আমার অচেনা দেশ by ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

কোটা আন্দোলন নিয়ে লিখতে গিয়ে সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। খুব সুচিন্তিত লেখা হবে মনে করছি না। কারণ প্রতিদিনের পত্রিকা খুললেই আহত তরুণদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরা সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি বল প্রয়োগ এবং নির্বিচারে গুলি আর টিয়ারশেলের আঘাতে হতাহত হয়েছেন। এই আন্দোলনের অগণিত তরুণদের জীবনহানি হলেও রংপুরের আবু সাঈদের নির্ভীক ভঙ্গিতে খালি হাতে বুক পেতে দেয়ার সেই জীবন্ত প্রতীকের মধ্যে বেঁচে থাকবে সব শহীদ। এ পর্যন্ত পত্রপত্রিকার হিসাব মতে ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। গুজবে প্রকাশ এর দ্বিগুণ হয়তো হবে মৃত্যুর সংবাদ। পত্রপত্রিকায় আরও একটি ছোট খবর প্রকাশ হলেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। খবরটি হলো যে, ঢাকার পুলিশ হাসপাতালের মর্গের এবং অন্যান্য হতাহতের রেজিস্ট্রার জব্দ করা হয়েছে। এ তথ্য বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হলো যে, আরও হতাহতের তথ্য প্রকাশিত হোক তা যাতে জনসম্মুখে প্রকাশ না পায়। খবরটি অবশ্যই দুঃখজনক। এমন হওয়ার কথা নয়।

শুধু আবু সাঈদের মৃত্যুই নয় বেশির ভাগ মৃত্যুই হয়েছে গুলির আঘাতে এবং অর্ধেকের বেশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্র- যার মধ্যে কলেজ এবং স্কুলের ছাত্রও রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ছয় জন ছাত্রীও রয়েছেন। এ ধরনের এবং এসব মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

যদিও সরকার একক বিচারপতির নেতৃত্বে আবু সাঈদের মৃত্যুর (যদি আমার অনুমান সঠিক হয়) বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের হুকুম দিয়েছেন; তবে এতগুলো আন্দোলনরত ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিটির কোনো অনুসন্ধান হবে কিনা জানা যায়নি। যেমন জানা যায়নি- এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সহিংসতার অনেক বিষয়। এসব মৃত্যুর কারণও হয়তো জানা যাবে না- বুলেটে না প্যালেটে। এ আন্দোলনে বেশ কিছু সংরক্ষিত স্থানে হামলা হলো আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ করার বেশ কয়েকদিন পার হওয়ার পর। এর মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের কেন্দ্র, বিআরটিএ ভবন। যেখানে ঢাকা শহর তথা অন্যান্য জেলার যানবাহনের বিভিন্ন ডিজিটাল খতিয়ান হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। বিআরটিএ ভবনের অদূরেই সেতু ভবন; সেখানেও ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো হয়েছিল। প্রশ্ন থাকে, এসব স্থাপনা সংরক্ষিত স্থাপনা; যাকে নিরাপত্তার আলোকে ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন’ (কচও) হিসেবে লিস্ট পুলিশের হাতে থাকার কথা। এই স্থাপনাগুলোকে যেকোনো আন্দোলন অথবা নাশকতার মতো অবস্থা হলে এসব সংরক্ষিত স্থান (কেপিআই) অবশ্য নিরাপদ করার জন্য প্রতিরক্ষা করবার কথা। এসব প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার কল্পে বাড়তি বা অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করার কথা। এরই আওতায় কারাগারও অন্তর্ভুক্ত- বিশেষ করে নরসিংদীর কারাগার। যেখানে বেশ কয়েকজন কথিত জঙ্গিরাও ছিলেন।

