গল্পিতিহাস- 'এত যে সফলতা, তবুও বিফলতা' by সনৎ কুমার সাহা

প্রায় সোয়াশ' বছর আগে লেখা রবীন্দ্রনাথের 'দুরন্ত আশা' কবিতাটি আজও পুরনো হয়নি। বাঙালির স্বভাববৈগুণ্যে যে ক্ষুদ্রতার উৎকট প্রকাশ, তা তখন তাকে ভীষণভাবে পীড়িত করেছিল। তারই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় এই কবিতা।

বিদ্রূপের চাবুক তাঁর বিদ্যুতের মতো ঝলসে ওঠে- 'অন্নপায়ী বঙ্গবাসী স্তন্যপায়ী জীব/জন-দশেকে জটলা করি তক্তপোশে বসে।/ভদ্র মোরা শান্ত বড়ো, পোষ-মানা এ প্রাণ/বোতাম অাঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান।' আরও বলেন, 'তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু নিদ্রারসে ভরা/মাথায় ছোটো বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান।' অনুকম্পাহীন ধিক্কার তাঁর কণ্ঠে উচ্চগ্রামে বাজে- 'কিসের এত অহংকার! দম্ভ নাহি সাজে-/বরং থাকো মৌন হয়ে সসংকোচ লাজে।/অত্যাচারে মত্ত-পারা কভু কি হও আত্দহারা?/তপ্ত হয়ে রক্তধারা ফুটে কি দেহ মাঝে?/অহর্নিশি হেলার হাসি তীব্র অপমান/মর্মতল বিদ্ধ করি বজ্র সম বাজে?'
বরং তার বদলে গা গুলোন বিরূপতা নিয়ে চোখের সামনে তিনি দেখেন নির্লজ্জ চাটুবৃত্তি- 'দাস্যসুখে হাস্যমুখ বিনীত জোড় কর/প্রভুর পদে সোহাগ-মদে দোদুল কলেবর!/পাদুকাতলে পড়িয়া লুটি ঘৃণায় মাখা অন্ন খুঁটি/ব্যগ্র হয়ে ভরিয়া মুঠি যেতেছ ফিরি ঘর।'
এছাড়া বাঙালির মজ্জাগত চতুরালি ও ফাঁকিবাজি সবসময়ে তার মর্মবেদনার কারণ হয়েছে। হয়তো বৈরী পরিবেশে সব দেবতাকে তুষ্ট করে এ তাঁর টিকে থাকার কৌশল। নির্লজ্জ, কিন্তু নিরুপায়। 'যখন যেমন তখন তেমন'_ এই বাঙালিরই বাস্তব অভিজ্ঞতায় শেখা। গৌরবের নয়, তবু আত্দসংরক্ষণের। তা সোজা হয়ে দাঁড়াতে দেয় না। এঁকেবেঁকে সরীসৃপের মতো চলতে শেখায়। যখন-তখন ফোঁস করার, বা অসারের তর্জন-গর্জনের অভ্যাসও তার রপ্ত হয়। রবীন্দ্রনাথের সায় এতে মেলেনি। নানা প্রবন্ধে বা গল্পগুচ্ছে অসংখ্য টুকরো টুকরো দৃশ্যে তাঁর এই মনোভাবের পরিচয় ছড়িয়ে আছে। বাঙালির বাগাড়ম্বরও তাঁর কৌতুকের বিষয়। 'এতটুকু যন্ত্র হতে এত শব্দ হয়/দেখিয়া বিশ্বের লাগে বিষম বিস্ময়'- ঠাট্টার ছলে বলেছেন তিনি 'হিং টিং ছট' কবিতায়। এসব নিয়ে সব মিলিয়ে বাঙালির যে চেহারাটা তখন তার সামনে প্রকট হয়ে ওঠে, তাকে কোনো মর্যাদার আসনে তিনি বসাতে পারেননি। তা থেকে বেরিয়ে আসার কথাই তিনি নিরন্তর ভেবে চলেছেন। অন্যদেরও তাতে অনুপ্রাণিত করেছেন।
তবে এমনটিই ওই সময়ের বাঙালি চরিত্রের সাধারণ লক্ষণ বলে মেনে নিলে বিষয়টি, মনে হয়, একপেশে থেকে যায়। 'দুরন্ত আশা'-ই শুরু হয়েছে এই বলে, 'মর্মে যবে মত্ত আশা সর্পসম ফোঁসে,-' এই 'মত্ত আশা' জেগেছে কিন্তু তখন বাঙালিদের কারো কারো মনে। অন্ধ বিশ্বাসে মাথা না মুড়িয়ে, কুসংস্কারের জালে আটকে না থেকে তারা চিন্তার মুক্তি ঘটিয়ে স্বাধীন সত্তায় বিকশিত হতে চেয়েছে। গতানুগতিকতার দেয়াল ভাঙতে চেয়েছে প্রবল প্রাণের উচ্ছ্বাসে। ভালোমানুষীকে তা প্রশ্রয় দেয় না। প্রভুশক্তির বিচার যেখানে মানুষে-মানুষে বৈষম্য বাড়ায়, আর অপমান করে মানবাত্দার মর্যাদাকেই, সেখানে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছে নতুন ভাবনায় উদ্দীপিত নবযুগের বাঙালি। চেতনার এই জাগরণ তখনও সুস্পষ্ট আকার পায়নি; কিন্তু তা প্রকাশের পথ খুঁজে ফিরছে, 'অদৃষ্টের বন্ধনেতে দাপিয়া বৃথা রোষে' নিরেট প্রাচীরে মাথা কুটে মরছে। এই কবিতাতেই আরও পড়ি, 'হেলায়ে মাথা, দাঁতের আগে মিষ্টি হাসি টানি/বলিতে আমি পারিব না তো ভদ্রতার বাণী।/উচ্ছ্বসিত রক্ত আসি বক্ষতল ফেলিছে গ্রাসি,/প্রকাশহীন চিন্তারাশি করিছে হানাহানি।-' এই চিন্তার বীজ সবই বাংলার দেশজ ফসল থেকে পাওয়া নয়, অনেকটাই তার বাইরে থেকে উড়ে আসা। বাংলা ভাষায় সাধনা, তা থেকে জাতীয় চেতনার নতুন প্রেক্ষাপট রচনা, জ্ঞানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও বিস্তার সন্ধান, আর সব মিলিয়ে যে শক্তির আলোড়ন, তাকে আত্দস্থ করার চেষ্টা, তাদের অনেকটাই সমকালীন ইউরোপীয় ধ্যান-ধারণা আমাদের জল-হাওয়ায় বুনে নেবার আগ্রহের ফল। ফল অবশ্যই বাংলার। চেতনাও বাংলারই। তবে তাতে জন্মসূত্রেই বহুধারার মিশ্রণ। অবিমিশ্র শুদ্ধতার দাবি তার অচল। শ্বাস-প্রশ্বাসে স্বাভাবিক গ্রহণ-বর্জনের পরিণামের মতো বহুর সমন্বিত সুস্থিতির চলমান ক্রমবিকাশেই তার শুদ্ধতা।
