স্যান্ডির আঘাতে লণ্ডভণ্ড নিউ ইয়র্কঃ নিহত ৪০

হ্যারিকেন স্যান্ডির আঘাতে লণ্ডভণ্ড নিউ ইয়র্ক নগরী। থমকে গেছে জনজীবন। এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১০ টা পর্যন্ত ( বাংলাদেশ বুধবার সকাল ৮ টা) নিউ ইয়র্কে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি।
নিউ ইয়র্কের ব্যস্ততম এলাকা ডাউন টাউন ম্যানহাটনসহ বেশ কিছু এলাকায় ৮/১০ ফিট পানির নীচে। এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়নি। গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সর্বমোট ৬০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নগরীর পাতাল রেলের ৭টি টানেলে পানি প্রবেশ করেছে। নিউ ইয়র্কে পাতাল রেলের ১০৮ বছরের ইতিহাসে এটি নজীরবিহীন বলে উল্লেখ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট ওবামা নিউইয়র্ক ও নিউ জার্সিকে  ‍দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছেন।

এদিকে হ্যারিকেন স্যান্ডি দুর্বল হয়ে পশ্চিম পেনসিলভেনিয়ায় আঘাত হেনেছে ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে। এটি আরো উত্তরে সরে গিয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলের দিকে কানাডা সীমান্ত অতিক্রম করবে বলে ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে। এসময় নিউইয়র্কে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৫ মাইল।
নিউ ইয়র্কের স্যান্ডি তাণ্ডব দেখে নগরবাসী হতবাক। স্যান্ডির আঘাতে নগরী থমকে দাঁড়িয়েছে। কতো গাছ পড়েছে তার সংখ্যা নিরূপণ করা হয়নি এখনো, কিন্তু বহু রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা বুঝতে পাচ্ছে যে গাছ পড়ে থাকা অথবা বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়াই রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার প্রধান কারণ।

নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আলোজ্বলমল এলাকা ম্যানহাটানের একটি বড় অংশ পানির নিচে। লোয়ার ম্যানহাটান এবং ডাউন ম্যানহাটানের অনেক রাস্তায় কোমর পানি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে পুরো এলাকা। কারণ পানির সাথে বিদ্যূতের সংস্পর্শে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে।

কুইন্সের রকওয়েতে মঙ্গলবার সকালে আগুন ১০০ টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে ব্রুকলীনের নিম্নাঞ্চল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। দুর্যোগের ঘনঘটা শুরু হওয়ার পরই তাদের অধিকাংশ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যান্য এলাকায়ও বাংলাদেশীরা নিরাপদে আছে। সকাল থেকেই জ্যামাইকা ও জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশী মালিকানাধীন দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে দোকানে খুব একটা ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ নগরীর সব জায়গা থেকে এখনো লোকজন আসতে পারছে না রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে। নগর জীবন স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঘূর্ণির প্রচণ্ডতায় এলোমেলো হয়ে যাওয়া নগরীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ সময় লাগবে। বিশেষত সাবওয়ে ও বাস সার্ভিস পুরোপুরি চালু না হলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে বলা যাবে না।

এদিকে ঈদ করার জন্য অনেক বাংলাদেশী নিউ ইয়র্কের বাইরে গেলেও স্যান্টির কারণে ফিরে আসতে পারছেনা। বাফেলো থেকে নঈম উদ্দিন জানান, ঈদের আগের দিন পরিবার নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে বাফেলো গিয়েছিলাম। যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতে পারছিনা।

স্ট্যাটন আইল্যান্ড থেকে প্রবাসী সাংবাদিক শামসুল হক জানিয়েছেন,  একদিকে সমুদ্র ঝড় স্যান্ডির আতংক অন্যদিকে ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ ছিলনা। পুরো স্ট্যাটেন আইল্যান্ডটা ছিল ভুতের নগর। ব্রিজ বন্ধ, ফেরি বন্ধ, বন্ধী ছিলাম পুরো দ্বীপবাসী। তবে আল্লার অশেষ রহমত যতটা ক্ষতির আশংকা করা হয়েছিল ততটা হয়নি।

নিউজার্সির মো. লুৎফুর রহমান রাজু জানিয়েছেন- সোমবার দুপুরেই একটি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। বাসার সামনে পানি উঠেছে।

নিউ ইয়র্ক ব্রুকলীনের আমেনা খাতুন জানান, রাতে কিছুক্ষণ বাসার বিদ্যুৎ ছিলনা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসে। রাত দুইটার পর থেকে বাসায় টিভির ক্যাবল চলছেনা।
নিউ ইয়র্কের হাসপাতাল ব্যবস্থা অত্যন্ত সুরক্ষিত বলে দাবী করা হলেও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং জরুরি ভিত্তিতে রোগীদের অন্যান্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ম্যানহাটানে অবস্থিত বেলভিউ হাসপাতালের বেসমেন্টে পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রোগীদের অন্যত্র নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.