আমি কেপিআই বা সংরক্ষিত স্থাপনাগুলোর বিষয় আগেও বলেছি। এগুলো সময় সময় পরিবর্ধন এবং পরিবর্তন হতে থাকে। সংযোজন ও বিয়োজন হতে থাকে। যত নতুন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাড়তে থাকে তত বাড়তে থাকে তালিকা। এসব তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর, জেলা পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর নিকট রক্ষিত। আমার এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো দৃশ্যত এসব স্থাপনা, বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন, ডাটা সেন্টার এবং বিআরটিএ সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য কেপিআই বর্ণিত রক্ষা ব্যবস্থা ছিল কিনা? থাকলে ঘণ্টাব্যাপী কর্মকর্তাদের মতে, কথিত দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালালো কীভাবে? রাস্তায় নয়, হতাহত হওয়ার কথা ছিল ওই সব স্থাপনার আশপাশে তেমনটি শোনা যায়নি। জানা যায়নি- আক্রমণকারীদের কতোজন হতাহত হয়েছিল? কাজেই ধরে নেয়া হয় কেপিআই (কচও) হওয়া সত্ত্বেও এবং ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (ঝঙচ) থাকা সত্ত্বেও মেট্রোরেল স্টেশনসহ সব প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণে কেন ঝঙচ মানা হয়নি? এগুলো সংরক্ষণের ঝঙচ মোতাবেক কাদের বা কার দায়িত্ব ছিল? আমি মনে করি সরকারের এ বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। দুষ্কৃতকারীদের বিষয়ে তাদের খুঁজে বের করার আগে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির হোতাদের চিহ্নিত করা উচিত এবং ভবিষ্যতের করণীয় নির্ধারণের জন্যও এ ধরনের তদন্তের প্রয়োজন। এসব স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা কেন প্রতিহত করা গেল না। অন্যতম স্থাপনা নরসিংদীর জেলা কারাগার আক্রমণ এবং প্রায় ৯শ’ কয়েদি যার মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক কথিত জঙ্গি- যেখানে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বেশ কিছু কয়েদি ছিল। কারাগারও নিশ্চয় সংরক্ষিত স্থাপনা বা কেপিআই (কচও)। এমন স্থাপনার সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে এটা রক্ষা কেন করা গেল না? এই আক্রমণের সময় কতোজন হতাহত হয়েছিল জানা যায়নি। প্রশ্ন থাকে কীভাবে (কতোগুলো) রাইফেল বা আগ্নেয়াস্ত্র লুট হলো। দুষ্কৃতকারী শনাক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে এসব স্থাপনা অরক্ষিত কেন ছিল এবং কার ব্যর্থতা তা খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

মাত্র কয়েকদিন আগে চ্যানেল একাত্তরের একটা এক্সক্লুসিভ ভিডিও দেখলাম- যেখানে দৃশ্যত কথিত টোকাইরা অনায়াসে সেতু ভবনের খোলা গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে প্রথমে গাড়িতে পরে হয়তো মেইন অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। অথচ সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাই দেখা যায়নি। ভবনটি মহাখালি ফ্লাইওভার সংলগ্ন। ওই এলাকায় ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। দুষ্কৃতকারীরা কীভাবে নির্বিঘ্নে আগুন লাগিয়ে চলে গেল? এগুলো কিসের আলামত? প্রশ্ন হলো যে এরা কারা? ভবনের দায়িত্বে কারা ছিল এবং কেন সুরক্ষিত ছিল না? এর উত্তর কে দেবে?

এ লেখার মধ্যেই কয়েকটি প্রিন্ট মিডিয়ায় যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে ২১৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে- যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ১৪৭ জনের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তার মতে আরও বাড়তে পারে। এ ধরনের মৃত্যুর কথা এমন একটি দেশে, যে দেশ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হয়েছে। গণতান্ত্রিক বলে দাবিদার বাংলাদেশে অতীতে এমন মৃত্যুর খবর শোনা যায়নি। আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে, কতোজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মনে হয় কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা দেরিতে হলেও সঠিক তথ্য বের করে ফেলবে।