কিন্তু নিশ্চেতনার অন্ধ কোটর থেকে যারা বেরিয়ে আসতে চায়, তারাও সবাই বিষয়টি একভাবে বোঝে না। চিন্তার নোঙর ফেলবে কোন জায়গায়, কম্পাসের কাঁটা ঘোরাবে কতদূর, কী রাখবে, আর কী ছাড়বে, এই প্রশ্নগুলোয় বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সাড়া দেয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন স্রোত চিন্তার নানা ধারায় প্রবাহিত হয়। পুরনোকেও নতুনভাবে দেখায়। সবগুলোকে একত্র করে আমাদের বাঙালি সত্তার জাগরণ। বাঙালি ছিলাম আগেও। কিন্তু বাঙালিত্বের চেতনা সার্বিক ছিল না। একক পরিচয়ের বহুমাত্রিক চেহারা অস্পষ্টই ছিল। খুব যে বেশি এটা কেউ খেয়াল করত, তাও না। এখন পাশ্চাত্যের চলমান ধ্যান-ধারণার অভিঘাতে বিষয়গুলো চোখের সামনে ফুটে ওঠে। পেছনে তাদের ইতিহাসের প্ররোচনা। এই বাংলারই। যদিও বাস্তবতার মুখোমুখি হবার দায় প্রতিটি কালখণ্ডে বর্তমানের। ওই সময়ের বর্তমান বাঙালিত্বের আবেগের জায়গাটা ভালোভাবে চিনিয়ে দেয়। খণ্ড ক্ষুদ্র জীবনের আত্দগ্লানি, আর তা থেকে বেরিয়ে আসার আকুতি, দুই-ই তাতে মেশে। যদিও, আবার বলি, সবার নয়; যাদের, তারাও একইভাবে একই জায়গায় সমান গুরুত্ব দেয় না। ফলে সমগ্রের ধারণা, মত ও পথ নানাজনের দৃষ্টিকোণ থেকে নানাদিকে ছোটে। পশ্চাৎমুখী ভাবনাও তাতে জড়িয়ে যায়। বারবার পেছন থেকে তা টেনে ধরে। এবং বাঙালির নিজস্বতার পতাকা ওড়াতে কখনো কখনো তাকেও জাহির করতে হয়। এসব নিয়েই বাস্তব। বাঙালি পরিচয়ের ইতিবাচক উপাদানগুলো একটু একটু করে যেমন একত্রে একজায়গায় দানা বাঁধতে থাকে, তেমনি তার নেতিবাচক দিকগুলোও সক্রিয়ই থাকে। তাদের জড়ত্ব অনেক বেশি জমাট। জনগণের বিশ্বাসে ও অভ্যাসেও তাদের দখল যথেষ্ট মজবুত। মাঝে মাঝে বাঙালি চেতনায় প্রেরণাও জোগায় তাদের কোনো কোনোটা। ইতি ও নেতির দ্বান্দ্বিক অবস্থা অতএব সোজাসাপ্টা নয়। সরলাঙ্কের হিসাবও এখানে অচল। এতে জটিলতা বাড়ে। বাঙালি-মানসে ভাবনার ও ঘটনার অসংখ্য কাটাকুটির দাগ পড়ে। তারা মিলিয়ে যায় না। তাদের নিয়েই তার পথচলা। পথের দিশা খোঁজা। 'দুরন্ত আশা' কবিতায় তারই ইঙ্গিত। ইঙ্গিত অন্ধ তামসে ডুবে থেকেও তা থেকে জেগে ওঠার আকাঙ্ক্ষার। সর্পিল গতিপথে সেখান থেকে ইতিহাস তাকে টেনে নিয়ে চলে। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পথ। গৌরব আছে। লজ্জাও আছে। স্বপ্ন আছে। স্বপ্নের ভস্মশেষও আছে। এটুকু বলা যায়, এক জায়গায় সে দাঁড়িয়ে নেই। আর, চলার মাশুল চড়া দামেই সে দিয়ে চলেছে বরাবর।
'দুরন্ত আশা' রচিত হবার সতের বছর পর ১৯০৫-এ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ প্রশাসনের নির্দেশে অখণ্ড বাঙালি পরিচয়ের বিকাশের ওপর পরিকল্পিত আঘাত নেমে আসে। বাংলা ভাগ হয়। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিও কাজ করে তার পেছনে। কিন্তু নবলব্ধ বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ভেতর থেকে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে তার বিরুদ্ধে বিপ্লবী আন্দোলনে। তার আবেগ জনগণের ভেতর দাবানলের মতো ছড়ায়। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। চিরাচরিত ভীরুতা ও জড়তা থেকে বাঙালি-মানস বেরিয়ে আসতে থাকে। সম্পূর্ণভাবে না হলেও চিন্তার মুক্তিও তাতে যোগ হয়। এবং তাতে প্রেরণা জোগায় ঔপনিবেশিক শাসনে চালু হওয়া সেক্যুলার পাশ্চাত্য শিক্ষাই। মানবিক মূল্যবোধ সাম্প্রদায়িক গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্রকে ধরতে চায়। অবশ্যই তা সম্পূর্ণ হয় না। অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায় তার ভেতর। এবং সংস্কার শাসিত স্ববিরোধও। তবু তার শক্তি ও আবেগকে উপেক্ষা করা যায় না। ব্রিটিশ সরকারকেও হার মানতে হয়। সব দমন-পীড়ন ব্যর্থ হলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করার ঘোষণা দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। আহত আত্দসম্মান পুনরুদ্ধারের ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এই প্রথম বাংলার মানুষ তার বাঙালি পরিচয়ের অহঙ্কারের ওপর দাঁড়িয়ে এক হয়। জয়ীও হয়। 'দুরন্ত আশা'য় কবির ভর্ৎসনা, মনে হয়, কাজে দেয়। তবে বহু যুগের সঞ্চিত ক্লেদ এক আঘাতে যায় না। শুধু আবেগের কাছে হাত পেতে তাকে দূর করা যাবে, এমনটি আশা করাও ঠিক নয়। নড়ে-চড়ে-পাশ ফিরে তা আবার থিতু হয়। অন্ধকারের জমাট বাঁধা চলতেই থাকে। তফাৎ এই, তারা নতুন নতুন চাকে ভাগ হয়ে যায়। নখ-দাঁত বের করে একে-অন্যে মারামারিতেও জড়িয়ে পড়ে। বাঙালির সার্বিক উত্থান কোনো সহজ পথ খুঁজে পায় না।
