বিক্ষোভ সর্বত্র, একদফা দাবি: ঢাকাসহ সারা দেশে রাজপথে লাখো শিক্ষার্থী-জনতা

চারদিকে মানুষ আর মানুষ। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল ঢল নেমেছিল লাখো ছাত্র-জনতার। সেখানে ছাত্র-জনতার সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত এই ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান। তিনি  বলেন, আর নয় ৯ দফা, এখন দফা একটি- প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে আজ থেকে অসহযোগের ডাক দেয়া হয়। এদিন পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখান থেকে ছাত্র-জনতার স্রোত ঠেকে চানখাঁরপুল, দোয়েল চত্বর, টিএসসি, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য পর্যন্ত। হাজার হাজার মানুষের এ সমাবেশে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঢাকার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের দেখা যায় সমাবেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে এদিন বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নরসিংদী, বরিশাল, বরগুনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, গাজীপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, পাবনা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। গতকালও চিকিৎসাধীন একজনসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদিন বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে খুবই সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরের পর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এদিন আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া হয় শহীদ মিনারের বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেবেন এ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়করা। বিকাল ৩টার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সহস্র মানুষের জমায়েত থেকে হত্যা- খুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ছিল- ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দফা এক, দাবি এক-শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘৯ দফা বাদ দে, একদফার ডাক দে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’ ইত্যাদি।

দুপুরের পর থেকে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ বিকালে ঘোষণা হয় নতুন কর্মসূচি। এ সময় বক্তব্য দেন ডিবি হেফাজত থেকে মুক্ত হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়করা। সেখান থেকে অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একদফা ঘোষণা করে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন একদফা দাবি। তা হলো- এই যে খুন-হত্যা হয়েছে এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু শেখ হাসিনা নয় সকল মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আর তাদের কাছে কী বিচার চাইবো। তারাই তো খুনি। আমাদের ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। আপনাদের আন্দোলনের কারণে আমরা ছাড় পেয়েছি। আজকেও গুলি চলেছে। এই পরিস্থিতিতে একদফা ঘোষণা করছি। শেখ হাসিনা বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। তিনি আগেই বুঝেছেন দরজা খোলা রাখার সময় হয়েছে। আমরা আসছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের একদফা হলো শেখ হাসিনার পতন এবং এই সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার করতে হবে। আমরা জেলের তালা ভেঙে আমাদের  ভাইকে আনবো। যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে এতে সকল জনতা যোগ দিন। আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মিলিত মোর্চা গঠন করবো। আমরা আমাদের দেশের রূপরেখা ঘোষণা করবো। আগামীকাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে। নাহিদ বলেন, যদি ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি হয় আমরা মেনে নেবো না। এখন ছাত্র-জনতা সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন পালন করবেন। সরকার যদি জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় এটা জনগণ মানবে না। আমরা সকল গণহত্যার বিচার করবো বাংলার মাটিতে। বাংলাদেশের জনগণ অসহযোগের নেতৃত্ব দেবে। আপনারা যদি অস্ত্র চালান তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ছাত্র-নাগরিক সবাই অসহযোগ আন্দোলন সফল করুন। অসহযোগের পাশাপাশি রাজপথের কর্মসূচি পালন করুন। আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা দেন। ছাত্র আন্দোলনের আরেক অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমরা শত শত ভাইয়ের লাশের ওপর দাঁড়িয়েছি। আমরা স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দাবি ও ডাক দিয়েছি। পুলিশ সদস্যদের ওপর আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। ক্ষোভ পোশাকটার ওপর। এই পোশাক পরে অসংখ্য গুম, খুন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী আপনারা সম্মানের অনেক উপরে রয়েছেন। আপনারা ক্যান্টনমেন্টে থাকুন। আসতে হলে পোশাক রেখে আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার বিভাজন করে রাখতে চায়। আমরা ডান-বাম বুঝি না। আমরা খুনি সরকারের পতন চাই। আমাদের যাতে বিভক্ত করার সুযোগ না পায়। সজাগ থাকবেন।

অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, খুনি সরকার থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত, বিচার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। এখানে আবু সাঈদ রয়েছেন, মুগ্ধ রয়েছেন। আপনারাই আন্দোলন সফল করুন। সমাবেশ শেষে ছাত্র-জনতা বেশকিছু সময় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর সকলে মিছিল নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। একেকটি মিছিলে কয়েক হাজার করে শিক্ষার্থী বের হচ্ছিল। তারা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখে চারপাশ। শিক্ষার্থীরা বের হয়ে অনেকে টিএসসি’র রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এর আগে মিছিল নিয়ে আসার সময় আন্দোলনকারী কয়েকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছোড়েন। এরপর শিক্ষার্থীরা মানবঢাল হয়ে বোতল হামলা ঠেকান।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতা হত্যা, নির্যাতন এবং গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে র‍্যালি ও সংহতি সমাবেশ করেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। দুপুরে র‍্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে শুরু করে শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।
এর আগে রাজধানীর সাইন্সল্যাব, মিরপুর-১০, ডিওএইচ, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, উত্তরা, বসুন্ধরা, খিলগাঁও, আফতাবনগর, শনির আখড়া, কাজলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সব কর্মসূচিতে অনেক জায়গায় জড়ো হন অভিভাবকরাও।  

এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। সেখান থেকেও সরকারের বিদায়ের দাবি তোলা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও জনতার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন। আহত হয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামে ভাঙচুর চালানো হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবনে। চট্টগ্রামের মেয়রের বাসায়ও হামলা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ অফিসসহ পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) সৌম্য চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা-বাগুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী লেনে এসি ল্যান্ডের ব্যবহৃত সরকারি ওই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চট্টগ্রামের চশমা হিলের বাসায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। তার আগে বাড়ির অভ্যন্তরে ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়াও হামলা হয়েছে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনেও। টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা মূল গেট ভেঙে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন। এ সময় হলগুলো খুলে দেয়ার জন্য বিক্ষোভ করেন তারা। পরে হল খুলে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে স্মারকলিপি দেয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে টাঙ্গাইল শহর ও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মাভাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে থানার সীমানা প্রাচীরের ভেতরে থাকা রেকার ও থানার একটি গাড়িসহ পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সিলেটে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বিকাল ৩টা থেকে মহাসড়ক দখলে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় আন্দোলনকারী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

নোয়াখালীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটা থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা শহরের মাইজদী বাজার থেকে কর্মসূচি শুরু করা হয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুলের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সবক’টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। একাত্মতা পোষণ করে স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক, আইনজীবী ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শেষে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বরগুনায় বৃষ্টিতে ভিজে সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে শহরের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরগুনা সদর রোড এলাকার প্রেস ক্লাব চত্বর প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের পাশাপাশি বিক্ষোভে অনেক অভিভাবক, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এ সময় মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে কুষ্টিয়া শহর।

বিক্ষোভ হয়েছে চাঁদপুরেও। সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের গেট থেকে সমবেত হতে থাকেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৮জন। সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের কাজীর মোড়ে সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ।

জামালপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুপুরে শহরের নতুন বাইপাস মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হয়ে মির্জা আজম চত্বরে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর-মাদারগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ।

যশোরেও বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছেন অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা। এতে দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে সড়কপথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ হয়েছে বরিশালে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সিফাত নামে পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন। দুপুর সোয়া ২টার দিকে নগরীর চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ফেনীতেও বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তবে এ নিয়ে পুলিশ পাল্টা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দুপুর দেড়টার দিকে শহরের জহিরিয়া মসজিদের সামনে থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলতে কর্তৃপক্ষতে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। দুপুর পৌনে ১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষোভ হয়েছে রংপুরেও। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন  শিক্ষক, আইনজীবী অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।

ময়মনসিংহে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ২টায় নগরীর টাউন হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে নগরীর নতুন বাজার, গাঙ্গিনাপাড়, দুর্গাবাড়ী, কাচারি সড়ক হয়ে ফের টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে বেলা ১১টা থেকে টাউন হল মোড়ে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলের জন‍্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হন।

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সমবেত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে শেষে পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নগরীতে তিনটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ছাড়া ভদ্রা পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে। এ সময় দুটি আওয়ামী লীগ ও একটি ছাত্রলীগের কার্যালয় ভাঙচুর চালায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।  
ঢাকার ধামরাইয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা  ঘোষণা করে অভিভাবকরাও অংশ নিয়েছেন এ আন্দোলনে।

ছাত্রদের গণমিছিল ও বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন শরীয়তপুরের জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের ধাওয়ায় বিক্ষোভ মিছিলটি পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় কয়েকজনকে মারধর করা হয়।

টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। শহর থে‌কে মহাসড়‌কে গ‌ড়ি‌য়ে‌ছে আন্দোলন। এখনো পর্যন্ত টাঙ্গাইল শহরে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও জেলার সখীপুর উপজেলায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এ সময় পুলিশসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলমান।

বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন জয়পুরহাটের শিক্ষার্থীরা। ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় অন্তত ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রের গায়ে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। এক ছাত্র ১৮টি বুলেট বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.