
এদিকে বিদ্যালয়ে চাকরি করার সময় আলতাফ লালপুরের বৈদ্যনাথপুর গ্রামে ‘গোপালপুর পৌর মহিলা বিএম অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে অধ্যক্ষ হয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। সেখানে শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরীফা খাতুন জানান, ২০১০ সালে বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় আলতাফ নিজ হাতে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার ফরমে এইচএসসি পাস উল্লেখ করেছেন।
গত ১ ডিসেম্বর আলতাফের ওই কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজে কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। দুজন শিক্ষক রয়েছেন। কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলের ওপরে আলতাফ হোসেনের একটি নামফলক রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে অধ্যক্ষ গোপালপুর পৌর মহিলা বিএম কলেজ। তিনটি শ্রেণিকক্ষের একটিতেও কোনো বেঞ্চ নেই।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের দুই শিক্ষক জানান, ২০১০ সালে কলেজটি চালু হয়। ইতিমধ্যেই দুটি ব্যাচ এইচএসসি (বিএম) পাস করেছে। কলেজে দুটি ট্রেড রয়েছে—কম্পিউটার ও সাচিবিক বিদ্যা। কলেজের কম্পিউটার কোথায় জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, নিরাপত্তার জন্য অধ্যক্ষের বাসায় রাখা হয়েছে।
কলেজের পাশেই অধ্যক্ষের দুই তলা বাড়ি। ওপরের তলায় আলতাফ থাকেন। সেখানে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য নেওয়ার জন্য গত কয়েক দিনে কয়েক দফায় ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। অন্য একটি মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি।

No comments

Powered by Blogger.