সমস্যা একটা তৈরি হয় তার আত্দপরিচয়ের ভিত্তি নিয়েই। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের উত্তাল আবেগে তা একরকম চাপা পড়ে গিয়েছিল। ভদ্র সমাজ এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। বিভিন্নজন সেখানে আপন আপন অবস্থানকেই স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিয়ে এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায়নি। কিন্তু বাংলা আবার জোড়া লাগতেই ওই প্রশ্নগুলো প্রবল তোড়ে সামনে চলে আসে। ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ধ্যান-ধারণায় অস্বচ্ছতা, অথবা পরস্পরের বৈপরীত্য বা দূরত্ব তাদের আরও প্রকট করে তোলে। বাঙালির অন্তর্জগতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ থেকে নিষ্কৃতি মেলে না। সুযোগ বুঝে ঔপনিবেশিক রাজশক্তি এইসব অন্তর্বিরোধে ইন্ধন জুগিয়ে চলে। স্বাধীনতাকামী মানুষের ঐক্য শিথিল হলে সহজতর হয় তাদের রাজ্যশাসন। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। বাঙালির সমন্বিত অধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গভঙ্গ রদের বিপুল বিজয় বাস্তবে কোনো সুফল বয়ে আনে না। ভদ্রজনদের আত্দকলহ সমূহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা জাগায়। তার রাশ টেনে ধরা যায় না।
জনগণের আত্দপরিচয়ে সাম্প্রদায়িকতা অগ্রাধিকার পেলে জাতীয় চেতনা মার খায়। তেমনটিই ঘটতে শুরু করে ওই সময়ের বাংলায়। অতীত ঐশ্বর্যের দিকে মুখ ফেরাতে গিয়ে আপন আপন ধর্মের ধ্বজা উঁচিয়ে ধরে হুঙ্কার ছাড়েন কেউ কেউ। তাতে পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা বাড়ে। বাড়ে একে-অন্যে অবিশ্বাস। আরও তিক্ততা যোগ হয় শিক্ষিত ভদ্রজনদের চাকরিবাকরির প্রতিযোগিতায়। এমনিই ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় চাকরির সুযোগ কম। সরকারি উচ্চপদের সঙ্গে সামাজিক ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির সরাসরি যোগাযোগ। যারা এ সুযোগ পেয়ে এসেছে, তারা তা ছাড়তে নারাজ। অন্যদিকে বঞ্চিতরাও ভাগ চায়। রেষারেষি তীব্রতর হয়। সহমর্মিতার জায়গাগুলো হারিয়ে যেতে বসে। ছোট চাষী বা ক্ষেতমজুররা চায় জমির নিশ্চিত অধিকার। জমিদাররা অনুদার। এখানেও ঢুকে পড়ে সাম্প্রদায়িক হিসাব-নিকাশ। বাঙালি চেতনা রসাতলে যায়। বিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকেই ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখানে-ওখানে ঘটতে শুরু করে। ছেচলি্লশে ঘটে তার ভয়াবহ বিস্ফোরণ। সাতচলি্লশে দেশভাগ, আর স্বাধীনতা। ভাগ হয় আবার বাংলাও। বাঙালি চেতনায় বিপর্যয় এক চূড়ান্ত পরিণতি পায়। 'দুরন্ত আশা' কবিতায় বাঙালির নিষ্ক্রিয়তায় ধৈর্য হারিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এখন তার সচেতন অংশ অতিমাত্রায় সক্রিয়। এবং তার অনেকটাই একইরকম বৈনাশিক। সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধি তাদের আত্দকলহে প্রশ্রয় দেয়। আত্দকলহ আত্দবিনাশের পথে টানে। একটু ভেবে দেখলে ধরা পড়ে, তার মূলেও ওই নিষ্ক্রিয়তাই। কূপমণ্ডূকের উদ্যমহীন আত্দপরায়ণতা ক্ষুদ্র স্বার্থের যে প্রাচীর গড়ে তোলে, তা না ভেঙে সক্রিয় হয়ে উঠলে ঘোলাজলের মন্থনে নোংরার উদগার ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। ঘটেও তেমনই।
তবে মানসমুক্তির যে আবহ রচিত হয়ে আসছিল, এবং যার পূর্ণাবতার রবীন্দ্রনাথ, তা এই ডামাডোলে চাপা পড়ে গেলেও তার জীবনীশক্তি হারায় না। পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণার ওপর ভর করে বাঙালি পরিচয়ের বুদ্ধিগ্রাহ্য আকার একটা দাঁড়িয়ে যায়। ইতিহাস ও ভৌগোলিক বিস্তার দুটোই তাতে স্ফূর্তি জোগায়। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের হাতে বাংলা ভাষা যে স্বয়ম্ভর হয়ে ওঠে তার ভাব প্রকাশের ক্ষমতায় বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়, তাতে তার গৌরবই শুধু বাড়ে না, তার আত্দপরিচয়ের অহঙ্কারও চরিতার্থ হবার সুযোগ পায়। এবং তা জীবনবিচ্ছিন্ন হয়ে নয়। কর্মে ও ভাবনায় সব বাঙালির একে-অন্যে যোগাযোগে তার সচলতা বাড়ে; তাকে অবলম্বন করে তারা নিজেদের চেনে, চেনায়। এই চেনা-জানাতেও নেতৃত্ব দেন রবীন্দ্রনাথ। বাঙালিত্ব সম্প্রসারিত হয় বিশ্বমানবতায়। তাতে বাঙালিত্ব হারিয়ে যায় না, বরং তার ঐশ্বর্যের বিচ্ছুরণ ঘটে। চিন্তার মুক্তি বাঙালিকে তার গ্রাম্য সংকীর্ণতা থেকে, সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধি থেকে মুক্তির পথ দেখায়। শুধু যে বাইরে থেকে তার প্রেরণা খোঁজা, তা নয়, তার ধারা প্রবহমান বাংলাতেও। সুফি ভাবনা, বৈষ্ণব পদাবলী, বাউল দর্শন, এ সবই ব্যক্তি-মানুষের চিত্তকে বৃহত্তর মানব সমাজে প্রসারিত করে; সংস্কারের বেড়াজাল ভেঙে জীবনের সহজ বিস্তৃতি ঘটায়। জাতিসত্তার নির্মাণে বাঙালি এদের আপন বলে আত্দস্থ করতে থাকে। রবীন্দ্রনাথও তার 'মানুষের ধর্ম' বক্তৃতামালায় শ্রদ্ধার সঙ্গে এদের উত্তরাধিকার স্বীকার করেন। এই মানসমুক্তি শুধু বিশেষ কোনো জনসমষ্টিতে আটকে থাকে না। তা ছড়ায় সর্বস্তরে সবার ভেতরে। তবে সচেতন উদ্যোগে বেশিজনের ভেতরে নয়; যদিও তার কার্যকারিতা বিপুল, এবং পরিণাম সুদূরপ্রসারী। বিশ শতকের গোড়াতেই আমরা পাই বেগম রোকেয়াকে; আরও কিছু পরে সাহিত্য পত্রিকা 'সওগাত'-এর যাত্রা শুরু; বিশের দশকে ঢাকাকেন্দ্রিক 'বুদ্ধির