পবিত্র কোরআনের আলো-ইউসুফ (আ.)-এর পোশাকসংশ্লিষ্ট বিস্ময়কর ঘটনা

৯৬. ফালাম্মা- আন জা-আল বাশীরু আলকা-হু 'আলা- ওয়াজহিহী ফারতাদ্দা বাসীরান, কা-লা আলাম আকুল লাকুম, ইন্নী- আ'লামু মিনাল্লা-হি মা-লা তা'লামূন। ৯৭. কা-লূ য়া-আবা-নাসতাগফিরলানা- যুনূবানা- ইন্না- কুন্না- খা-তিঈন।
৯৮. কা-লা সাউফা আসতাগফির লাকুম রাব্বী, ইন্নাহূ হুয়াল গাফূরুর রাহীম। সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ৯৬. এরপর যখন সুসংবাদদাতা পৌঁছল, (পৌঁছেই) সে পোশাকটি তাঁর মুখের ওপর রেখে দিল। অমনি তাঁর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিকতায় ফিরে এলো।* তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি যে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (বিশেষভাবে) যা জানি, তোমরা তা জানো না। ৯৭. তারা বলল, পিতাজী, আপনি আমাদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম। ৯৮. (ইয়াকুব) বললেন, খুব শিগগির আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করব।* নিশ্চিয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
তাফসির : * আল্লাহর কুদরতে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পোশাকটি ইয়াকুব (আ.)-এর মুখের ওপর রাখতেই তিনি আগের মতো স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। এখানে 'বাশীর' অর্থাৎ সুসংবাদদাতা বলে ইউসুফ (আ.)-এর সবচেয়ে বড় ভাইকে বোঝানো হয়েছে। তাঁর নাম কোনো বর্ণনায় 'ইয়াহুদা' এবং কোনো বর্ণনায় 'রুবেল' উল্লেখ করা হয়েছে। সুসংবাদ দ্বারা বোঝানো হয়েছে, সে বাড়ি ফিরে পিতা ইয়াকুব (আ.)-কে জানিয়েছে, ইউসুফ জীবিত আছেন এবং তিনি এখন মিসরের বাদশাহ। তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে মিসরে চলে যেতে বলেছেন। এমন বক্তব্য পুত্রের মুখ থেকে শোনামাত্রই ইয়াকুব (আ.) বলে উঠলেন, আমি আগেই তোমাদের বলেছিলাম, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছি, তা তোমরা জানো না। অর্থাৎ আমার বিশ্বাস ছিল, ইউসুফ মরেনি। তাঁর সঙ্গে অবশ্যই মোলাকাত হবে। তিনি খুশিতে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন।
হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পোশাকসংশ্লিষ্ট কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। যেমন প্রথমে ভাইয়েরা তাঁর পোশাকে কৃত্রিম রক্ত মাখিয়ে পিতার কাছে নিয়ে পেশ করেছিল। ইয়াকুব (আ.) সেটি অক্ষত দেখে বুঝে ফেলেছিলেন, প্রিয় সন্তান ইউসুফকে কোনো বাঘে খায়নি। দ্বিতীয়ত, জুলায়খা ইউসুফ (আ.)-এর পোশাকটিতে পেছন দিক দিয়ে টান দিয়েছিল। তাতে সেটি কিছুটা ছিঁড়ে যায়। পেছন দিকে পোশাকটি ছেঁড়া দেখে প্রমাণ হয়, ইউসুফ (আ.) নির্দোষ ছিলেন। এবার তাঁরই পোশাকটি পিতা ইয়াকুব (আ.)-এর মুখের ওপর এনে রেখে দেওয়া হলে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফেরত পেলেন এবং এরও আগে মিসর থেকেই পোশাকটির সুঘ্রাণ তিনি সুদূর ফিলিস্তিনের কেনানে অবস্থান করেই অনুভব করেছিলেন। এগুলো সবই ছিল আল্লাহর বিশেষ কুদরতি ঘটনা। ইয়াকুব ও ইউসুফ (আ.) দুজনই আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত নবী ছিলেন।
* বাস্তব ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা নিজেদের কৃত অপরাধ পিতার কাছে অকপটে স্বীকার করে নিয়ে বলল, আপনি আমাদের গোনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে মোনাজাত করুন। ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের গোনাহ মাফ করাতে দোয়ার জন্য সম্মত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে দোয়া না করে তিনি কিছুটা সময় চেয়ে নিলেন। বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি শেষ রাত পর্যন্ত এবং অন্য বর্ণনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিবাগত শেষ রাত পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। কারণ, দুটিই দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়।
তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন ও তাওযিহুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.