রাজনৈতিক আলোচনা- 'সেদিন বঙ্গভবনে কী ঘটেছিলঃব্যর্থ সংলাপ থেকে বঙ্গভবন,কূটনীতিকদের ভূমিকা' by কাজী হাফিজ

(১১ জানুয়ারি ২০১০ সালে লেখা) ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। দুপুর থেকেই রাজনৈতিক মহল ও সাংবাদিকদের কাছে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে বিশেষ একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

আগের দিন পল্টনের বিশাল জনসভা থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা 'প্রহসনের নির্বাচন' প্রতিহত করার ব্যাপক আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পুলিশের সঙ্গে মহাজোট কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছে। ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা পর্যায়ে সেনাবাহিনী আগে থেকেই মোতায়েন ছিল। তবে তারা তখনো নিশ্চুপ।
বেলা ৩টার কাছাকাছি সময়ে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানদের নিয়ে বঙ্গভবনে হাজির হলে কিছু ঘটার সম্ভাবনা বা আশঙ্কাটি আরো জোরদার হয়ে ওঠে। বিকেল সাড়ে ৪টার সময় বঙ্গভবনে উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠক থাকলেও সেটা বাতিল হয়ে যায়। বঙ্গভবনের বাইরে এ সময় মোতায়েন ছিল সাভার থেকে আসা একটি সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন। ওই ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সতর্কতামূলক অবস্থানও 'ভেতরে কিছু একটা ঘটছে' সে অবস্থাকে স্পষ্ট করে তোলে।
বঙ্গভবনে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ও সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তখনকার সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ ও তাঁর সঙ্গীদের প্রস্তাব নিয়ে ভাবার জন্য দু-একদিন সময় চেয়েছিলেন; কিন্তু পাননি। মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রপতিকে শুনিয়ে টেলিফোনে সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশনের তখনকার জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রয়োজনীয় আরো ফোর্স নিয়ে দ্রুত চলে আসার নির্দেশ দিলে চুপসে যান তিনি। তখন অসহায়ভাবে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য কিছু সময় চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি; সেটাও দেয়া হয়নি। বঙ্গভবনের ভেতরের বসার ঘরে রাষ্ট্রপতির সামনে তখন তিন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারী। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে বলেন, 'রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওনার সঙ্গে আপনার আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই।' এরপর রাষ্ট্রপতির দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয় পদত্যাগপত্র। বলা হয়, 'সই করার জন্য কলম দেব স্যার!' রাষ্ট্রপতি কাঁপা হাতে নিজের কলম বের করেন। কোন পদ থেকে তাঁকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে তখনো তিনি জানেন না। মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করেন, 'রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করব?' তাঁকে জানানো হয়_না, শুধু প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।' এরপর জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণের স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই স্ক্রিপ্ট কিছুটা সংশোধন করতে চেয়েছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। কিন্তু সে চাওয়াও পূরণ হয়নি তাঁর। বিকেল ৪টার দিকে নবম ডিভিশনের জিওসি অতিরিক্ত ফোর্স ও সঙ্গী কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে বঙ্গভবনের দায়িত্ব নেন তিনি। এ সময় জেনারেল মাসুদের জেনারেল স্টাফ অফিসার-১ বঙ্গভবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রপতি তখনো স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণ ধারণে ব্যস্ত রাখা হয়েছিল তাঁকে।
সংশ্লিষ্ট অন্য এক সূত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ সেদিন জেনারেল মইনের কাজে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। তাঁর আপত্তির কারণে কিছুটা সময় বঙ্গভবনের গেটে অপেক্ষায় থাকতে হয় এক-এগারোর হোতাদের। এ অপরাধে পরে চাকরি হারাতে হয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদকে।
জেনারেল মইন পরে সেদিনের ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাঁর 'শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ' বইয়ে লিখলেও রাষ্ট্রপতির ওই অসহায় অবস্থার কথা, স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করার কথা, পদত্যাগপত্র ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে কিছু লেখেননি। তিনি লিখেছেন, 'আমরা প্রেসিডেন্টকে স্যালুট করে তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিলাম। তারপর শুরু হলো আলোচনা। আমি প্রেসিডেন্টকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের আলটিমেটাম, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান, বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতিসংঘের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানালাম। জাতিসংঘ মিশন থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে, তা সবিস্তারে বর্ণনা করলাম। নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানও নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রেসিডেন্টকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট হলেন। ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অগ্রসর হলে দেশ কী ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হতে পারে, তার বর্ণনা দিল। আমি মহামান্য প্রেসিডেন্টকে দেশকে এ মহাসংকটের হাত থেকে রক্ষা করতে কিছু করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাই।'