মুক্তি' আন্দোলন। আবার এই বিশ শতকের প্রথম ভাগেই বাংলাতেও অনেকের কানে পেঁৗছোয় সমাজতন্ত্রের বাণী। স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি ঘটে নবতর মূল্যবোধের আবাহন। প্রথার শাসন ভেঙে বেরিয়ে আসার মতো পরিবেশ একটা তৈরি হতে থাকে। এসব সেই একই সময়ে, যখন বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের সফলতাকে অস্বীকার আর-এক-ভাঙনের কাছে আত্দসমর্পণ অনিবার্য করে তুলেছে। তবে ভেতরে ভেতরে উদার মুক্তির আহ্বানে মনোগঠনের প্রক্রিয়া যে বৃথা যায় না, তা আমরা জানতে পারি অল্প কিছু পরেই। এই জানার পালা শেষ হয়নি আজও। এবং তার জন্যে দাম দিয়ে চলেছি ভয়ঙ্কর রকম বেশি। তাতে সাহস আছে। বীরত্ব আছে। এদের গৌরব কম নয়। কিন্তু হিংসা-প্রতিহিংসার পরিমণ্ডল একটা তৈরি হয়। তার বিস্তার বেড়েই চলে। চিন্তায় ও কাজে আনন্দময় মুক্তি ঠিক মেলে না। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জয় আসে বারবার। কিন্তু জয়ের সুফল সেভাবে ঘরে তুলতে পারি না। হাতের আঙুলের ফাঁক গলে তা বেরিয়ে যায়। লড়াইয়ের পোড়ো জমিতে দাঁড়িয়ে আবার আমরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ি। হৃত অধিকার, অথবা নবসৃষ্ট অধিকার আয়ত্তে আনার স্বপ্নও সঙ্গে সঙ্গে চলে। মানবজমিন আর পতিত পড়ে থাকে না। যদিও অসংখ্য ফাটলের রেখা তাতে গজায়। সবগুলো তারা মিলিয়ে যায় না। কোনোটা বা ফেটে চওড়া হয়। তাদের ওপরেই চলতে থাকে স্বপ্নের আনাগোনা। বাঙালির অধিকার আদায়ের স্বপ্ন। এক সম্পন্ন বিশ্বে পা রাখার স্বপ্ন। জীর্ণতার আর ক্ষুদ্রতার আবর্জনা সরিয়ে সৌহার্দ্যে ও সহমর্মিতায় মিলিত উদ্যোগে এগিয়ে যাবার স্বপ্ন। গৌরবের ও মর্যাদাহীনতার যে দ্বান্দ্বিক বিপন্নতার সৃষ্টি হয়- সৃষ্টি করে আপন স্বভাবের তাড়নায় নানা কর্মে নিয়োজিত এ দেশেরই মানুষ- তাকে মেনে নিয়েই তাকে অতিক্রম করার ওই পথ খোঁজা। সুস্থতার ও কল্যাণের প্রত্যাশায় উন্মুখ আজকের সচেতন বাঙালির এমনটাই বুঝি বিধিলিপি।
সাতচলি্লশে দেশভাগের পর এক বছর পেরোতে না পেরোতেই পাকিস্তানি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তার পূর্বখণ্ডে এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা প্রথম হোঁচট খায় যখন কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ খোদ ঢাকার বুকে দাঁড়িয়েই হুঙ্কার ছাড়েন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে তার রাষ্ট্রভাষা। যেখানে অধিকাংশ মানুষের বাস পূর্ব বাংলায় এবং বাংলা ভাষা যেখানে শুধু পাকিস্তানে নয়, গোটা উপমহাদেশেই সবচেয়ে সমৃদ্ধ, সেখানে অতি অল্পসংখ্যক অধিবাসীর মুখের ভাষা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া বাঙালিদের কাছে শুধু অপমানের নয়, অযৌক্তিকও। এক হুকুমেই তারা পরিণত হবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে। পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষী উচ্চবর্গীয় স্বার্থচক্রের হাতে চলে যাবে তাতে সব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চাবিকাঠি। নতুন ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের অবধারিত শিকার হবে এখানকার বাংলাভাষী মানুষেরা। প্রতিবাদ হয় তাৎক্ষণিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় কায়েদে আজমের মুখের ওপর সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেয়- এই সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। শাসকচক্র এতে ভ্রূক্ষেপ করে না। পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের স্বাভাবিক ও ন্যায্য অধিকারের ওপর এ আঘাত প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ মেনে নেয় না। সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এ যেন ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আর এক বিস্ফোরণ।
'দুরন্ত আশা'র বাঙালি চেহারা এতদিনেও খুব একটা পাল্টায় না। যোগ হয় তার সঙ্গে আরও কিছু। প্রত্যেকে থাকে যে-যার তালে। পারস্পরিক ঈর্ষা মজ্জাগত। পরনিন্দায় বিপুল আনন্দ। সঙ্গতি এখানে পলাতক। রাষ্ট্রনির্মাণে যে নৈর্ব্যক্তিক নির্মাণকুশলতা চাই, তা গড়ে উঠতে পারে না। গ্রাম্যতাই গ্রাস করে নাগরিক চেতনা