যাই হোক, কতোজনের মৃত্যু হয়েছে সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হলো একটি জীবনেরও এভাবে অবসান গ্রহণযোগ্য ও কাম্য নয়। যেসব স্থাপনা নষ্ট হয়েছে যেগুলো আবার নতুনভাবে তৈরি করা যাবে তবে পৃথিবীর সমস্ত অর্থ দিয়ে আবু সাঈদ সহ যে দুই শতের বেশি, যার প্রায় ৭৫ ভাগ ছাত্র ও যুবক, তাদের কী আমরা ফিরে পাবো? এভাবে এত প্রাণ শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়া স্মরণকালের ইতিহাসে পাওয়া যাবে না। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা হয়তো আইনের ফাঁকফোকর থেকে ত্রাণ পাবেন কিন্তু কোনোদিন কি বিবেকের অবক্ষয়ে জ্বলবেন না? ইতিহাস তা বলে না। ঝযড়ড়ঃ ঃড় করষষ? কেন? আমরা কি যুদ্ধে রয়েছি? পুলিশের হাতে স্বয়ংক্রিয় ৭.৬২ রাইফেল যার একটি বুলেট মানে নির্ঘাত মৃত্যু। পুলিশের হাতে এ অস্ত্র দেয়া হয় কোনো ইমার্জেন্সি মোকাবিলায়। প্রশ্ন কেন এভাবে পুলিশের অ্যাকশনে যেতে হবে। সে দৃশ্যগুলো যখন দেখেছি তখন আমার মনে হলো আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোনো ছায়াছবির দৃশ্য দেখছি। তবে প্রতিপক্ষ- ছাত্র-জনতার হাতের অস্ত্র ছিল ইটের টুকরো আর লাঠি, খুঁজছিলাম কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র- পাইনি অবশ্য। সরকার সমর্থিত ছাত্রদের কাছে দেখেছি। প্রশ্ন থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন এমন আক্রমণাত্মক অবস্থানে গেল? এর জবাব কী শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেবে- না তাদের নিয়ন্ত্রকরা দেবেন? কেন আমাদের সাধারণ পুলিশের হাতে এমন স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র? আমরা এই পরিবর্তন দেখেছি তথাকথিত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর পর। সাধারণত নগর পুলিশের কাছে যে ধরনের সরঞ্জাম থাকে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জলকামান সহ রঙিন পানির কামান, বড়জোর ছররা বন্দুক বা শটগান থাকার কথা। যদিও রয়েছে সাউন্ড গ্রেনেড এবং কাঁদানে গ্যাস- এগুলো অবশ্যই দাঙ্গা দমানোর হাতিয়ার কিন্তু আমরা যা দেখলাম তাহলো একতরফা যুদ্ধ। স্বাধীন দেশে এমন কিছু দেখবো ভাবিনি।

যুদ্ধের ময়দানেও যুদ্ধ করার কতোগুলো নিয়মনীতি থাকে; যেখানে যুদ্ধাহত অথবা আহত প্রতিপক্ষ সৈনিককে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হয়; কিন্তু এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহতকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। এটা শুধু অমানবিকই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। এসব ধারণকৃত দৃশ্য বহির্বিশ্বে প্রচারিত হয়েছে। আমি জীবনের এতগুলো বছরে কোনো দেশের সাধারণ মানুষের আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড বা অন্য অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখিনি। যা বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে দেখলাম। আমি হতবাক।

এ সময়ে পৃথিবীর দুটি দেশে বেসামরিক জনগণের আন্দোলনে পুলিশের তৎপরতা দেখেছি। এর একটি আফ্রিকার দেশ কেনিয়া অপরটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা। কেনিয়াতে শাসক রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটোর বিরুদ্ধে অব্যাহত আন্দোলনে পুলিশ- জনতার সংঘর্ষ চলেছে। পুলিশ টিয়ার গ্যাস আর জলকামান ব্যবহার করেছে- কোথাও ৭.৬২ রাইফেল যত্রতত্র ব্যবহার করেনি। অকাতরে মানুষ মরেনি, মরেনি কোনো ছাত্র বা ছাত্রী। তথাপি একজনের মৃত্যু হয়েছে কথিত দুর্বৃত্ত পুলিশের ক্যানেস্তারে এবং একজন সাংবাদিক গান শটে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এই আক্রমণকে ইচ্ছাকৃত বলা হয়েছে। সাংবাদিক ইউনিয়ন সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের ‘স্বাধীন পুলিশ ওভারসাইট অথরিটির’ কাছে দ্রুত তদন্ত চেয়েছে; যাতে ওই পুলিশকে দোষী সাব্যস্ত করে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।

