'নেতিবাচক পারসেপশনের নির্মাতা আওয়ামী লীগ নিজেই'

গাজীপুরসহ দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিপুল ভোটে পরাজয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক পারসেপশন তৈরি হয়েছে।
আর এসব পারসেপশনের নির্মাতা আওয়ামী লীগ নিজেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, সোনালী ব্যাংকে লুটপাট, হলমার্ক, পদ্মা সেতু এবং হেফাজত ইস্যুতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনগণের একটি নেতিবাচক প্রচারণা তৈরি হয়েছে। যার ফলে দেশের বড় বড় শহরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। এর জন্য আওয়ামী লীগ নিজেই দায়ী।
সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক গোলাম মোর্তজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন, বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক গোলাম মোর্তজা আলোচকদের কাছে জানতে চান, গাজীপুরের নির্বাচনের পর সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে পৃথক মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল পাঁচটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে। আর সরকারি দলের মধ্যেও পরাজয় নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ হচ্ছে। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
জবাবে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্বাচন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি পরীক্ষা। পরীক্ষায় যেমন ফার্স্ট টার্ম, সেকেন্ড টার্ম এবং ফাইনাল পর্ব আছে। তেমনি রাজনীতিবিদদের জন্যও একের পর এক নির্বাচনী পরীক্ষা মোকাবিলা করতে হয়। তিনি বলেন, পাঁচ সিটিতে হেরেছে বলে আওয়ামী লীগ আর কোনো নির্বাচনে জিতবে না- এমন কোনো কথা নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উচিত হবে বাইরের যেসব বিষয়ে কম গুরুত্ব দেওয়ার কারণে বা সরকারের কোনো ব্যর্থতার কারণে ভোটাররা ক্ষুব্ধ তা খুঁজে বের করা, নিজ দলের মধ্যে নয়। তিনি বলেন, এতগুলো সিটিতে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ যদি নিজেদের দলের মধ্যে কারণ খুঁজতে থাকে, তবে দল আরো সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে শত্রু খুঁজলে সরকার আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
আলোচনার এ পর্যায়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক দেরি করে ফেলেছে। এখন যে সময় আছে, এ সময়ের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য হবে। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো মূল্যায়ন কাজে আসে না। এখানে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই সব। দলীয় প্রধান যা ভালো মনে করেন, তাই করেন। এখানে অন্যদের কোনো কিছু করার নেই। তিনি বলেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগ অল আউট খেলেছে। প্রতিদিন অর্ধশত এমপি গাজীপুরে গেছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও প্রশাসন থেকেও অনেক চেষ্টা হয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা প্রার্থী হিসেবে বহু বছর টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের আইনের ছাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর অনেক জনপ্রিয়তা থাকলেও এ নির্বাচনে ভোটররা তাঁকে চাননি, তাই তিনি নির্বাচিত হতে পারেননি।
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, ইদানীং গাজীপুরে সরকারদলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে হেফাজতের হাত রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু গাজীপুরে যদি জামায়াত বিএনপি হেফাজতের পক্ষে থাকে তবে সরকারের পক্ষে তো কোটি কোটি দর্শকের গণজাগরণ মঞ্চ আছে। তারা কেন নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। সরকার কি গণজাগরণ মঞ্চকে নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগাতে পারেনি।
জবাবে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গাজীপুরে হেফাজত ফেক্টর হয়েছে, এটা ঠিক না। কারণ চট্টগ্রাম আর নারায়ণগঞ্জে তো আর সে সময় হেফাজত ছিল না, তা হলে সে সময় সরকারি দল পরাজিত হলো কেন। তিনি বলেন, এটা হলো একেক সময় একেকটি নির্বাচনে বিভিন্ন বিষয় ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসে। এটাকে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচনে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সরকারি দলের প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, কারণ যা হোক সরকারের ব্যর্থতাও মানুষের সামনে বড় করে তুলে ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া হেফাজত একটি প্রভাব বিস্তার করেছে। সে সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরও একটা বড় অংশের ভোটারের মাঝে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। সব মিলিয়ে সরকারকে তার আগামী নির্বাচন নিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.