বাঙালির আত্দাভিমানে একই রকম আঘাত। একই রকম তাদের কোণঠাসা করার চক্রান্ত। যারা ভেবেছিল নতুন রাষ্ট্রে তাদের অধিকার অবাধ হবে, তারা থমকে দাঁড়ায়। প্রায় একই সময়ে সরকার ইলা মিত্রের নেতৃত্বে নাচোলের কৃষক আন্দোলন যে নির্মমভাবে দমন করে, তাতে কৃষকের স্বপ্নও ভেঙে তছনছ হতে থাকে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও অসহিষ্ণু ছাত্র সমাজ তাদের সমষ্টি চেতনায় সাড়া দিয়ে একই সরলরেখায় চলে আসে। একশ' বছর ধরে মানবমুক্তির যে শিা একটু একটু করে দানা বাঁধছিল, তাতেও তীব্র অনুরণন জাগে। ছড়িয়ে যায় তা সর্বত্র। পাকিস্তানি মতাদর্শের সঙ্গে তাকে খাপ খাওয়ানো আর সহজ ব্যাপার থাকে না।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন এইভাবে গণআন্দোলনের আকার নেয়। আপাতদৃষ্টে ছাত্ররাই তার নেতৃত্বে। প্রকাশ্য প্রতিবাদ মিছিলেও তারাই। কিন্তু পেছনে থাকে জনগণের পুঞ্জীভূত ােভের আবেগ। একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদদের রক্তে তাদের বুক ভিজে যায়। প্রত্যেকের কাঁধে যেন মৃত স্বপ্নের শব। মাত্র ক' বছর আগে ওই স্বপ্ন ছিল জীবন্ত। পাকিস্তানের স্বপ্ন-বিলাস। পরে যারা শাসক হয়ে বসেছে মতার মসনদে, তারাই তা দেখিয়েছিল। কিন্তু অচিরেই তা ভেঙে চুরমার। নিকৃষ্ট ঔপনিবেশিক দখলের বন্দোবস্তই যেন স্থায়ী করতে চায় পাকিস্তান। তার জন্যেই ভাষার ওপরে আঘাত। তার কারণেই রচনা ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতার আড়াল। জনগণের সায় মেলে না এতটুকু। নিঃশব্দে তারা প্রহর গোনে। সুযোগ পায় চুয়ান্নর প্রাদেশিক নির্বাচনে। দখলদার মতাসীনদের বিরুদ্ধে যে গণরায় তারা ঘোষণা করে, তা দ্ব্যর্থহীন ও একরকম সর্বসম্মত। পাকিস্তানি শাসনের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে তাতেই। অনেকে বলেন, ভাষা-আন্দোলন শুধু ছাত্রদের ব্যাপার। যোগ নেই এতে বৃহত্তর জনসমাজের। আর রাজনীতি শুধু ওপর কাঠামোয় ঘটে যাওয়া অভিনয়। গণচেতনায় প্রভাব তার সামান্যই। কিন্তু সুযোগ পেলে আমাদের জনগণ যেভাবে তাদের মত প্রকাশের অধিকার ব্যবহার করে, তাতে এমন অভিমত অসার বলেই প্রতীয়মান হয়। পাকিস্তানে প্রথম তার প্রমাণ মেলে চুয়ান্নর প্রাদেশিক নির্বাচনে। তার চূড়ান্ত প্রমাণও ওই নির্বাচনেই। সেটা এখানে পাকিস্তানি শাসনের অন্তিম লগ্নে উনিশশ' সত্তরে।
তবে চুয়ান্নয় কায়েমি স্বার্থবিরোধী যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বিজয় আমাদের বাস্তব অবস্থায় কোনো উন্নতি ঘটায় না। বরং তা আরও জটিল হয়। অনিশ্চয়তাও বাড়ে। সত্য কথা, কেন্দ্রের প্রভাব বলয় কলকাঠি নেড়েছিল। ঔপনিবেশিক বিধির ৯২-ক ধারা জারি করে দেশদ্রোহিতার ও অযোগ্যতার অপবাদ দিয়ে নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারকে তারাও বরখাস্ত করেছিল। কিন্তু এ অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যায় না, আমাদের রাজনৈতিক প্রতিভা ও তার সাংগঠনিক সদিচ্ছা সে সময় যথাযথ প্রতিফলিত হয়নি। বিপরীতে দলীয় নেতৃত্বের ছোট লাভের পেছনে ছোটায় সুযোগ-সন্ধানী তৎপরতা, অন্তর্কলহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ভীষণভাবে উপহাসের বিষয় করে তুলেছিল। সাধারণ মানুষের আস্থার যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা তারা করেনি। বিপুল আশা জাগিয়ে গভীর হতাশাতেই তারা জনগণকে ঠেলে দিয়েছে। 'দুরন্ত আশা' কবিতায় বাঙালি সন্তানদের যে দুর্বলতাগুলো ল করে রবীন্দ্রনাথের তীব্র-তী্ন বিদ্রূপ, তা সবই বিকট হয়ে দেখা দেয় আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে। যুগ-যুগ ধরে স্বভাব-লালিত অভ্যাসের মাধ্যাকর্ষণ আমাদের শুধু নিচেই টানে। অভিজ্ঞতালব্ধ বাংলার প্রবাদগুলো, যেমন, 'নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ', 'যখন যেমন তখন তেমন', 'চোরে চোরে মাসতুত ভাই', 'ফেল কড়ি মাখো তেল, কে কার পর', 'চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা', 'ভাগের মা গঙ্গা পায় না', 'লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়'_ ইত্যাদি তখন রাজনীতির ডামাডোলে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সমষ্টি জীবনে কল্যাণভাবনা আমাদের ভেঙে ভেঙে যায়। সেখানে উদ্দেশ্যহীনতা জাঁকিয়ে বসতে থাকে। মানতেই হয়, বাঙালি-মেধা তখন তার সামূহিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছে। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে মতার কাড়াকাড়িতে হাত পাকাবার চেষ্টা এমনকি রাজনীতির চুনোপুঁটিদেরও। ফল দাঁড়ায় এই, আমাদের অধিকার আদায়ের সব আন্দোলন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসে। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের সেপাই আমলা-ভূস্বামী-পুঁজিপতি-কায়েমি স্বার্থ চক্র যখন ১৯৫৮য় সব রাষ্ট্রীয় মতা করায়ত্ত করে সমর শাসন জারি করে, তখন তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার মতো বাস্তব অবস্থা আর ছিল না। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত বানচাল করায় আমরা সফল হয়েছি। এখন একই উদ্দেশ্যে সামরিক একনায়কতন্ত্র কায়েম হলে আমরা তাৎণিকভাবে প্রায় নীরবে তা মেনে নিই। সাধারণ মানুষ প্রকারান্তরে তাকে স্বাগত জানায়।