তিনি তাঁর বইয়ে আরো লেখেন, 'মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, কিন্তু কোনো মন্তব্য করলেন না। দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আরো কিছুটা সময় চাইলেন। আমি স্পষ্ট অনুধাবন করছিলাম, রাষ্ট্রপতি পরিস্থিতির গুরুত্ব ঠিকই অনুধাবন করতে পারছেন; তবে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। এজন্যই সময় নিতে চাচ্ছেন। আমি জানতাম, ইতোপূর্বে উপদেষ্টা পরিষদের অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত অজানা কোনো কারণ ও প্রভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ কারণে আমরা কোনো দুষ্টচক্রকে নতুন কোনো খেলা শুরু করার সুযোগ দিতে চাইছিলাম না। একসময় আমরা সবাই রাষ্ট্রপতির কথা শোনার জন্য নিশ্চুপ হয়ে থাকলাম। কক্ষে নেমে এলো সুনসান নীরবতা_একটি পিন পতনের শব্দও বুঝি এখন শোনা যাবে। আমি জানি একটাই সেই মুহূর্ত। এ মুহূর্তেই নির্ধারিত হবে দোদুল্যমান দেশের ভবিষ্যৎ। আমার মনে হলো, আমাদের চোখ দিয়ে পুরো দেশ যেন তাকিয়ে আছে রাষ্ট্রপতির দিকে। দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে রাষ্ট্রপতি একসময় জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে মত দিলেন। সিদ্ধান্ত হলো বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ তিনি ভেঙে দেবেন এবং প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় রাত ১১টা থেকে সান্ধ্য আইন জারি করা হবে।'
২০০৬ সালের অক্টোবরে বিচারপতি কে এম হাসানকে বাদ রেখে একজন নির্দলীয় যোগ্য ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা, ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নানের মধ্যকার সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই বছর ২৫ অক্টোবর ঈদের দিন দেশবাসীকে শুনতে হয়, সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ঘোষণা দেয়, বিচারপতি কে এম হাসানকে বাদ দিয়ে তারা কোনো সমঝোতায় যাবে না। আর আওয়ামী লীগের পক্ষে জানানো হয়, বিএনপি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২৯ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংবিধানের অজুহাতে ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে যায়।
কূটনীতিকদের ভূমিকা: সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদ সেদিনের ঘটনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাঁর 'শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ' বইয়ে লিখেছেন, 'একসময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করে জানান, সব দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করার জন্য তারা জাতিসংঘকে অনুরোধ করবে। প্রচ্ছন্ন এ হুমকির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অনুধাবন করতে আমার অসুবিধা হলো না।' এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের কূটনীতিক তার কাছে জানতে চেয়েছেন যে তিনি সামরিক শাসন জারির দিকে এগোচ্ছেন কি না। নিজের ওই বইটিতে তিনি আরো লেখেন, 'বিকেলে (১০ জানুয়ারি) আমার টেলিফোন অপারেটর আমাকে জানাল, 'জাতিসংঘ থেকে শান্তি মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মি. জন মেরি গুইহিনো আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। আমি বুঝলাম, আমাদের শান্তিরক্ষা মিশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেয়া হুমকি শুধু হুমকিই ছিল না, তা বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে।' পরের দিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি সকালের ঘটনা সম্পর্কে মইন লেখেন, 'আমি অফিসের সময় শুরু হওয়ার আগেই অফিসে চলে এলাম। প্রথমে খবর ও পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে টেলিফোন পেলাম। আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মি. জন মেরি গুইহিনো কোনোরকম ভণিতা না করেই জানালেন, সব দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ রকম একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি ভূমিকা রাখে, তাহলে জাতিসংঘ শান্তি মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।'
মি. জন মেরি গুইহিনো সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ফ্রান্সের নাগরিক। ফ্রান্স পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির মাধ্যমেই তিনি তার পেশাগত জীবনের সূচনা করেন। গুইহিনো কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ।
'২০০৭ সালের ৮ জুন, অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন 'এভিডেন্স মাউন্টস অব বাংলাদেশ মাস টর্চার' শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। এবিসির দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি পিটার লিয়ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, 'ঘটনার আগে আমেরিকান ও ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের সঙ্গে বৈঠক করে এবং তারা জেনারেল মইনকে গ্রিন সিগন্যাল দেন।' এ ছাড়া জানানো হয়, ঢাকায় অবস্থানকারী প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূতদের 'টিউসডে গ্রুপ'-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। এ গ্রুপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়া। এবিসি প্রতিবেদক জানান, তখন বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার ডগলাস ফসকেটের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। কথা বলতে রাজি হননি জেনারেল মইনও।