আর একটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাত এবং সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে আহত হলেও ব্যাপক নিহত হওয়ার অভিযোগ না উঠলেও হানাহানিতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বলা হয়ে থাকে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে। তথাপি আমেরিকান অর্গানাইজেশন উদ্বিগ্ন। যাই হোক উপরের দু’টি দেশ যেখানে বেসামরিক মূলত রাজনৈতিক বিষয়ে সংঘর্ষ বিদ্যমান সেখানে এমন মৃত্যু ও আহতের মিছিল দেখা যায়নি। আগেও পত্রপত্রিকায় মৃত্যুর যে সংখ্যা পাওয়া গেল তার প্রায় ৭০ শতাংশ তরুণ ছাত্রছাত্রী এবং কয়েকজন স্কুলের এবং কোলের শিশুও রয়েছে। এদের সিংহভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেলের গুলিতে। রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এ ধরনের মৃত্যু গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বের ইতিহাসে এমন মৃত্যুর উদাহরণ ১৯৮৯ সালে চীনের তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে ছাত্র ও জনসাধারণের রিফর্ম-এর দাবির বিরুদ্ধে প্রায় দশ হাজার ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে বলে  কথিত। সেখানে আন্দোলন ও অকুতোভয় মৃত্যুর প্রতীক হয়ে অমর শহীদ হয়েছিলেন নাম না জানা এক তরুণ; যিনি দু’হাত প্রসারিত করে সেনাবাহিনীর ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন- তিনি ট্যাংক ম্যান নামে বিশ্বে পরিচিত। তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সের ছাত্র ছিলেন। বিশ্বের বহু জায়গায় এই ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিছুটা হলেও রংপুরের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ এমনই প্রতীক হয়ে পড়েছেন বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে প্রায় ২১৬ জনের মৃত্যু চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে যা ঘটে গেল- এত মৃত্যু, এত রক্ত, যেভাবেই চিত্রায়িত করুক না কেন এ হত্যাকাণ্ডে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মৃত্যু নিয়ে সুবিধাবাদীরা যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

উপসংহারে পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, সরকার বা সমাজের এক শ্রেণির মানুষ যারা ক্ষমতা ভোগ করছেন, তারা এ হত্যাকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব কতোখানি নেবেন? আর যারা ‘ট্রিগার চাপার’ সময় একবারও পরিণতির কথা ভাবেননি। হয়তো বলবেন, এটা ছিল তাদের দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্ব কি নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর ট্রিগারে বিবেকহীনভাবে চাপ দেয়া? সংরক্ষিত স্থাপনাগুলো রক্ষার দায়িত্ব কি ছিল না? এত মৃত্যু, এত লাশ যাদের কারণে হয়েছে/পড়েছে- তারা কী কোনো না কোনো সময় বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হবেন না? নিজের সন্তানদের দিকে চোখ তুলে কীভাবে তাকাবেন। একবারও মনে হবে না তাদের এক সদস্যের আকুতি, ‘স্যার একটা মানুষ মারতে ক’টা বুলেট লাগে’ তখন ওই সদস্যের নিজের সন্তানের বুক ঝাঁঝরা হয়েছিল তারই কোনো সহকর্মীর গুলিতে। এর উত্তর খুঁজছি।

এখন হাজার হাজার তরুণ জেল হাজতে আর কয়েক হাজার হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তারপরেও অভিযান থামছে না। একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হওয়ার পর অধিকারের দাবিতে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং অভিভাবকদের ধৈর্য ধরার আকুতি জানাচ্ছি।

লেখক: সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.