‘সনস অব ইরাক’ এখন ‘সনস অব আমেরিকা’

যুদ্ধোত্তর ইরাকে আল কায়েদা দমন অভিযানে মার্কিন বাহিনীর পাশে যেসব সুন্নি মিলিশিয়া অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়েছিল দখলদার বাহিনী আদর করে তাদের নাম দিয়েছিল ‘সনস অব ইরাক’। সুন্নি মিলিশিয়ারা ওই নাম গর্বের সঙ্গে গ্রহণও করেছিল। তারা ‘সাহ্ওয়া’ (জাগ্রত) বাহিনী নামেও পরিচিত। কিন্তু মার্কিন সেনারা ইরাক ছাড়তে শুরু করায় এখন পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সনস অব ইরাক এখন ‘সনস অব আমেরিকা’ হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। প্রতিশোধপ্রবণ ইরাকিরা তাদের বিশ্বাসঘাতক ও মার্কিন বাহিনীর দালাল মনে করছে। মার্কিন বাহিনীর ছত্রচ্ছায়া সরে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে তারা।
২০০৬ ও ২০০৭ সালে যখন ইরাকে শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তুমুল আকার ধারণ করে তখন সাহ্ওয়া বাহিনী গৃহযুদ্ধ বন্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ওই সময় ইরাকভিত্তিক আল কায়েদা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ওই বাহিনী সোচ্চার হয়। ওই বাহিনীর সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা ছিল এক লাখ ১৮ হাজার। রাজধানী বাগদাদসহ ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে তারা মার্কিন বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ছড়িয়ে ছিল।
চলতি মাসে সাহ্ওয়া বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যকে গুপ্ত ঘাতকেরা মেরে ফেলেছে। এ বাহিনীর চিহ্নিত নেতা-কর্মীর বাড়িতে যখন-তখন হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, যে ইরাককে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তারা জানপ্রাণ দিয়ে লড়েছে, আজ সেই ইরাকের সরকার তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।
বাগদাদের উত্তরাঞ্চলীয় সুন্নি অধ্যুষিত সালাহউদ্দীন প্রদেশের সামারা এলাকার সাহ্ওয়া বাহিনীর কমান্ডার মজিদ হাসানের বাড়িতে গত ১৩ আগস্ট সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনি নিজে এবং তাঁর পরিবারের তিন সদস্য গুরুতর আহত হন।
মজিদ বলেন, ‘মার্কিন বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করার আগেই আমাদের ওপর যদি এভাবে হামলা হয় তাহলে তারা চলে যাওয়ার পর কী অবস্থা হবে? সন্ত্রাসীরা আমাদের বলছে, ‘তোরা হলি সনস অব আমেরিকা (আমেরিকার পুত্র) । মার্কিন বাহিনী দেশ ছাড়ার পর তোদের একটাকেও জ্যান্ত ছাড়া হবে না।’
২০০৯ সালের এপ্রিলে সাহ্ওয়া বাহিনীর ২০ শতাংশ সদস্যকে সরকার পুলিশ ও সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকিদের মধ্যে অনেককে অন্যান্য বেসামরিক ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার সনস অব ইরাক নতুন চাকরির আশায় দিন গুনছে। তবে তাদের নেতারা বলছেন, চাকরি-বাকরির চেয়ে এখন তাদের যেটি বেশি প্রয়োজন সেটি হলো নিরাপত্তা।

No comments

Powered by Blogger.