আসলে সবাই মিলে একত্রে কাজ করার গঠনাত্দক সংস্কৃতি বাঙালিদের ভেতর খুব দুর্বল। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। অসংখ্য নদীনালা। ঐতিহ্যগতভাবে কৃষকেরা ধান ফলায়; জেলেরা মাছ ধরে; গৃহস্থের গোয়ালঘরে গরু। প্রত্যেকে যার যার মতো। অন্যের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন খুব কম। সরল উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপুল সমৃদ্ধি নিশ্চয় ছিল না; তবু খরা বা বন্যা না হলে দিব্যি মাছ-ভাত খেয়ে বাঁচত সবাই। কেউ কারো পরোয়া তেমন করত না। জনসংখ্যার চাপ আমাদের এই সময়ের সমস্যা। একশ' বছর আগেও তা প্রকট ছিল না। কোথাও কোনো সংকট দেখা দিলে একটু সরে আর কোথাও কুঁড়েঘর তুলে থাকা যেত। জীবনযাপন প্রণালিতে কোনো হেরফের হতো না। এই অভ্যাসের স্মৃতি এখনও আমাদের চালিত করে। নিজেরটা ছাড়া আর তেমন বুঝি না। সবাই মিলে কিছু গড়ে তুলতে গেলে ঝগড়াঝাঁটি-দলাদলি-মারামারিতে তা পণ্ড করি। চুয়ান্নর প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর আমরা আমাদের সংহতি বজায় রাখতে পারিনি। আত্দপ্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ হেলায় হারিয়েছি। কায়েমি স্বার্থের দুরভিসন্ধি ছিল অবশ্যই। তা সবসময়ই থাকে। আমাদের দুর্বলতায় তা সফল হতে পেরেছে। পরেও এমন ঘটেছে। এবং তা আরও শোচনীয়ভাবে।
তবে নিজেরা একত্রে কাজ করতে পারি না, এ যেমন সত্য, অন্যের খবরদারি সহ্য করি না, এও তেমনি সত্য। সমর শাসন চালু হবার বছর দুয়ের ভেতরেই এ অঞ্চলের বাঙালিরা আবার অধিকার সচেতন হয়ে উঠতে থাকে। নগদ পাওনার আশায় কেউ কেউ রাজশক্তির তাঁবেদারি করে, কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে সায় দেয় না; বাঙালি পরিচয়ের অহংকার আবার ফিরে আসে। 'দুরন্ত আশা'র ভাষায় 'দাস্যসুখে বিনীত জোড় কর' কিছু কিছু পণ্ডিত 'গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল' সেজে ঘুরিয়ে বাংলা ভাষাকে উর্দু-আরবি পরিবারে ঠেলে দেবার সুপারিশ করেন। কেউ বলেন, হরফ পালটাও, আরবি অরে বাংলা লেখ; আবার আর কেউ উপদেশ দেন, তৎসম শব্দ সব ঝেঁটিয়ে বিদায় করো, কারণ তাতে বিজাতীয় পৌত্তলিকতার গন্ধ। শিতি সমাজের মূলধারায় তাঁদের কথা কেউ তেমন গুরুত্ব দিয়ে শোনেন না। জনগণের কাছেও তাঁরা পাত্তা পান না। বাঙালি সত্তাকে বিতর্কিত বা বিপর্যস্ত করার চক্রান্ত হালে পানি পায় না। ১৯৬১তে ছিল রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথকে সামনে রেখে বাঙালি এবার তার সাংস্কৃতিক সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়। কণ্ঠে তাদের গান, 'ওদের বাঁধন যতই শক্ত হবে, মোদের বাঁধন টুটবে ততই টুটবে।' গ্রামে-গঞ্জে-হাটে-মাঠে ছেলেমেয়েরা গেয়ে বেড়ায়, 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি'। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে বাঙালি জাতীয়তা একটা চেতনাগ্রাহ্য রাজনৈতিক আকার পেতে থাকে। সেপাই-রাজ সব সরকারি গণমাধ্যমে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার ওপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে। এতেও দালালি করার কিছু বশংবদ বুদ্ধিজীবী জোটেন। কিন্তু জনগণ এখানেও তাদের প্রত্যাখ্যান করে। রবীন্দ্রনাথ স্বমহিমায় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন।
এদিকে পরিস্থিতি দ্রুত পালটাতে থাকে। পূর্ব বাংলার শোষণ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। বিধিবদ্ধ সরকারি হুকুমের ছত্রছায়াতেই এখানকার সম্পদ পাচার হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানে। বৈষম্যমূলক বাণিজ্য নীতি ও ব্যাংকের কারবারে সঞ্চয়ের অবাধ স্থানান্তর এ অঞ্চলের উদ্বৃত্ত শোষণে কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠে। যেহেতু একই রাষ্ট্র, তাই এভাবে সম্পদ লুণ্ঠনে কোনো আইনগত বাধা থাকে না। বরং আইনের ভেতরেই লুণ্ঠনের প্রশ্রয় থাকে। বিনিয়োগ এখানে স্পষ্টতই কম হয়। আঞ্চলিক সুরার কোনো ব্যবস্থাও ভালোভাবে গড়ে ওঠে না। পঁয়ষট্টির ভারত-পাক যুদ্ধে তার করুণ দশা ফুটে ওঠে। পূর্ব বাংলার মানুষ বুঝতে পারে তারা ঠকেছে; এবং ঠকে চলেছে। ােভে তারা ফেটে পড়তে চায়। এই অবস্থাতেই তখন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ডাক দেয় স্বাধিকার আন্দোলনের। ছেষট্টিতে ঘোষণা করে তারা ছয়-দফা দাবি। তাদের অঙ্গীভূত করে ছাত্ররাও শুরু করে নয় দফার আন্দোলন। অগি্নগর্ভ হয়ে ওঠে দেশ। ঊনসত্তরে তা রূপ নেয় গণআন্দোলনের। ঔপনিবেশিক দমননীতিও তীব্রতর হয়। আগেই আগরতলা ষড়যন্ত্রের নামে কারারুদ্ধ হন শেখ মুজিব। ধরপাকড় আরও বাড়ে। বাড়ে আন্দোলনের তীব্রতাও। সবার ভেতরে ব্যাপ্ত হয় বঞ্চনার ও বিচ্ছিন্নতার চেতনা। প্রতিবাদ দ্রুত প্রতিরোধ ও প্রত্যাখ্যানের দিকে এগিয়ে যায়। প্রত্য সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। মানুষ ভয় পায় না। বাঁধভাঙা বন্যার মতো তারা রাজপথে নামে। নামে পাকিস্তানি সেনারাও। