পুলিশের সদস্য নিহত -আসামি ধরার পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন করুন

গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে আসামি ধরতে গিয়ে উত্তেজিত গ্রামবাসীর হামলায় পুলিশের একজন সদস্য নিহত ও দুজন আহত হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক দিকটিই বড় হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হলো, পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগে আসামি ধরতে গিয়ে কেন গ্রামবাসীর রোষের শিকার হবে? মানুষ তো চাঁদাবাজি, মাস্তানি চায় না। সাধারণত অপরাধ দমনে সাধারণ মানুষ পুলিশ ও প্রশাসনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু গাজীপুরে কেন ব্যতিক্রম দেখা গেল?
অভিযুক্ত চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল রাজউকের একটি ঠিকাদার গ্রুপ। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। সরকারি দলের নেতা সরকারি সংস্থার কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে কীভাবে চাঁদাবাজির মামলায় জড়িয়ে পড়লেন, তাও খুঁজে দেখতে হবে। বস্তুত, অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের উচিত ছিল প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে উচিত ছিল তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা।
আর পুলিশই বা কেন রাত দেড়টায় আসামি ধরতে যায়? এর আগেও দেখা গেছে আসামি ধরার জন্য পুলিশ গভীর রাতে গ্রামে অভিযান চালায়। দিনের আলোয় কেন এসব অভিযান চালানো হয় না? এতে গ্রামবাসীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হওয়া তো স্বাভাবিক। এই সুযোগটিই নিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। তারা গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে সহজেই পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করতে পেরেছে।
তাই আসামি ধরার কৌশল ও পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। গ্রামের মানুষকে আস্থায় নিতে হবে। হঠাৎ করে ঘুমন্ত গ্রামে পুলিশি অভিযান চালানো গ্রহণযোগ্য নয়। এটা যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও বটে। বরং আগে থেকে গ্রামবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। তাহলে মানুষ আগে থেকেই জানবে যে পুলিশ কাকে, কেন ধরতে চায়।
গাজীপুরের ঘটনায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত ও উত্তেজিত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা পুলিশের সদস্য হত্যার নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.