‘বেশির ভাগই খাওইন্যা পার্টি’ by আশরাফুল ইসলাম

উপকূলীয় জেলা বরগুনার আমতলী থানার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন (৫৫)। বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেই বেড়ে ওঠা। কৈশোর-যৌবনের পুরো সময়ই কেটেছে নদীতে মাছ ধরে ও বিক্রি করে। শুধ‍ু মাছ ধরে ঠিক মত চলছিল না কফিলের সংসার।

অধিক রোজগারের আশায় তাই আশির দশকে তিনি পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়।
ঢাকাতে এসে ড্রাইভিং শেখেন কফিল উদ্দিন। ভাড়ায় বেবিটেক্সি চালনা শুরু করেন। এরপর এ শহরে ড্রাইভিং পেশাতেই কেটে গেছে তিন যুগ। বেশ কয়েক বছর হয় বেবিটেক্সি ছেড়ে ধরেছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা। দীর্ঘ এ সময়ে কফিল উদ্দিন সঞ্চয় করেছেন বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতার বেশির ভাগই তিক্ততায় পূর্ণ।

ঈদ পরবর্তী অনেকটা ফাঁকা রাজধানীতে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় কফিল উদ্দিনের। অনেকটা স্বপ্রণোদিত হয়েই তিনি বলতে থাকেন ড্রাইভিং পেশার অভিজ্ঞতা-যার বেশির ভাগ অংশ ছিল ট্রাফিক পুলিশের প্রতি তীব্র বিষোদগার।

শুরুতে কফিল নিজ থেকেই বলছিলেন, ‘‘সারাটা গাড়ি চালাইয়া আর শান্তি পাই না। এমনিতে যানজটের জন্য গাড়ি চালাইতে পারি না। ঈদের জন্য যাও ঢাকাডা (রাজধানী ঢাকা) একটু খালি অইলো তহন আবার পুলিশ গো লাইগ্যা শান্তি নাই। আইজ সকাল থাইক্কা সাত বার আটকাইছে।’’

ধীরে ধীরে কফিল নিত্যদিন ট্রাফিক পুলিশের হাতে হেনস্থা হওয়ার বহু ঘটনা তুলে ধরেন। এসময় দু’একজন সৎ পুলিশ সদস্যের কথাও শ্রদ্ধার  সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘’৮৫-তে ঢাকায় আইছি। গাড়ি চালাইতে যাইয়া এ পর্যন্ত কতবার ট্রাফিক পুলিশের কাছে হেনস্থা অইছি তার হিসাব নাই। কোন সময় মামলা দিয়া চরথাপ্পরও মারে-তহনই বেশি খারাপ লাগে।’’

‘‘কালকেও ধরছিল এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। কিছু দোষ না পাইলেও ওয়াইপার-এর  এককোনা ভাঙ্গা কেন-তার লাইগ্যা মামলা দিছে। ভাই আপনেই কন এ্যাইডা কি কোনো মানুষের কাম অইলো?’’ আক্ষেপের সঙ্গে এমনি শত অভিযোগ আর প্রশ্ন করে যাচ্ছিল কফিল, সঙ্গে অশ্রুপাতও।

কফিলের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, কোনো কোনো দিন একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট কিংবা কনস্টেবলকে ঘুষ দিতে হয়। কখনো আবার ঘুষ নিয়েও মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ।

কাগজপত্র ঠিক থাকলেও কোনো না কোনো অযুহাতে ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়, অন্যথায় মামলা-অভিযোগ কফিল উদ্দিনের।

তবে ভাল অভিজ্ঞতাও কিছু রয়েছে তার। প্রায় আড়াই যুগের ড্রাইভিং-এর জীবনে সৎ পুলিশ কর্মকর্তার দেখাও যে পাননি তা নয়।

কফিল বলেন, ‘‘১৯৮৮ সালে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় এক স্যারে ধরছিল। কাগজপত্র দেইখ্যা আমারে কইলেন, আমি ঘুষ খাইমু না, তয় তোমার লাইসেন্সটা (ড্রাইভিং লাইসেন্স) অরিজিনাল না-ঠিক কইরা নিও। তহন থেইক্যা অমন অফিসার দুই চাইর বার পাইছি। বেশির ভাগই ঘুষ খাওইন্যা পার্টি।’’

আধ ঘণ্টারও বেশি সময় প্রতিবেদকের সঙ্গে চলে কফিলের এ অভিজ্ঞতার গল্প। এক পর্যায়ে যাত্রী এলে ইতি টানতে হয় আলোচনায়।

যাওয়ার সময় কফিল উদ্দিন কণ্ঠে আবারও আশঙ্কা ধ্বনি ‘‘না জানি এ্যাহন আবার কয়জনে ধরে।’’  

No comments

Powered by Blogger.