বিদায় ‘আর্জেন্টিনার জাভি’

হারিয়েই গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে। মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারটাকে পুনর্জীবন দিয়েছিলেন আলফিও বাসিলে। আর ডিয়েগো ম্যারাডোনা আবার তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। কিন্তু আসলে সেটা ছিল নিভে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো দপ করে জ্বলে ওঠা।
হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন নিজেও বুঝতে পারলেন, আলোর সময় শেষ হয়ে এসেছে। এবার সময় ‘বিদায়’ বলে দেওয়ার। হ্যাঁ, আকাশি-সাদা জার্সিকে বিদায় বলে দিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই প্লে-মেকার। অবশ্য আরও কয়েক বছর ক্লাব ফুটবলে খেলার ইচ্ছে আছে তাঁর।
১৯৯৮, ২০০২ ও ২০১০ বিশ্বকাপ খেলা মাঝমাঠের এই শিল্পী নিজেকে আরেকটা বিশ্বকাপে কল্পনা করতে পারছেন না। নতুনদের জায়গা করে দিতে সরে গেলেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দল থেকে, ‘আমার মনে হয়, সার্জিও বাতিস্তা আগামী বিশ্বকাপের জন্য দল গঠনের পরিকল্পনা করছে। আমি নিজেকে ওখানে কল্পনা করতে পারছি না। জাতীয় দলে আমার চক্রটা এখানেই শেষ হয়ে গেল।’ একটা চক্রই বটে! যে চক্রটা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯৬ সালে। ২০০২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার তথাকথিত ‘অপরাজেয় দলের’ অধিনায়কত্ব করেছেন। জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে তারকাখচিত আর্জেন্টিনার বিপর্যয়ের বড় দায় দেওয়া হয় ভেরনকে। তাতেই শেষ হতে বসেছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
নতুন কোচ হোসে পেকারম্যান মাঝমাঠে ভেরনের চেয়ে যোগ্য মনে করলেন হুয়ান রোমান রিকেলমেকে। ফলে ২০০৬ বিশ্বকাপটা দূর থেকেই দেখতে হয়েছে ভেরনকে। তত দিনে ভেরন একটু একটু করে নিজের সেরা সময়টাকে পেছনে ফেলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, ইন্টার মিলান হয়ে আবার এস্তুদিয়ান্তেসে ফিরে এসেছেন। ২০০৬ বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়ে আবার ভেরনকে ডাক দিলেন আলফিও বাসিলে। এরপর দৃশ্যপটে এলেন ম্যারাডোনা। চোটের কারণে মাঝে আবার পথ হারিয়ে ফেলা ভেরনকে জাতীয় দলে ফেরালেন অবসরপ্রেমী রিকেলমের বদলে। শুরু হল অন্তিম পর্ব। এই পর্বে ম্যারাডোনা ভেরনকে আকাশে তুললেন ‘আর্জেন্টিনার জাভি’ বলে। লিওনেল মেসির সঙ্গে ভেরনের বন্ধুত্বকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁকে মাঠে রাখতে নিজের জেদের কথা বললেন ম্যারাডোনা। কিন্তু লোকটি তো ম্যারাডোনা! কদিন পর ওই বিশ্বকাপেই তাই কী এক রহস্যময় কারণে দলের বাইরেই চলে গেলেন ভেরন। সেই যাওয়াই শেষ হয়ে গেল।
বিদায়বেলায়ও সেই রহস্যের উন্মোচন হলো না। বিদায়বেলায় শুধু বাস্তবতার কথা বলে গেলেন ভেরন, ‘আমি ফুটবল ভালোবাসি, উপভোগ করি এবং এখনো জাতীয় দলের প্রতি আমার টান আছে। কিন্তু আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। এখন আমার চেয়ে ভালো অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছে। কোচ তাদের নিয়েই দল সাজাবেন।’

No comments

Powered by Blogger.