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে শহীদ হন কত স্বাধিকারকামী বাঙালি! তাঁদের ভেতর জানুয়ারিতে শহীদ হন ছাত্র নেতা আসাদ, ফেব্রুয়ারিতে বন্দি অবস্থায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর শামসুজ্জোহা। গণমানুষের অসহায় ক্রোধ দাবানলের মতো ছাড়ায়। অস্বীকার করতে চায় তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রকেই। মতাচক্র বোঝে একে সামলানো তাদের আয়ত্তের বাইরে। সংঘাতের পথ থেকে তারা সরে আসতে বাধ্য হয়। প্রত্যাহার করে নেয় তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। শেখ মুজিব মুক্তি পান। মুক্তি পান তাঁর সহযোদ্ধা বন্দিরাও। এদিকে সমরনায়ক আইয়ুব খান মতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। নতুন সমরশাসক ইয়াহিয়া খান অঙ্গীকার করেন, দু'বছরের ভেতর অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন। সেনাশাসনের অবসান ঘটবে তখন। অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলনে বিপুল বিজয় বাঙালির মনোবল আরও বাড়িয়ে দেয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন এ দেশের সব বাঙালির অধিসংবাদী নেতা। তিনি এবার দেশকে চালিত করবেন তার চূড়ান্ত সংগ্রামে_ তার স্বাধীনতা অর্জনের পথে, তার মুক্তির অন্বেষণে। এই সংগ্রামে তিনি হয়ে উঠবেন বঙ্গবন্ধু। সংগ্রাম শেষে জাতির পিতা।
আমরা জানি, এই স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির আত্দাভিমান আকাশ ছুঁয়েছিল। আত্দনিয়ন্ত্রণের অধিকারই শুধু নয়, নিজের রাষ্ট্র নিজের মতো পরিচালনা করার দায়িত্বও এবার তারা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। অগ্র-পশ্চাৎ কোনো বিবেচনা তাদের মাথায় আসেনি। আবেগের ঐক্যে তারা উদ্দাম হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এই মুক্তি সংগ্রাম স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া কোনো সামষ্টিক উদ্যোগ বা সামষ্টিক ল্য সামনে তুলে ধরেনি। একদিক থেকে খুব স্থূলভাবে দেখলে বলা যায়, এর পেছনে কাজ করেছিল ব্যক্তির বা ছোট ছোট দলবদ্ধ গোষ্ঠীর নিজের নিজের মতো করে স্বাধীনতার অর্থ বানিয়ে আপন আপন স্বপ্নপূরণের তাগিদ। আদর্শ ও ল্য স্থির করে দীর্ঘসময়ের সুশৃঙ্খল সংঘবদ্ধ সুপরিকল্পিত একক সংগ্রাম এ ছিল না। বঙ্গবন্ধু যে ডাক দিয়েছিলেন, 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল', জনগণ আরিকভাবে সাড়া দিয়েছিল তাতে। সেইসঙ্গে লড়াই করেছিল তারা নিজের নিজের মতো করে। সত্য কথা, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ও নির্দেশেই ঘটেছিল মূল যুদ্ধ। কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল আত্দনিয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বতঃস্ফূর্ত তৎপরতা। উল্লেখযোগ্য বাহিনীও তৈরি হয়েছিল বেশ ক'টি। অশেষ গৌরবের ছিল তাদের সংগ্রাম। স্মরণীয় তাদের অনেকের আত্দত্যাগ। কিন্তু কোনো যোগাযোগ বা বোঝাপড়া তাদের ভেতর গড়ে ওঠেনি। যৌথ চেতনার প্রকাশ সেভাবে ঘটেনি। তাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যখন হানাদারমুক্ত হলো, তখন প্রত্যেকে এগিয়ে এলো দেশগড়ার কাজে হাত লাগাবে বলে, দেশসেবার সুযোগ কাজে লাগাবে বলে। কিন্তু সমন্বয়হীনভাবে, এবং তার চেয়েও বড় কথা, আপন আপন কৃতিত্বের ও কর্তৃত্বের আড়ম্বর নিয়ে। আরও ছিল, খুব প্রবলভাবেই ছিল, প্রত্যেকের পাওনা, অধিকারে প্রত্যেকের নিজ নিজ অংশ, বুঝে নেবার অসহিষ্ণু তাড়না। তার প্রতিফলন ঘটে অনেকের বেহিসেবি আচরণে, কারো কারো উচ্ছৃঙ্খল আত্দপ্রচারণায়, এমনকি এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই বিধি-বিধান প্রকাশ্যে অস্বীকার করার দুঃসাহসে। সচেতন জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠার আগেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সম্পদের অভাব। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ায় সবারই প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। দুটোকে মেলানো অসম্ভব। অন্তত যখন-তখনই। কাড়াকাড়িও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে তাদের মতার অপব্যবহার। স্বপ্নের সোনার বাংলার আভাসটুকুও মিলিয়ে যেতে বসে। দুঃস্বপ্নেরা আবার ফিরে আসে। চুয়ান্নর নির্বাচনে বিপুল বিজয় মানুষের মুক্তির ও কল্যাণের যে-সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তা শুরুতেই বিনষ্ট হয়। এবারেও বাংলার স্বাধীনতা, হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির যা শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার দীপ্তি দ্রুত হারিয়ে যেতে বসে। স্বাধীনতার শত্রুরা বসে থাকে না। নতুন করে চক্রান্তের জাল বোনে। সফলও হয়। সফল হবার মতো পরিবেশও তৈরি হয়। তৈরি করে এ দেশেরই সুবিধাভোগী ও সুবিধাবাদী মানুষের অতিরিক্ত লোভ ও কেড়ে খাবার অপচেষ্টা। তারই সুযোগ নিয়ে চক্রান্তকারীরা রাতের অন্ধকারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হত্যা করে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে। আরও হত্যা করে কারাগারে বন্দি করে চার জাতীয় নেতাকে। দেশ আবার চলে যায় নিকৃষ্ট সামরিক শাসনের খপ্পরে। পাকিস্তানি ভূত সব কাঁধের ওপর চেপে বসে কাড়া-না-কাড়া বাজায়। 