ওয়ান-ইলেভেন সংশ্লিষ্টরা আরো জানিয়েছেন, ওয়ান-ইলেভেনের আগে থেকেই এ নিয়ে সক্রিয় ছিলেন ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস, ব্রিটেনের হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ঢাকায় জাতিসংঘের সমন্বয়কারী ও ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়ান এবং বাংলাদেশে কানাডার তখনকার হাই কমিশনার বারবারা রিচার্ডসন।
ওয়ান-ইলেভেনের আগে প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি ওই বছরের ৫ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর তখনকার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর দুই দিন পর ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত তখনকার ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী দেখা করেন মইন উ আহমেদের সঙ্গে। বিউটেনিস ও আনোয়ার চৌধুরী ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সঙ্গে এবং ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ডিজিএফআইয়ের সে সময়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমী দেশে ছিলেন না। তিনি ৭ জানুয়ারি ব্রিটেনের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এমআই-৬-এর একটি সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়েন। তাঁর বক্তব্য, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আগেই ধারণা ছিল। ১ জানুয়ারি রেনেটা লক ডেসালিয়ান সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে ২২ জানুয়ারি নির্বাচন হলে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংশয়ের কথা জানান।
এদিকে এক-এগারোর রাতে জরুরি অবস্থা জারি হলেও বিকেলেই টিউসডে গ্রুপের ব্যানারে ঢাকায় তখনকার কানাডার হাই কমিশনার বারবারা রিচার্ডসনের বাসভবনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ_দুই দলের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলে দেয়া হয়, দেশে সাংঘাতিক ধরনের কিছু একটা হচ্ছে এবং কূটনীতিকদের এতে সমর্থন রয়েছে। বিউটেনিস, আনোয়ার চৌধুরী, জার্মানির রাষ্ট্রদূত মাইক ফ্রাঙ্ক, অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার ডগলাস ফসকেট, ইইউর রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ফ্রয়েন, জাতিসংঘের সমন্বয়কারী রেনেটা লক ডেসালিয়ান, বারবারা রিচার্ডসনসহ পশ্চিমা কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন বিশেষ ওই বৈঠকে। বিকেল ৪টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত আবদুল জলিলসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোয়া ৫টা থেকে মান্নান ভূঁইয়াসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এটা ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি পশ্চিমা কূটনীতিক তথা এক-এগারোর সমর্থকদের প্রচ্ছন্ন হুমকি। প্রায় একই সময়ে বঙ্গভবনে সেনাপ্রধান লে. জেনারেল মইন তার অনুসারী কিছু জেনারেলকে নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছিলেন।
বহু প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসার পর গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ সফরে এসে আনোয়ার চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, এক-এগারোর ঘটনায় তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। এর আগে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্ক মাইকও এক-এগারোতে তাঁর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে ওই ঘটনার পর কিভাবে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় সে জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন।
================================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'রাজনীতি পুরনো পথেই' by আবদুল্লাহ আল ফারুক  খবর- ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক  আলোচনা- 'বাংলাদেশে মিডিয়া ও তার ভবিষ্যৎ' by সাইফুল বারী  প্রবন্ধ- রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের 'অবরোধবাসিনী'  ফিচার- ‘হিমশীতল শহরগুলোর দিনরাত' by তামান্না মিনহাজ  গল্পালোচনা- ''সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর'  সাক্ষাৎকার- হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন  ইতিহাস- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের ফসিল 'স্যু' এর কাহিনী  খাদ্য আলোচনা- 'অপুষ্টির প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা by শেখ সাবিহা আলম  গল্পালোচনা- 'ডান রাস্তার বামপন্থী' by কাওসার আহমেদ  খবর- 'মারা যাবে না একটি শিশুও' -বিলগেটসপত্নী, মেলিন্ডা গেটস  আলোচনা- 'সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের অঙ্গীকারঃ  নিবন্ধ- সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড-একটি দেশ একটি কবিতার জন্ম by আলীম আজিজ  আলোচনা- 'আরও একটি সর্বনাশা দেশ চুক্তির বোঝা' by আনু মাহমুদ  গল্পালোচনা- হতাশার বিষচক্র থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে


কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ কাজী হাফিজ


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.