সংঘাতের অবসান হোক -সমঝোতার বিকল্প নেই

নির্বাচনের বছর ২০১৩ সাল প্রথম প্রান্তিকেই বেশ সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। পুরো মার্চ মাস ধরেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে কয়েক দিনে আরও ৫২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ১৩০ জন মানুষের, আহতের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।
আপাতদৃষ্টিতে এসব সহিংস ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক প্রতীয়মান না হলেও নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি নিয়ে বিবদমান দুই রাজনৈতিক পক্ষের মতবিরোধ ও নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা এসবের পেছনের সুপ্ত কারণ বলে আমাদের মনে হয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে আসা ও দেশ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেলে দেশে বর্ধিত মাত্রায় যে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, তা ভেবে উদ্বেগ জাগে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন ও রাজনৈতিক বিরোধের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত অল্প সময়ে এত বেশিসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এ দেশে ঘটেনি। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কিছু বৈশিষ্ট্য বেশ উদ্বেগজনক। যেমন: ব্যাপক পরিসরে নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনসাধারণের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতিসাধন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা ও তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নেওয়া, গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং বিপরীতক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগ। সব মিলিয়ে হতাহতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে যে, দেশের পরিস্থিতিকে সংঘাত-সহিংসতাময় হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে।
রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানির ব্যাপারে এ দেশের জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ তো বটেই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন উদ্বেগ প্রকাশ করে ৬ মে এক বিবৃতি দেওয়ার পর ১০ মে ঢাকা সফরে এসেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এর আগে এ দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা কমনওয়েলথের মধ্যস্থতার উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। এবার খোদ জাতিসংঘের মহাসচিবের বিবৃতি প্রকাশ ও সহকারী মহাসচিবের সশরীরে ঢাকা চলে আসার তাৎপর্য সম্ভবত এই যে, বাংলাদেশের এবারের পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের থেকে বেশি গুরুতর। বাংলাদেশকে নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্বসম্প্রদায়। মহাসচিব বান কি মুন যেমন তাঁর বিবৃতির প্রথমেই বাংলাদেশের সব পক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, সহকারী মহাসচিব অস্কার তারানকোও তেমনি ঢাকায় এসে প্রথমেই বলেছেন, অব্যাহতভাবে যে সহিংসতা চলছে, তা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের বিবেচনায়ও এটিই এ মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার: যুক্তিহীনভাবে, অনর্থক অনেক রক্ত ইতিমধ্যে ঝরেছে, আর একটিও প্রাণহানি নয়।
কিন্তু সহিংসতা বন্ধ হতে পারে কীভাবে?
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা উভয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, দুই দলের রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি। আমরাও মনে করি, দুই পক্ষের সমঝোতা ও সংলাপই সহিংসতা বন্ধ করার প্রধান উপায়।

No comments

Powered by Blogger.