'মুক্তিযুদ্ধ, হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।' যেতে দিই তা আমরাই।
'দুরন্ত আশা'র বাঙালি চেহারা এতদিনেও খুব একটা পাল্টায় না। যোগ হয় তার সঙ্গে আরও কিছু। প্রত্যেকে থাকে যে-যার তালে। পারস্পরিক ঈর্ষা মজ্জাগত। পরনিন্দায় বিপুল আনন্দ। সঙ্গতি এখানে পলাতক। রাষ্ট্রনির্মাণে যে নৈর্ব্যক্তিক নির্মাণকুশলতা চাই, তা গড়ে উঠতে পারে না। গ্রাম্যতাই গ্রাস করে নাগরিক চেতনা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে নৈর্ব্যক্তিক দতা কোনোভাবেই ফোটে না। প্রত্যেকে মনে করে, তার কিছু পাওনা আছে এবং সেইটিই একমাত্র ন্যায়সঙ্গত; অথচ রাষ্ট্র তা বেশিরভাগই মেটায় না। তাই রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের উদাসীনতা বাড়ে। কারো কারো বেলায় তা বিতৃষ্ণায় গিয়ে ঠেকে। স্বাধীনতা তার মূল্য হারায়।
আমাদের ভাষা আন্দোলন আজ গোটা পৃথিবীর অহংকার। একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বমাতৃভাষা দিবস। কিন্তু বাংলা ভাষাকে মুখের ভাষার কাছাকাছি করার নামে তাকে নৈরাজ্যিক বিশৃঙ্খলা এনে সুকৌশলে তাকে অকার্যকর করে ফেলার ফন্দি-ফিকিরেও ব্যস্ত এ দেশেরই অনেক গুণধর মাতব্বর। বিতর্কিত ভাষা নিয়ে আমরা এক পা যেতে দু'পা পেছুই। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের সর্বকালের সেরা গৌরব। কিন্তু তার মর্যাদা আমরা ধুলোয় লুটিয়েছি। আত্দপরিচয়েও পুরনো সংকট ফিরে এসেছে। কিছুই গড়ে তুলতে পারিনি। ছায়ার সঙ্গে লড়াই করতে করতেই সময় পার হয়েছে। গায়ের ব্যথা মগজ কামড়ে ধরেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই ভালোভাবে চলেনি। মিথ্যাচারে নকল গণতন্ত্রের প্রচ্ছদটুকুও ছিন্নভিন্ন হয়েছে। তারপরেও ২০০৮-এর অবাধ ও নিরপে জাতীয় নির্বাচন কিছুটা আশা জাগায়। কিন্তু আমরা যে ঘরপোড়া গরু। আতংক তাই কাটে না। আমাদের ইতিহাস অসামান্য সব সাফল্যের ইতিহাস। সব প্রতিকূলতা ভেঙে মানুষের অধিকার জয় করে নেবার ইতিহাস। কিন্তু বাস্তবে তাদের সামান্যই আমরা জীবনে সঞ্চারিত করতে পেরেছি। বিপর্যয় এসে বিজয়ের গৌরব ছিনিয়ে নিয়েছে। অপরের করুণা ভিখেরি হয়ে থেকেই আমরা আমাদের লেজ ফুলিয়ে আস্ফালনে মেতেছি। আত্দাবমাননার গ্লানি তাতে আরও বেড়েছে। এখন তাই আমরা ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে তাকাই। সামনেই তাকাতে চাই।
===============================
আলোচনা- 'মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদীরা মানবজাতি ধবংসের ব্যবস্থা করছে by বদরুদ্দীন উমর  গল্পালোচনা- 'স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' by লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান  আলোচনা- 'টেলিভিশন কি পত্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বী'  ফিচার- ‘অতল জলের আহ্বান' by রুবাইয়াত মনসুর  ভ্রমণ- 'গৌড়ের পথে পথে' by মৃত্যুঞ্জয় রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'সেদিন বঙ্গভবনে কী ঘটেছিল  রাজনৈতিক আলোচনা- 'রাজনীতি পুরনো পথেই' by আবদুল্লাহ আল ফারুক  খবর- ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক  আলোচনা- 'বাংলাদেশে মিডিয়া ও তার ভবিষ্যৎ' by সাইফুল বারী  প্রবন্ধ- রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের 'অবরোধবাসিনী'  ফিচার- ‘হিমশীতল শহরগুলোর দিনরাত' by তামান্না মিনহাজ  গল্পালোচনা- ''সে কহে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর'  সাক্ষাৎকার- হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন  ইতিহাস- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের ফসিল 'স্যু' এর কাহিনী  খাদ্য আলোচনা- 'অপুষ্টির প্রধান কারণ দারিদ্র্য ও অজ্ঞতা by শেখ সাবিহা আলম  গল্পালোচনা- 'ডান রাস্তার বামপন্থী' by কাওসার আহমেদ  খবর- 'মারা যাবে না একটি শিশুও' -বিলগেটসপত্নী, মেলিন্ডা গেটস


কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ সনৎ কুমার সাহা
শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক


এই গল্পালোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.