১৪ দল নেতাদের প্রতিক্রিয়া-অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আনতেই টিআই প্রতিবেদন

'গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার-২০১২' শীর্ষক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করেন ১৪ দলের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, অরাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পক্ষে ওকালতি করতেই এমন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান টিআইয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচনের আগে এমন প্রতিবেদন অরাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, 'এক/এগারোর আগে যে কুশীলবরা সোচ্চার ছিলেন, তাঁরাই আবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন। অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য একটি গোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়েছে। বিশেষ গোষ্ঠী আগের মতো নানা জরিপ প্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে।'
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেলিন বলেন, 'টিআইয়ের প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের প্রায় দুই কোটি সক্রিয় সদস্যসহ দেশের অন্যান্য দলের কোটি কোটি রাজনৈতিক কর্মীকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ফলে জনগণ ভুল বার্তা পাবে এবং অরাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পথ প্রশস্ত হবে।' কালের কণ্ঠকে তিনি আরো বলেন, 'এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রসহ যা কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন তা এনেছে রাজনৈতিক দলগুলো। অথচ তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে পুরো জাতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।'
লেলিন বলেন, 'প্রতিবেদনটি গবেষণালব্ধ নয়। টিআই বলেছে, এটি একটি ধারণাপত্র। কিন্তু সাধারণ জনগণ এটাকে ভিন্নভাবে দেখবে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এমন প্রতিবেদন দিয়েছে তারা। এটি প্রকাশ করে টিআই নিজেদেরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।' তিনি আরো বলেন, 'রাজনৈতিক দল সুশীল সমাজের অংশ, কোনো সেবা প্রতিষ্ঠান নয়। রাজনৈতিক দল লাইসেন্স দেয় না, পারমিট দেয় না। তাহলে রাজনৈতিক দলকে কেন এ পর্যবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হলো?'
তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করতে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের জন্য এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'কোনো তথ্য-উপাত্ত ছাড়া টিআইয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত করেছে, যা মোটেই ঠিক নয়। যখনই কোনো রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসতে চায়, তখনই এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণকে বিভ্রান্ত করে।'
১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'টিআইয়ের এ প্রতিবেদন নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। সামরিক শাসন আমল থেকে এ দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এ মুহূর্তে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) এমন প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করল? এর পেছনে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য আছে। কারণ টিআইবি উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কাজ করে না। তারা বিরাজনীতিকরণ ধারাকে লাভবান করতে চায়।' তিনি প্রশ্ন রাখেন, 'যেখানে টিআইবির নিজেদের স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, সেখানে তারা এমন প্রতিবেদন কিভাবে দেয়?'
১৪ দলের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরিফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, 'টিআইয়ের এ প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। বাংলাদেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। সামাজিকভাবে দুর্নীতি গা-সওয়া হয়ে গেছে। এ রকম সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত বলা চরম উদ্দেশ্যমূলক। বিরাজনীতিকরণের পক্ষে ওকালতি করতেই এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।'
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম বলেন, 'এ প্রতিবেদনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। সুশীল সমাজের নামধারী একটি গোষ্ঠী সর্বদাই রাজনৈতিক দলগুলোকে হেয় করার চেষ্টায় থাকে। প্রতিবেদনটি তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।'

No comments

Powered by Blogger.